প্রেম অথবা পিছুটান - সজল আহসান

১.
নিলয়কে আমি অনেকবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি আমার একটা অতীত আছে। যে অতীতটা আমি উপেক্ষা করতে পারিনা, ক্ষণে ক্ষণে সে অতীত আমার বর্তমানের সম্মুখে দাড়িয়ে আমাকে পিছনে তাকাতে বাধ্য করে। কিন্তু নিলয় অতি নাছোড়বান্দা, সে আমার অতীতকে জানতে চায় না, সে শুধু আমাকে আপন করে তার বুকে আগলে রাখতে চায় নিবিড় বন্ধনে। আমি তাকে বলি, আমার সাথে তোমাকেও আমার অতীতের মুখোমুখি হতে হবে তাহলে। সে নিঃসংকোচে হাস্য বাক্যে আমার কথার আলোকে আমাকে সাধুবাদ জানায়। আমার নিত্যদিনের কাজকর্মের খরব নেয়া নিলয়ের যেন একটা রুটিনে পরিণত হয়ে গেছে। আমি কখন কোথায় যাচ্ছি, কি খাচ্ছি, কি করছি এসবের ভেতরে না ঢুকলে তার নিদ্রায় যেন গোলযোগের উপক্রম বাঁধে।




আমিও দিন দিন তার প্রতি আমার আবেগের সবগুলো জানালা খুলে তাকে ভাবতে শুরু করেছি অনুরাগের অনুভব দিয়ে। আমার দিবানিশি ভাবনায় স্বপ্নে আমার অতীতের জায়গায় ইদানিং অজান্তেই তার উপস্থিতি টের পাই। তার জন্যই হয়তো আমি আস্তে আস্তে বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অতীত নামের কালো অধ্যায় থেকে।



নিলয়ের সাথে আমার প্রথম আলাপ ফেইসবুকেই হয়। সে ঢাকায় থাকে । আর আমি আকাশ। বগুড়া শহর আমার স্থায়ী ঠিকানা।

নিলয়ের সাথে আমার একমাস চ্যাটিং হবার পর পরই সে আমাকে সরাসরি প্রোপোজ করে বসে। সমপ্রেমী ভার্চুয়াল জগতে এটাই ছিল আমাকে করা করো প্রথম প্রেম প্রস্তাব। আমার আইডির ইনবক্সে ওর লেখা I Love You বাক্যটা দেখে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিলাম। কি লিখব, এর প্রতিত্তরটাই বা কি দেয়া উচিত তা আমার মাথায় রীতিমত জট পাকিয়ে আমাকে হতবিহ্বলে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল খানিকক্ষণ।



নিলয়কে সেদিন কিছু বলতে পারিনি শুধুমাত্র শুভরাত্রি জানিয়ে নেট থেকে বেড়িয়ে এসেছি। এরপর দুদিন নেট থেকে বিরত ছিলাম পাছে আমার অতীতের মাঝে সে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমার অতীতটাকে মুছে দিয়ে আমার মনে জায়গা করে নেয় এই কারনে। দুইদিন পর আইডিতে গিয়ে নিলয়ের লম্বা মেসেজ দেখে চমকিত হলাম। নিলয় লিখেছিল, “আকাশ কাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। ঠিক দেখিনি, স্বপ্নে তোমাকে অনুভব করেছি। আমি তো তোমার ফেসটাই এখনো দেখিনি। তাই স্বপ্নেও হয়তো তুমি আবছায়া হয়েই এসেছিলে আমার কাছে।”

নিলয়ের মেসেজটা আমার হৃদয়কে যেন নীরবে স্পর্শ করে গেল। একজন মানুষ কতটা ভালবাসলে একটা মানুষকে না দেখেই তাকে স্বপ্নে অনুভব করতে পারে তা বুঝতে খুব লম্বা সময় নিলাম না আমি। মেসেজের রিপ্লে দেয়ার কথাগুলো মাথা গুছাতে গুছাতেই নিলয়ের মেসেজ পেলাম। তোমার কন্ট্রাক নাম্বারটা পেতে পারি?



