নতুন পথের সূচনা - আনন্দ ধারা

১.
 ইনবক্সে বিশাল এক মেসেজ পেলো রুদ্র। জারিফ লিখেছেঃ

আজ কিছু না বলা কথা বলতে চাই। তোমার সাথে পরিচয় কতদিনের! মাস তিনেক হবে। মনে পড়ে? পহেলা বৈশাখে প্রথম তোমাকে ফ্রেন্ড রিকুএস্ট পাঠাই! তুমি অনলাইনেই ছিলে। সাথে সাথে এক্সেপ্ট করলে। চ্যাট শুরু করলাম। পরিচয় পর্ব সেদিন আর বেশিদুর গড়ায়নি। আমিও জোর করিনি, কারণ জানতাম তোমার মনটা সেদিন ভীষণ রকমের খারাপ ছিল। কিভাবে জানতাম? সে কথাই আজ বলবো।

পরদিন আবার ফেইসবুকে আসলাম শুধু দেখার জন্য তুমি অনলাইনে আছো কিনা, দেখলাম নেই। তৃতীয় দিন তোমাকে পেলাম, তাও অল্প সময়। অনেকটা বেহায়ার মতোই তোমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম। কোনমতে হ্যাঁ/না বলে জবাব দিলে। একটু পরই সাইন আউট। এদিকে আমার ভিতরে যে তখন কী চলছিল, তা বলে বুঝাতে পারব না। এরপর আবার দুইদিন পরে তোমাকে অনলাইনে পেয়ে আমার কলিজায় পানি আসলো। একপ্রকার জোর করেই তোমার বন্ধুত্ব ভিক্ষা চাইলাম। ঠিক কলাভবনের পিচ্চিগুলার মত, “ভাইয়া একটা চকলেট নেন না। নেন না ভাইয়া... না নিলে পা ছাড়ুম না।ওদের থেকে চকলেট না কিনে যেমন উপায় থাকে না, আমার বন্ধুত্ব স্বীকার না করেও তোমার তেমনি উপায় থাকল না। বন্ধুত্ব করা ছাড়া সত্যি আমার আর কোন উপায় ছিলো না তোমার পাশে থাকার।

অবাক হচ্ছো, তাই না? এবার আসছি আসল কথায়। প্লিজ রাগ কোরো না, প্লিজ! আমি হচ্ছি সোহানের বন্ধু। তার বেস্টফ্রেন্ড। আমিও তাকে বেস্টফ্রেন্ডই ভাবতাম, কিন্তু তোমার সাথে ও যা করলো তারপর থেকে ওকে আর বেস্টফ্রেন্ড ভাবি না। আসলে সোহান সব সময়ই প্লেবয় টাইপের ছেলে ছিল। যাইহোক, আমার কথায় ফিরে আসি। সোহানের জীবনে যখন তুমি এলে, সোহান আমাকে তার ফোনে তোলা তোমাদের এক যুগলবন্দী ছবি দেখিয়ে বললো, “দেখ্‌ দোস্ত, নতুন মাল!প্রথমে দেখে আমিও ওর কথায় সায় দিয়েছিলাম, “সত্যি তো! কোথায় পেলি? কী অপুর্ব চোখ রে বাবা!সোহান সাবধান করে দিয়ে বলেছিল, “খবরদার! এইটা আমার মাল। তুই নজর দিবি তো খবর আছে।খবর আমার সত্যিই হয়ে গিয়েছিল রুদ্র। সেদিন বাসায় ফিরে কেবলই তোমার কথা ভেবেছি। আর আফসোস করেছি, ইশ! আমি যদি সোহানের মত সেক্সি আর ফরসা হতাম, তোমার ছবিটা হয়তো সোহানের মোবাইলে না থেকে আমার মোবাইলেই থাকতো। যাইহোক, এরপর প্রায়ই সোহানের থেকে তোমার খবর নিতাম। তোমার ওই চোখ দুটোতে কী যেন একটা ছিল, আমি ঠিক বলে বুঝাতে পারব না। একদিন কী করেছি জানো? সোহানের মোবাইল থেকে চুরি করে তোমার সব কয়টা ছবি ব্লুটুথ দিয়ে নিজের মোবাইলে নিয়ে নিয়েছিলাম। ও টেরও পায়নি। একেই কী তবে প্রথম দেখায় প্রেম বলে? হবে হয়তো! বন্ধুর জীবনে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে চাইনি। তাই তোমার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি তখন। কিন্তু তোমার জন্য খুব দুশ্চিন্তা হতো। কারণ আমি জানতাম সোহান তোমার জীবনে এসেছিল কেবল ভোগের প্রত্যাশা নিয়ে। আমি সোহানকে অনেকবার বলেছি, “দেখ, ছেলেটার জীবনে তুইই প্রথম প্রেম। ওকে কষ্ট দিস না।ও কিন্তু বলেছিলো আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে। সান্ত্বনা ছিল এতটুকুই যে, তুমি তো অন্তত সুখে থাকবে তোমার ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে। কিন্তু কথায় আছে না? কয়লা যায় না ধুলে, আর স্বভাব যায় না মলে। সোহান তার স্বভাব পাল্টাতে পারলো না। ও যে ভিতরে ভিতরে ওর ফ্ল্যাটে আগের মত ছেলেদের বাগিয়ে নিয়ে আসতো, আমাকে তার কিছুই বলতো না। যখন বললো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোমাকে সাবধান করার কোন সুযোগই তখন আমার নেই। কারণ, তুমি সেটা আমার আগেই জেনে গেলে।

