অপ্রকাশ্য ভালোবাসা - ঘাসফড়িং


বিকালের দিকে নিশাদ হৃদয়ের ফোন পেয়ে বের হয়। নিশাদ ভাবতে থাকে। কি হবে এই শারীরিক মিলন দিয়ে। ভালবাসাহীন এরকম মিলনে নিশাদ আজ অতিষ্ঠ। নিশাদ গ্রামের একজন ছেলে। তার নানুবাড়িও তাদের একই গ্রামে। নিশাদের মামাতো ভাই হৃদয়।

বড়লোক বাবা মায়ের ছেলে হৃদয়।আর ছোট একজন ভাই তার। এই নিয়েই তাদের পরিবার হৃদয় দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। বলিষ্ঠ বুক। শক্ত পেশী। বড় বড় দুচোখ। কত মেয়ে যে তার পিছনে লাইন মারা নিয়ে ব্যস্ত তার ইয়ত্তা নেই। আর নিশাদ। তাকে কেন বাদ দেওয়া হবে। সেও কি কম। নিশাদের চোখগুলো টানাটানা। নাক, ঠোট , সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় যেন কোন শিল্পীর আঁকা এক ছবি। একজন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে।বাবা গ্রামের স্কুলের টিচার। মা গৃহিনী।নিশাদ তাদের বাবা মায়ের খুব আদরের ছেলে।আর তার বড় কোন ভাই নেই। বোন ছিল তাদের বিয়ে হয়ে গেছে।

২.

নিশাদ ছোট বেলা থেকেই ছেলেদের প্রতি দুর্বল ছিল। সুন্দর স্মার্ট কোন ছেলে দেখলেই তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত।
কিন্তু হৃদয়ের এই অভ্যাসটা নেই।
গ্রামের ছেলেদের সমকামিতা সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই বললেই চলে।
কিন্তু তারপরও গ্রামের অধিকাংশ ছেলে নিশাদের দিকে কেমন একটা দৃষ্টি নিয়ে যেন তাকায়।
কলেজের ছেলেগুলোও নিশাদকে কেমন একটা আড়চোখে দেখে।
কিন্তু নিশাদের মনে কার জন্য স্থান আছে সেটা কি আদৌ কেউ জানে?

নিশাদ আর হৃদয় একই কলেজে একই ইয়ারে পড়ে।সারাদিন দুজন খুনসুটি লেগেই থাকে।
নিশাদ মন প্রাণ দিয়ে শুধু হৃদয়কেই ভালবাসে।
কিন্তু হৃদয় তো মেয়েদের পিছনেই ছুটে। তার কাছে তো নিশাদ শুধু একজন ভালো বন্ধু।আর কিছুইনা।
কিন্তু নিশাদের ভিতরে হৃদয়কে নিয়ে যতটা ফিল সেরকম কি হৃদয়ের মধ্যেও হচ্ছে।
নিশাদ তার মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথাটা হৃদয়কে বলতে পারেনা। ভয়ে তার বুক থরথর করে কাপে।
যদি এটা জানার পর থেকে হৃদয় নিশাদকে ঘৃনা করতে শুরু করে। ভেঙে যায় তাদের এই বন্ধুত্ব।সেই ভয়ে নিশাদ তার ভালবাসার কথাটা ভেতরেই চেপে যায়।

কিন্তু প্রায়শই হৃদয় নিশাদকে কেমন জানি সিরিয়াস ভাব নিয়ে কিছু বলতে যায়।
কিন্তু কিছু বলতে গিয়েও দুজন আটকে যায় ।
হৃদয়ও কিছু বলতে গেলে কথার মধ্যে কোথায় যেনো ভাটা পড়ে যায়।
তাহলে হৃদয়ের মনেও কি নিশাদের জন্য ভালবাসা রয়েছে।

কিছুদিন পর সেটা প্রকাশ পেয়ে যায় । হৃদয় যদিও মেয়েদের পিছনে ছুটতো। এটা বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে।কিন্তু প্রকৃত ভালবাসাটা নিশাদের জন্যই জমা ছিল।
নিশাদ আর হৃদয়ের অজান্তেই তাদের ভালবাসা হয়ে যায়।
দৈহিক মিলন ছাড়া নাকি ভালবাসা পূর্ণতা পায়না।
সেদিন রাতে নিশাদ হৃদয়ের সাথে একটি কনসার্ট শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভয় পেয়ে হৃদয়ের বাড়িতেই থেকে যায় ।
সেদিন রাতে কেউই ছিলনা হৃদয়ের বাড়িতে।

নিশাদ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে।
সেদিনই হৃদয় তার মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা সত্যটা প্রকাশ করে।
দিনের পর দিন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা ভালবাসাটা নিশাদের বুকে সপে দেয়।
তাদের নিজের অজান্তেই পরস্পর একে অপরের সাথে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায় ।

জোছনা ভরা চাদেঁর আবছা আলো জানালার ফাক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করছিল। হৃদয়ের চোখের কোনে কয়েকফোটা জল জমেছিল সেদিন। যা নিশাদের ভালবাসার প্রমাণস্বরূপ ছিল।

৩.