আমিও সময়ের বিলম্ব না করে আমার নাম্বার ওকে মেসেজ করে দিলাম। নাম্বার বিনিময়ের পর থেকেই শুরু হল আমাদের ফোনালাপ। দিনে তিন থেকে চারবার কখনো এর অধিক বারও খোশ গল্পে এগিয়ে যেত আমাদের সময়।

সাথে ছবি আদান প্রদানও বাদ পড়ল না। আমার ভেতর নিলয়ের অনুপ্রবেশ আমাকে দিন দিন নতুন জীবনের নতুন এক স্বপ্নে দোলাতে শুরু করল। ওকে পেয়ে আমি অকূলে কূল পেলাম, বুকে জমাট বাঁধা মৃতপ্রায় আশাগুলো প্রেমের জোয়ার পেয়ে সতেজ রুপ পেতে লাগল। প্রতিনিয়ত ফোনাআপ, ফেইসবুক চ্যাটিং এসবই যেন আমাদের দুজনের অশারীরী অন্তরঙ্গ প্রেমের সঙ্গী এবং সাক্ষী হয়ে আমাদের এগুনোর পথে স্তম্ভের মত পাশে দাড়িয়েছে। তবে এতেও যেন দুজনের পরিতুষ্ট নেই। কারণ পাঁচ মাস চলমান মেয়াদী সম্পর্কে এখনো কেউ কাউকে সামনাসামনি দেখিনি। চোখে আমার তৃষ্ণা বলে বলে দুজনই দুজনের দর্শন পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলাম।



এরপর একদিন, রাত ১১.৪০ মিনিটে একটা অজানা নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে ফোন এল। আমি কৌতুহলী মনে ধরব ধরব করেই কলটা কেটে গেল। পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার ঐ নাম্বার থেকে ফোন আসার পর আমি তুলে সালাম দিলাম। ওপাশ থেকে একজন মহিলা সালামের জবাব দিয়ে বললেন,

: তুমি কি আকাশ বলছো?

: জি বলছি। আপনাকে তো চিনতে পারলাম না?

: আমি নিলয়ের মা।

ওনার পরিচয় শুনে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কারণ নিলয়ের কাছে শুনেছি ওর মা ভীষণ রাগী মানুষ। তাছাড়া আমাদের দুজনের আলাপনের সময় যখন ওনি নিলয়ের রুমে ঢুকে পড়তেন তখন নিলয় পরে কথা বলব, বলে চট করে কলটা কেটে দিত। এই প্রথমবার তার সাথে কথা বলছি, তাই একটু ভয় কাজ করছে মনে। আমাকে চুপচাপ বুঝে ওনি গম্ভীর স্বরে বললেন,

: আকাশ, নিলয় কি তোমার বাসায়?

: না তো আন্টি, কেন কি হয়েছে?

: নিলয় আমার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। ওর ফোনটাও আমি কেড়ে নিয়েছি। ওর কললিস্টে সবশেষ তোমার সাথেই কথা বলতে দেখলাম।

: কই আন্টি সেতো এখানে আসেনি। কখন বেড়িয়ে গেছে?

: রাত আটটার পর। তুমি ঢাকার কই থাক?

: আমি ঢাকায় থাকিনা আন্টি ,বগুড়ায় থাকি।

: বগুড়ায়! কি বল, নিলয় যে আমাকে একদিন বলেছিল- তোমরা একসঙ্গে পড়, তুমি ঢাকায় থাক।

: না তো আন্টি।

: ঠিক আছে, নিলয় তোমার কাছে গেলে আমাকে জানাবে।

:আচ্ছা আন্টি।

হায়! নিলয়ের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার খবরটা আমার মনে দুঃচিন্তা চাপিয়ে আমাকে পুরোপুরি ঘাবড়ে দিয়ে আমার নিদ্রাকে বিলীন করে দিল।

পরদিন, সকাল ১০টার দিকে নিলয়ের নাম্বার থেকে ফোন এল। স্ক্রিনে ওর নামটা দেখে আমি উৎফুল্ল হয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম। ইচ্ছাপূরণের সাপেক্ষে নিলয়ের কন্ঠস্বর শোনার পর উৎসুক মনটার যেন অস্থির যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলল। নিলয় তখন তার নানুর বাসায় অবস্থানরত। ওর মা কোন মাধ্যমে ওর খবর পেয়ে সকালেই সেখানে ছুটে গেছেন।



নিলয়ের কাছ থেকে এসবের আগাগোড়া শোনার পর রাগ দেখিয়ে ওকে একটা লম্বা ঝাড়ি মারলাম। আমার ঝাড়ি শুনে নিলয় অট্টহাসি দিয়ে মোবাইলে একটা চুমা দিয়ে আমাকে অকপটে আই লাভ ইউ বলল। সঙ্গে আমিও জানালাম এর সোজা উত্তর। আর সেসময়ে ঠিক করলাম আমাদের সাক্ষাতের দিন তারিখ।