পহেলা বৈশাখের দিন সকাল বেলা তুমি হাজির হলে ওর ফ্ল্যাটে বাটি ভর্তি পান্তা-ইলিশ নিয়ে। দরজা লক না করা থাকায় সোজা ঢুকে গেলে সোহানের রুমে। যা দেখলে, তা আর নাই বা বললাম। দুপুরে সোহান আমাকে ফোন দিয়ে জানালো সব কিছু। শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম কিছুক্ষনের জন্য। ভাগ্যিস আমাদের দেশে এখনো ভিডিও কল চালু হয়নি। হলে সোহান ঠিকই দেখতে পেতো কিভাবে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল সেদিন। সোহানের বেস্টফ্রেন্ড হওয়ায় তোমার ফেইসবুক আইডি জানাই ছিল। এই আইডিটা খুলে ফ্রেন্ড রিকুএস্ট পাঠালাম। আর বন্ধুত্বের জন্য নিজের ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে দিলাম তোমার দিকে। একটা অপরাধ বোধ কাজ করছিল নিজের ভিতর। আমি তো জানতাম সোহান কেমন, তাহলে কেন তোমাকে সাবধান করলাম না?

সঙ্গতকারণেই আমার কোন ছবি তোমাকে দেখাইনি। কাল তুমি সামনাসামনি দেখা করতে চেয়েছ। ভেবে দেখলাম আমিও তো সোহানের মত তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছি বন্ধুত্বের নাম করে। ধোঁকা দিয়ে ভালোবাসার মত পবিত্র সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর এইসব সত্য জানার পর তুমি আমাকে ভালোবাসা তো দূরের কথা আমার সাথে বন্ধুত্বও রাখবে না। তাই এই একাউণ্টটা আজ ডিএক্টিভেট করে দিচ্ছি। পারলে আমায় ক্ষমা করো।

২.

রাতের বাসে কক্সবাজার যাচ্ছে রুদ্র। একাই। নিজের চাপা কষ্টটা অন্যকে দেখিয়ে করুণা আদায় করার ইচ্ছে তার নেই। পরপর দুটো ঝড় সামলাতে গিয়ে অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। তাই অশান্ত সমুদ্রের কাছে তার অতৃপ্ত মনের না বলা কথাগুলো বলে নিজেকে একটু হালকা করবে সে। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে সোহাগের বাস কাউন্টারে বসে মুখ ঢেকে পেপার পড়ছিল রুদ্র। ২৬/২৭ বছরের একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো,