সেদিনের পর থেকে অনেকবারই হৃদয়র সাথে নিশাদের সেক্স হয়েছে।
সেটা আত্মতৃপ্তির জন্যই হউক বা দেহতৃপ্তির জন্য।
আজও সেই একই উযর বাধিয়েছে হৃদয়।
কিন্তু নিশাদের এসব এখন আর কেন জানি ভাল লাগেনা।
আর হৃদয়ের প্রতি নিশাদের ভালবাসাও কেমন জানি লোপ পেয়ে যাচ্ছে।নিশাদ এসব বুঝতে পারেনা।এমন কেন হচ্ছে।
কিন্তু সে তো হৃদয়কে মন থেকে চাইতো।
ভালবাসতো হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা দিয়েই।
কিন্তু আজ কেন এরকম।
এসব ভাবতে ভাবতে নিশাদ হৃদয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠল।
কেউ নেই।

নিশাদ হৃদয়কে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকে। কেউ নেই।
হৃদয়ের বাবা প্রবাসী।
তার মা আর ছোট ভাইও নেই ঘরে। হৃদয়ও নেই।
তাহলে নিশাদকেই বা ফোন করে আসতে বলল কেন? এসব ভাবছিল নিশাদ।
আর পিছন থেকে হৃদয় নিশাদকে ভৌ করে ভয় দেখিয়ে নিশাদকে কাবু করে ফেলে।
নিশাদ ভয়ে লাফিয়ে উঠল।
পিছন ফিরে দেখে হৃদয় হাসছে।

নিশাদ: এই তুই জানিস আমি প্রচণ্ড ভিতু। তারপরও তুই আমাকে এত ভয় দেখাস কেন?
হৃদয় : তোকে ভয় দেখিয়ে আমি খুব মজা পাইরে।
নিশাদ: আচ্ছা হয়েছে হয়েছে।
কেন ডাকলি বল।
হৃদয়: আজ আম্মু বাড়িতে নেই নানুবাড়িতে গেছে। তোকে বলে গেছে আমার সাথে থাকার জন্য ।
নিশাদ: এ আর নতুন কি।
হৃদয় : মানে?
নিশাদ: না না। কিছুনা।

৪.

নিশাদ এখন হৃদয়ের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ রাখেনা।
হৃদয়ও নিশাদের তেমন খুজ নেয়না।
কিছুদিন পর হৃদয়ের মা শহরে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।
হৃদয় ফোন করে নিশাদকে তা জানায়।

হৃদয় : হ্যালো নিশাদ।
নিশাদ: হ্যাঁ বল। শুনছি।
হৃদয়: নিশাদ মা বলছে আমাদের নিয়ে নাকি শহরে চলে যাবে।
নিশাদ: এতো খুব ভাল কথা।
চলে যা।শহরে অনেক মেয়েকেই পটাতে পারবি।আর শহরেই তোর ভালো লাগবে।
হৃদয় : নারে। আমার কেন জানি ভাল লাগছেনা।
আমি যেতে চাইনা।
নিশাদ: কিন্তু কেন? কার জন্য ?
কেউ আছি নাকি?
হৃদয় : না তেমন কে থাকতে পারে। তুই তো আমার সবকিছুই জানিস।

আমি বুঝতে পারছিনা। কোথায় যেন কি একটা হারিয়ে যাচ্ছে ।
কি যেন একটা ফেলে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ।
নিশাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
আরে তোর মুখে এমন কথা তো কখনো শুনিনি। এই প্রথম শুনলাম।
এগুলো তো সত্যিকারের প্রেমিকদের মুখেই শুনি। আজ তোর মুখে শুনতেছি।
এমন কার প্রেমে পড়লি? যার জন্যে ভিতরে এত দুঃখ।
হৃদয় : আমি তো তোকেই মন থেকে ভালবাসি নিশাদ।
আমার ভালবাসাটাই আমি হারিয়ে ফেলছি। আমি যাবনা ।