হাতে সাতদিন বাকী, এর মধ্যে বাড়িতে যা হোক একটা কিছু বুঝিয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য তাদের সম্মতি নিলাম। অবশেষে চলে এল কাঙ্খিত দিন। দুদিন থাকার জন্য কয়েকটা টিশার্ট আর পান্ট ব্যাগে নিয়ে সকাল ৮টায় ট্রেনে চড়ে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। ট্রেন কু ঝিকঝিক কু ঝিকঝিক শব্দে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার মনেও যেন নানা জল্পনা কল্পনা একত্রিত হয়ে মনের মাঝে হরেক রঙের আল্পনা এঁকে কখনো সু গাইছে কখনো কু ডাকছে।



মাঝে মাঝে ভয় লাগছে, আবার মাঝে মাঝে নিলয়ের মুখায়বটা ভেবে অসীম ভাললাগায় ঘনীভূত হয়ে সিক্ত হচ্ছি ভেতরে ভেতরে। চলতে চলতে দুপুর ৩টায় ট্রেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌছাল।

আমি ট্রেন থেকে নেমে ঢাকার মাটিতে পা দিলাম। যদিও এবার সহ তৃতীয় বার ঢাকায় আসা তবুও ঢাকাকে যেন সবসময় অচেনাই মনে হয়। পরে কাছের একটা ফুলের দোকান থেকে নিলয়ের পছন্দের কয়েকটা সাদা গোলাপ নিলাম আর তার মাঝখানে একটা লাল গোলাপ রেখে নিলয়ের দেয়া ঠিকানা মত একটা পার্কে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্যাক্সিতে উঠলাম। ট্যাক্সি পার্কের সামনে নামিয়ে দেয়ার পর আমি পার্কে প্রবেশ করে একটা সিটে বসে পড়লাম। পার্কের পরিবেশটা খুবই নিরিবিলি আর মনোরম।



পার্কটার চারপাশ একপলকে দেখে নিয়ে নিলয়কে ফোন দিলাম। কিন্তু ওর ফোন বন্ধু দেখে বুকের ভেতরটা আচমকা মোচড় দিয়ে উঠল। কেমন যেন একটা অচেনা ভয় অনুভূতিকে তাড়া করতে লাগল। পরবর্তীতে আরো কয়েকবার ট্রাই করে প্রতিবারেই বন্ধ পেলাম। নিলয় আসা না আসার প্রশ্ন মনে উদ্ভূত হতেই হাতপা সহ আপাদমস্তক শীতল হবার জোগাড় আমার। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে পাশ ফিরে তাকিয়ে একজনকে দেখে আনন্দে বিস্মিত হলাম। এই তো আমার নিলয় যার জন্য আমার এতদূর ছুটে আসা। নিলয়ের হাতটা একবার ছুঁয়ে বললাম…

: তুমি ….

: জি নিলয়

: তোমার ফোন বন্ধ কেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি?

: আমি পার্কেই ছিলাম, এতক্ষণ তুমি কি কি করছিলে সব আড়াল থেকে দেখেছি।

: ও বুঝেছি আড়াল থেকে আমার চেহারা দেখছিলে তাইনা? আমি দেখতে খারাপ হলে আর সামনে আসতেনা।

: এভাবে বলছো কেন বাবু, আমি তো তোমাকে না দেখার আগেই ভালবেসেছি।

: হুম, তা ঠিক বলেছো।

: মুখ শুকনা লাগছে তোমার, নিশ্চয় কিছু খাও নি।

: হুম

: প্রায় ৪টা বাজতে চলেছে। চল আগে কিছু খেয়ে আসি।

পার্ক প্রস্থান করে খুদা নিবারনের জন্য নিলয় আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে গেল। সেখানে কিছু খেয়ে, বের হয়ে নিলয়কে বললাম,

: কোথায় যাব এখন?

: তোমাকে নিয়ে ঘুরব।

: কিন্তু রাতেও ঘুরবে নাকি?

: চিন্তা করার কিছু নেই, আমি আগে থেকেই একটা আবাসিক হোটেলে একটা রুম ৪৮ ঘন্টার জন্য বুকিং দিয়ে রেখেছি।

: তাই! আচ্ছা আন্টিকে কিভাবে ম্যানেজ করলে?

: বলেছি একবন্ধুর বোনের বিয়ে খেতে যাচ্ছি। দুদিন থাকব।

: বাহঃ বাহঃ চমৎকার।

: শুধু তোমার জন্য বাবু।

সারাটা সন্ধ্যা ঢাকা শহরের অলিগলি ঘোরার পরে হোটেল রুমে রাত ৯ টার পর ঢুকলাম।



রুমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই দুজনেই বিছানায় ঢলে পড়লাম। নিলয় আমার পাশে শুয়ে আমার চোখের দিকে মোহময় ভঙ্গি নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তবে আমি ওর চাহনীকে সায় না দিয়ে পাশ ফিরে শুলাম।

নিলয় ধীরে ধীরে আমার পিঠের কাছে ঘেঁষে জোর আওয়াজে লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল। নিঃশ্বাসের শিহরনে আমার শরীরের সমস্ত পশম দাঁড়িয়ে গেল। পরে সে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, তোমায় একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?

আমি কোন প্রকার উত্তর না দিয়ে নীরবতার ইঙ্গিত প্রকাশ করে ওকে বুঝাতে চাইলাম আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। নিলয় আমার কোন রুপ সম্মতি না পেয়ে চুপচাপ শুঁয়ে রইল। তারপর চোখদুটোতে কখন যে ঘুম নেমে এসেছিল তার বোধ পেলাম না।

সকালে জেগে ওঠে চোখ মেলতেই দেখি নিলয়ের মাথাটা আমার ছোট্ট বুক আবিষ্ট করে নিশ্চিন্তে নিদ্রায় মগ্ন।



আমি ওর কোমল মায়াভরা মুখটি চেয়ে কপালে আলতো করে আমার ঠোঁটের ছোঁয়া জুড়ে দিলাম ভালবাসার আদরে এবং আরো শক্ত করে আমার বুকে টেনে নিলাম।



নিলয় জাগ্রত হবার পর দুজনে ফ্রেশ হয়ে সকালের খাবার খেয়ে আবার দ্বিতীয় দফা ঘোরার পর্ব শুরু করলাম। এভাবেই নিলয়ের নিঃশ্বাসের একান্ত কাছে থেকে কেটে গেল দুইদিন। এরপর আমার বিদায় নেবার পালা, ঢাকাকে বিদায় জানানোর জন্য সন্ধ্যায় দুজনে রেল স্টেশনে গিয়ে টিকিট করলাম।

নিলয়কে বিদায় জানাব ভেবে আমার মনের ভেতরটা কেমন যেন শূন্যতার চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে লাগল। না পারছি কাঁদতে না পারছি ওর হাতটা ছাড়তে। নিলয় আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে মাথা নিচু করে রেলের সিটে বসে আছে। আমি ওকে কিছু বলতে পারছি না। বলতে গেলেই হয়তো কেঁদে ফেলব। হঠাৎ আমার হাতে একফোঁটা জল অনুভব করলাম।



সঙ্গে সঙ্গে নিলয়ের মুখখানা তুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ রক্তাক্ত লাল বর্ণ ধারণ করেছে, আর দুচোখের কোণা অশ্রুসিক্ত । আমি নিলয়কে বুকে টেনে নিতেই আপনাআপনি আমার চোখ দিয়ে জল আসতে শুরু করল। নিলয় আমার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

: বাবু আমাকে ভুলে যাবে নাতো?

: কখনোই না বাবু, আমি শুধু তোমার।

: বাবু আমি তোমাকে শুধু এক বা দুইদিনের জন্য নয় সারাজীবনের জন্য আমার কাছে পেতে চাই।

: আমার উপর ভরসা রাখ বাবু।

কথা বলতে বলতেই ট্রেন চলে এলে নিলয়কে বিদায় জানিয়ে বাসায় পৌছলাম রাত ১১টায়। তারপর রুমে প্রবেশ করতেই আমার চোখ যেন ছানাবড়া হয়ে গেল আমার অনাকাঙ্খিত অতীতকে আমার সম্মুখে বর্তমান দেখে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করার মত অবস্থাও যেন হারিয়ে ফেলেছি আমি।



অনেকদিন পর আবীরকে আমার বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে একটা আচানক বিস্ময় যেন আমার মাথায় চড়ে আমার কথা বলার শক্তিকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আবীর আমার সম্পর্ক শেষের অতীতটা আবার আমার চোখে প্রতিচ্ছবি হয়ে ভাসতে লাগল।

২.