আমি তোকে ছেড়ে সত্যিই থাকতে পারবনা।
হৃদয়ের গলাটা ভেঙে আসছিল। তার কন্ঠে উচ্চারিত ধ্বনিই বলে দিচ্ছিল হৃদয়ের ভাবাবেগের মর্মটা।
নিশাদ: হৃদয় এখন ফোনটা রাখি।
বলেই নিশাদ ফোনটা রেখে দেয়।
নিশাদের দুচোখ জলে ভরে উঠল।
সে এটাও বুঝতে পারছেনা এমন কেন হচ্ছে।
হৃদয়কে একসময় নিশাদ খুব ভালবাসতো হৃদয়কে ছাড়া নিশাদ নিজেকে অসম্পূর্ণ ভাবত।
কিন্তু একসময় হৃদয়ের প্রতি নিশাদের ভালবাসা কমতে শুরু করে।
কিন্তু আজ হৃদয়ের চলে যাবার কথা শুনে নিশাদের এরকম লাগছে কেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।
হৃদয়ের জন্য নিশাদের বুক হাহাকার আর শূন্যতায় ভরে উঠছে।

কান্নাগুলো বুক ফেটে হু হু করে বেরোতে চাইছে।
ভালবাসার একপক্ষ নাকি কোন সময় কার প্রেমে পড়,কখন ভালবাসা বৃদ্ধি পায় তা নাকি সে নিজেই জানেনা। আর সেই পক্ষের মানুষটাই হলো নিশাদ।
হৃদয়ের প্রতি নিশাদের ভালবাসাটা প্রকাশ পাওয়াতে নিশাদ এবার সত্যিই বুঝতে পারলো। তার হৃদয় নিশাদের মনের মধ্যে কতটা জায়গা জুড়ে আছে।
তাহলে কি হৃদয়ের প্রতি নিশাদের ভালবাসা অটুটই ছিল। যা নিশাদের অজান্তে।

৫.

নিশাদ আর একমুহূর্তও দেরী না করে হৃদয়ের বাড়ির দিকে চলল।
ততক্ষনে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে ।
নিশাদের গ্রামের পাশ দিয়ে গোমতী নদী বয়ে গেছে। নদীর স্রোতের বেগ খুবই জোরালো।
কিন্তু আজ নিশাদ এই নদীর স্রোতের চেয়েও আরো দ্রুত গতিতে হৃদয়ের বাড়ির দিকে ছুটছে।
আর দেরি করা যাবেনা। বড্ড দেরি করে ফেলেছি।
বুকটা কেমন অশান্ত হয়ে আছে। ঝর বয়ে যাচ্ছে । যেই ঝর হৃদয়ের বুকের সংস্পর্শেই বন্ধ হবে।

কিছুদূর যেতেই দূরে একজনের ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে ।
আকাশে ধবধবে জোছনা ভরা চাঁদটা অনবরত তার জোছনা দিয়েই যাচ্ছে ।
জোছনার আবছা আলোয় নিশাদ বুঝতে পারে এটা হৃদয় ।
নিশাদ: হৃদয় । কোথায় যাচ্ছিস?
হৃদয় : তোর সাথে কথা আছে।
নিশাদ: আমি জানি কি বলবি।
হৃদয় আমি তোকে খুব ভালবাসি। তোকে ছাড়া আমি সত্যিই বাচবনা।
আমার বুঝতে দেরি হয়ে গিয়েছিল।
হৃদয় নিশাদের মুখে চেপে ধরল।
হৃদয় : একি বলছিস। তুই আমাকে সবসময়ই ভালবাসতি। আমি তোর ভালবাসাটা উপলব্ধি করতে পারিনি।
তোর মতো একজন মানুষ আমার জীবনে যে স্বয়ং স্রষ্টার দান।
নিশাদ হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে।
হৃদয় : এই। বোকার মতো কাদছিস কেন?
নিশাদ: তুই আর কারো হবিনা তো।
কোন মেয়ের পিছনে আর কখনো লাইনও মারতে পারবিনা।

হৃদয়: আমি তো তোরই। এই দেখ আমি কান ধরছি। আর কখনোই কোন মেয়ের পিছনে লাইন মারবনা।
নিশাদ হৃদয়কে আরো কাছে টেনে আনে।
নদীর পানিতে চাঁদের আলো পড়েছে।চিকচিক করছিল নদীর পানি।
ঝিরিঝিরি মৃদু হাওয়া কানে কানে ভালবাসার ছন্দ শুনিয়ে যায় ।
কোলাহল মুক্ত অপরূপ সেই মায়াময় পরিবেশ সাক্ষী হয়ে থাকল এক দুষ্টু মিষ্টি ভালবাসার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?