আবীর হিন্দু । আবীরের সাথে আমার সম্পর্ক শুরু হয় এক স্বরসতী পুজায় যখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি। সেবার ভার্সিটিতে প্রথমবার স্বরসতী পুজা উৎযাপন দেখতে গিয়েছিলাম। আর আমার মত অনেক মুসলমানকেও দৃষ্টিবদ্ধ করেছিলাম । বিদ্যার দেবী বলে কথা, আসতে তো হবেই। একটু ঘোরাঘুরি করার পর ঢোলের আওয়াজ শুনে পুজার স্থানে গিয়ে দেখি হিন্দু ছাত্রদের কপালে ফোঁটা দেয়া হচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে থেকে ফোঁটা দেয়া দেখছি।



এরপর হঠাৎ আবীরকে ফোঁটা নেয়ার জন্য যজ্ঞের স্থানে বসতে দেখে খানিকটা বিস্মিত হলাম। আবীরকে এতদিন মুসলমান হিসেবেই জেনেছি। কিন্তু এই দৃশ্যটাকে কিছুতেই নিজের বিশ্বাসযোগ্য স্থানে ঠাঁই দিতে পারছিলামনা। আবীরকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই ওর প্রতি একটা অচেনা দুর্বলতা অনুভব করতাম। এরপর কোন উপায়ে ওর নাম, কোন সাবজেক্টে পড়ে এসবের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি কারো কাছ থেকে আয়ত্ত করেছিলাম। কিন্তু সাহস হয়নি তার সাথে মুখোমুখি আলাপ করার পাছে আমার দুর্বলতা তার কাছে ধরা পড়ে এই ভয়ে। তবে আজ আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারলাম না। আবীর মন্ডব থেকে বের হবার সাথে সাথে তার পিছু হাঁটতে হাঁটতে তাকে ডাকলাম। আবীর ডাক শুনে থেমে বলল,

: কিছু বলবে?

: আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?

: হুম বল

: আপনি কি হিন্দু?

: হ্যা অবশ্যই, কেন?

: না মানে… আপনাকে দেখে বোঝা যায়না। আমি তো এতদিন আপনাকে মুসলমান ভেবেছিলাম এবং এখনোও ভাবি।

: হা হা হা। তোমার মত এই ভুলটা অনেকেই করে।

: আপনি মুসলমান হলেই ভাল হত।

: হুম আমারও তাই মনে হয়।

: তাহলে আমি আপনাকে এখন থেকে আবীর ইসলাম বলে ডাকব।

: হা হা, ওকে ডাকিও।

এভাবেই একটি অনাকাঙ্খিত আলাপন আবীর আর আমার সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম সাক্ষী হিসেবে সহায়ক ছিল।

সেদিন আবীরের সঙ্গে প্রসাদ খাওয়া,ভার্সিটির বকুল তলায় বসে আড্ডা দেয়া তারপর আমাদের নাম্বার বিনিময় এবং সবশেষে একরাশ ভাললাগা নিয়ে বিদায় নেয়া এর আমার কাছে সবকিছু যেন মেঘ না চাইতে জলের মত মনে হতে লাগল।



ভাগ্যক্রমে দুজনের ভালবাসায় দুচোখ বুজে দুজনেই প্রেমের নদীতে হাবুডুবু খেতে লাগল। এমন একটা সকাল ছিল না যে সকালে আমি আবীরকে ভাবিনি। এমন একটা রাত ছিল না যে রাতে ঘুমাবার আগে আবীর আমাকে আই লাভ ইউ কথাটা বলেনি। দুজনে একসঙ্গে সপিং করা, একরঙের টিশার্ট, প্যান্ট কেনা, মাসে একটা হলেও সিনেমা হলে মুভি দেখা সবই ছিল আমাদের অন্ধ ভালবাসার প্রাণ।



আবীর ওর মামার বাসায় থেকে লেখাপড়া করত। মাঝে মাঝে আমাকেও নিয়ে যেত তার মামার বাসায়। সেও আসত আমাদের বাসায়। তবে আমাদের বাসায় সে সময়ে অসময়ে ছুটে আসত। রাস্তায় কোন ভাল খাবার দেখলেই আমার কাছে নিয়ে এসে বলত, তোমাকে ছাড়া একা খেতে ভাল লাগছিল না তাই নিয়ে এলাম। ভরা পূর্ণিমার রাত গুলোতে আবীর অনেক রাতে আমাদের বাসায় আসত মোঘলাই পারাটা কিংবা চানাচুর নিয়ে আমার সাথে জোসনা বিলাস করবে বলে। আমার হাত ধরে সে এক ছুট দিয়ে খোলা কোন মাঠে গিয়ে আমাকে বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে বলত, খাইয়ে দাও আমায়। আমি আবীরকে খাইয়ে দিতাম। সেও আমাকে খাইয়ে দিত। কখনো আমার মুখে পারাটা ডুকিয়ে দিয়ে অর্ধেক পারাটা সে আমার মুখ থেকে তার মুখে নিয়ে নিত। কি দুর্গাপুজা কি ঈদ সব উৎসবেই দুজনের সঙ্গে দুজন আটার মত লেগে থেকে ঘুরেছি,খেয়েছি,মজা করেছি। সময়ের সাথে এভাবেই পার হল আমাদের ছন্দময় ভালবাসার দুই বছর।

এরপর একদিন, ভার্সিটির একবন্ধুর কাছে আবীরের মামার বাড়ির একটু গোলাযোগের কথা শুনে আমি সেখানে ছুটে গিয়ে ঘটনা জানতে পেরে আকাশ যেন আমার বুকে ভেঙ্গে পড়ল।



আবীরের সঙ্গে তার মামা বাড়ির পাশের বাড়ির এক অন্য জাতের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হবার কারনেই এই ঝগড়া বেঁধেছে। আবীর ক্ষত্রীয়, আর মেয়েটি ব্রাহ্মনের মেয়ে। মেয়েপক্ষ আবীরকে মারার জন্য ঐ বাড়ি থেকে হুমকি দিচ্ছে। আর আবীরকে তার মামী ঘরে বন্দী করে রেখেছে। আমি আবীরের রুমে ঢুকতেই আবীর মাথা নিচু করে রইল। ওকে দেখেই আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। বুকভাঙ্গা কান্না চোখের কোণে এসে জমে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছিল তখন কথা বলতে তবুও বললাম..

: আবীর তুমি এটা কিভাবে করতে পারলে, আমরা এত দিন ধরে একসঙ্গে ছিলাম তবুও আমায় বললেনা, তুমি একটা মেয়েকে ভালবাস?

: বিশ্বাস কর আকাশ আমি তোমাকেও ভালবাসি।

: অনেক বিশ্বাস করলাম। আর কি বিশ্বাস করতে বল।সুখে থেকো , ভাল থেকো।



আবীরের দেয়া এত বড় আঘাত বড্ড অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হতে লাগল দিন দিন। বন্ধ করে দিলাম আবীরের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ। আবীরও আমার কোন প্রকার খবর নিল না। পরে একদিন শুনলাম আবীর ঐ মেয়েটির পিছু ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এও শুনেছিলাম আবীরের সাথে মেয়েটির গোপনে সাক্ষাত হয়। এসব নানা চিন্তায়, অসহ্য যন্ত্রনায় কত রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছি, কত রাতে জেগে জেগে অতিবাহিত করেছি তা একমাত্র রাতটাই জানে। অনেকেই আমার চোখের নিচে গাঢ় কালো দাগ বলেছিল, আমি প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছি এজন্য আমার এরুপ হাল হয়েছিল। আবার অনেকের কাছেই বলতে শুনেছি, আমার শরীরে হয়তো কোন গোপন রোগ বাসা বেঁধে আছে, ডাক্তার দেখানো উচিত। আমি তাদের কথার জবাব দিতে পারিনি। কারণ আমার ভেতরের ব্যাথাটা যে কাউকে বলার মত নয়। এ ব্যাথাটা শুধুই আমার দহনের।



আবীরের আশায় থেকে থেকে ওর রেখে যাওয়া মনপোড়া স্মৃতি নিয়ে নিঃসঙ্গতায় কাটিয়ে দিলাম একটা বছর। অবশেষে আমার জীবনে নিলয়ের আর্বিভাব ঘটল। মুছে গেল সব বর্ণহীন স্মৃতি, সব অতীত বিরহ। আবীরের জায়গায় নিলয় প্রতিষ্ঠিত হল আমার হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ স্থানে।



৩.

আবীর আমাকে রুমে দেখে বিছানা থেকে উঠে বসল। আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম… : তুমি এখানে কেন, আর কার অনুমতিতে আমার রুমে প্রবেশ করেছো?

: এইটাই তো আমার রুম, তুমি যে আমার।

: তোমার এসব ফালতু কথা শোনার সময় নেই আমার। অনেক রাত হয়েছে, খুব ঘুম ধরছে আমার তুমি চলে যাও। আর কখনো আসবেনা এখানে।

: চলে যাব বলে তো আসিনি। তোমাকে ঘুমে ধরেছে তাইনা, এবার আমিও ধরব তোমাকে। বলা মাত্রই আবীর আমাকে জাপটে ধরে বিছানায় শুঁইয়ে দিল।



আবীর আমার চোখে, মুখে, ঠোঁটে অনবরত চুমার শিহরণ দিয়ে বুঝাতে চাইছে যেন সে একবছরের ভালবাসা চোকাতে ব্যস্ত। আমি ওকে সরিয়ে দেয়ার জন্য বারংবার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। আবীরের নগ্ন ভালবাসার উষ্ণতায় ১ঘন্টা পর দুজনেই ঘুমে আসক্ত হলাম।

সেই রাতে আবীর আমার কাছে ছিল। আর সেদিন থেকে আবীর আবার পূর্বের ন্যায় আমাকে ভালবাসতে শুরু করল। কিন্তু আমি দোটানায় আবদ্ধ হয়ে গেলাম। একদিকে আবীর একদিকে নিলয়। কাকে ছাড়ব কাকে ধরব তা মানিয়ে উঠতে পারছিলামনা। যখন আবীরের বাহুডোরে জড়াই তখন নিলয়ের মায়াভরা মুখটি চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠে। আবার যখন নিলয়কে নিয়ে ভাবি তখন আবীর যেন আমার ভাবনায় ভালবাসার দাবি তুলে ধরে। এভাবে অবিরাম মনের সাথে গোপন যুদ্ধ করতে করতে একদিন আবীরকে নিলয় আর আমার সম্পর্কের কথা জানালাম।



আবীর কথাগুলো শোনার পর আমার সাথে আর একটা কথাও বলল না। মাথা নিচু করে রইল। সন্ধ্যা হয়েছে বিধায় আমি ওকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। কিন্তু অনুরোধটা যেন ওরই জোরালো ছিল একটু একা থাকার। ওর অনরোধ রাখতে আমি ওকে একা রেখে বাড়ি চলে আসি।

এরপর রাত ১০টার পর বাড়ির সদর দরজায় টোকা শুনে দরজা খুলে আবীরকে দেখে চমকে গেলাম। তখন আবীরের চোখগুলো ফোলা আর ওকে খুব ক্লান্ত লাগছিল। আবীর দাড়িয়ে থেকে আমাকে শুধু একটা কথাই বলল, I Love you আকাশ।

আমি আবীরকে রুমে আসার জন্য করজোড় অনুরোধ করলাম। আবীর কিছুক্ষণ আমার দিকে একটানা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমাকে বিদায় বলে চলে যেতে লাগল। আমি আবীরকে অনেকবার পিছু ডাকলাম কিন্তু সে শুনল না। একমাস পর, নিলয় আমাকে দেখার জন্য আমার কাছে আসতে ব্যাকুল হয়ে উঠল। ফোন করলেই বলত কবে যাব তোমার কাছে, কখন দেখব তোমায়?

সেদিন রাতে আমার কাছে একটা বিয়ের কার্ড চলে আসে। কৌতুহল মনে কার্ডটা খুলে চোখ ঝাঝসা হয়ে গেল আমার। আবীর এবং ঐ ব্রাহ্মনের মেয়ের বিয়ে। কার্ডটা দেখতে দেখতে কখন যে একবিন্দু জল গাল গরিয়ে কার্ডে পড়ল তার লেশমাত্র টের পেলাম না। সেই মুহূর্তে আবীরের ফোন এল। ফোন করার উদ্দেশ্য, আমি যেন নিলয়কে নিয়ে তার বিয়েতে যাই এটাই তার সর্বশেষ অনুরোধ ছিল আমার প্রতি। আমিও কথা দিলাম তাকে।

এসব কিছু গোপন রেখে বিয়ের দুদিন আগে নিলয়কে আসতে বললাম বগুড়ায়। নিলয় চলে এল। ওকে অনেকদিন পর দেখে যেন একটা অমৃত সুখ অনুভবে জেগে উঠল আমার। পরদিন, নিলয়কে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে আবীরের বাড়ির উদ্দেশ্যে রাজশাহীর বাসে উঠলাম। রাজশাহীতে পৌছে আবীরকে ফোন দিলাম। আবীর বাসস্টেশনে আসল আমাদের নিতে।

 

আজ আমার সামনে আমার দুই প্রেমিক। এই মুহৃর্তে আমার কিরকম অনুভূতি হচ্ছিল সেটা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আবীরকে নিলয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর অটোতে উঠে আবীরের বাসায় পৌছালাম আমরা। নিলয়কে এখনও জানাইনি আবীরই আমার সেই স্মৃতিমাখা অতীত, আমার ভালবাসা। আবীরের পুরো বাড়িতে বিয়ের সাজ, ঢোলের আওয়াজে মুখরিত এক আড়ম্বর পরিবেশ। আবীর আমাদের তার ঘরে বসিয়ে বাইরে গেল। এদিকে নিলয় আমার দিকে প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল,

: বাবু এটা তো একটা হিন্দু বিয়ে বাড়ী, তুমি এখানে এলে কেন, আবীর কে হয় তোমার?

আমি একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে নিলয়কে সব খুলে বললাম। নিলয় আমার কথা শুনে অতি আশ্চার্যে হতবাক হয়ে থমকে গেল। সে কখনো কল্পনাও ভাবেনি যে, সত্যি সত্যি একদিন তাকে আমার অতীতের মুখোমুখি হতে হবে।



কিছুক্ষণ পর আবীর রুমে এসে আমার পাশে বসল। আমি আবীর এবং নিলয়ের মাঝখানে। কারো মুখে কোন কথা নেই। যেন মরুভূমির বুকে দাড়িয়ে থাকা তিন তৃষ্ণার্ত যুবক প্রানের আকুতির মাঝে বাঁধা পড়ে বাকশূন্য হয়ে আছে। নিলয় তখন থেকে নিশ্চুপ হয়ে মনে মনে যেন অভিমানের প্রলাপ গাইছে, তার মুখের দিকে তাকায়ে তা বুঝতে পেলাম। ওদিকে আবীরের দিকে আমি তাকাতে পারছিনা ওর আকুল করা বিমর্ষ মুখ দেখলেই আমার বুক ব্যাথায় নড়ে ওঠে। নীরব ক্ষণের অবসান ঘটিয়ে একসময় আবীর আমার হাতটা নিলয়ের কাছে তুলে দিয়ে বলল,

: নিলয়… আকাশ খুব ভাল একটা ছেলে… সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে… প্লিজ ওকে কখনো কষ্ট দিওনা।

বলেই আবীর চোখ মুছতে শুরু করল। ওর চোখ মুছা দেখে আমার হৃদয়টা যেন দুমড়ে মুচড় যাচ্ছে। চোখের কিনারা থেকে জল উপছে পড়তে চাচ্ছে।



বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ সকালে আমাদের বিদায় নেবার সময়। আজ রাতে আবীরের বাসর হবে। আবীরের অনুরোধ ছিল আজকে রাতটা থাকার জন্য কিন্তু আমি থাকতে চাইলাম না। এরপর স্টেশনে পৌছালাম ট্রেন ধরার জন্য আবীরও জোর করে আমাদের সাথে এলে স্টেশনে। আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রেন চলে এল। ট্রেনে ওঠার আগে আবীর আমার হাতটা টেনে ওর বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে শুরু করল। আমিও শেষবারের মত ওর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাম। আবীরের চোখের পানিতে আমার শার্ট ভিজে একাকার।

এদিকে ট্রেনে ওঠার হুইসেল বেজে উঠল। নিলয় জানালা দিয়ে আমাকে ট্রেনে ওঠার জন্য ডাকতে লাগল। আমি আবীরের গালে শেষ চুমা দিয়ে ওকে ছেড়ে যেতে ধরলাম। সে পিছন থেকে আকাশ বলে আমাকে একটা মায়াবী ডাক দিল। আমি ফিরে তাকাতেই আবীর পলকহীন ভাবে আমাকে দেখতে লাগল।



আমি একপা দুপা করে ট্রেনে ওঠে সিটে বসে জানালা দিয়ে আবীরকে দেখতে লাগলাম। ট্রেন চলতে শুরু করল। আবীর ঐখানেই দাড়িয়ে হাত নেড়ে আমাকে বিদায় জানিয়ে একদৃষ্টিতে দেখতে লাগল। আমিও ইশারা দিয়ে তাকে বিদায় জানালাম। চলতে চলতে ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করল, কিন্তু তখনও আবীর আমাদের ট্রেনের দিকেই তাকিয়ে রইল। আবীরকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে আমার দুচোখ বেয়ে অনর্গল জল পড়তে লাগল। আমাকে কাঁদতে দেখে নিলয় ওর বুকে আমাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

: এই পাগল এত কাঁদছো কেন, আমি কি তোমার কেউ নই? বুঝেছি তুমি আমাকে ভালইবাস না। আবীরই তোমার সব। চোখ মুছ না হলে আমিও ট্রেনের মধ্যে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠব কিন্তু।

আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার সব পিছুটানকে পিছনে ফেলে নিলয়কে জাড়িয়ে ধরে ওর কানে কানে বললাম, আমাকে বিয়ে করবে বাবু?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?