-     এক্সকিউজ মি, আমার ব্যাগটা একটু দেখবেন? আমি একটু ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসতাম।
-     (পেপারের আচ্ছাদন থেকে মুখ বের করে) সিওর, আপনি যান।
-     না থাক। (ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললো আসিফ)
-     আচ্ছা, বিশ্বাস করতে না পারলে থাক। আপনি ব্যাগ নিয়েই টয়লেটে যান।
আবার পেপার দিয়ে মুখটা ঢেকে দিল রুদ্র। আসিফ দাঁড়িয়েই আছে। বুঝতে পারছে না, এ কি করে সম্ভব! রুদ্র? সেও কক্সবাজার যাচ্ছে? একই বাসে
-     কী হলো? এনি প্রব্লেম?
-     না, না। ঠিক আছে। সরি। আপনি একটু ব্যাগটা যদি...
-     (মুচকি হেসে)আরে ভাই যান, ব্যাগ নিয়ে পালাবো না।
-     না না, তা কেন হবে? আচ্ছা আমি আসছি।

বাস ছেড়ে দিল ঠিক রাত ১১ টায়। ৪ টায় হোটেল নুরজাহানে চা পানের বিরতি। রুদ্র এক ঘুম দিয়ে উঠলো। একটু ওয়াশরুমে যাওয়া দরকার। বেসিনের সামনে আসতেই আবার ওই লোকটার সাথে দেখা। লোকটা মুখ ধুচ্ছিলো। পাশে দাঁড়িয়ে বেসিনের কলটা ছাড়তেই লোকটা মুখ ধোয়া বাদ দিয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে। মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে পানির ফোঁটা। রুদ্র রীতিমত বিরক্ত।
-     আচ্ছা, আপনি কী আমাকে চেনেন?
-     ইয়ে, না। মানে...
-     মানে মানে করছেন কেন? বাস কাউন্টার থেকেই লক্ষ্য করছি আপনি এমন ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছেন, মনে হয় আপনি আমাকে চেনেন।
-     ইয়ে, আসলে আপনাকে দেখতে আমার পরিচিত এক বন্ধুর মত লাগলো তো, তাই।
-     ও আচ্ছা।

দুজনে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে।

-     আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আপনার সাথে এক কাপ চা খেতে পারি? আমি আবার একা কিছু খেতে পারি না।
-     ওকে, নো প্রব্লেম।

আসিফ ভাবতেই পারছে না, এটা কী স্বপ্ন! নাকি সত্যি? রুদ্র বসে আছে তার সামনে? মনে মনে ভাবছে আর কিভাবে তার সাথে আরো বেশি সময় কাটানো যায়।

-      চায়ের সাথে আর কিছু?
-      না, শুধু চা। ও ভালো কথা, আপনার নামটা?
-      আসিফ, আসিফ ইকবাল
-      হুম, আমি রুদ্র। রুদ্র মাহমুদ। বিবিএ করছি। আপনি?
-      আমি ব্র্যাকে আছি। অফিসের একটা সার্ভে করতে কক্সবাজার যাচ্ছি। ভালো কথা, কোন হোটেলে উঠছেন?
-      প্রাসাদে। আপনি?
-      তাই নাকি? আমিও তো। যাক এক সাথে সময় কাটানো যাবে।
-      যদি কারো সাথে সময় কাটাতেই চাইতাম, তাহলে কী আর একা আসতাম?
-      ওহ্‌ সরি। মাফ করবেন। আমি বুঝতে পারিনি।
-      ইটস্‌ ওকে। আচ্ছা, চলেন ওঠা যাক। বাস ছেড়ে দিচ্ছে।
৩.

কক্সবাজারে এসে আসিফ অনেক চেষ্টা করেছে রুদ্রর কাছাকাছি যাওয়ার জন্য, একটু কথা বলার জন্য। কখনো একসাথে খাওয়ার বায়না ধরে, কখনোবা শপিং-এ সাথে যাওয়ার অনুরোধ করে। রুদ্র কেবলই ভদ্রতা রক্ষার্থে আসিফকে যা একটু সময় দেয়। পুরোটা সময় হয় হোটেলে, না হয় বীচে কাটায় সে। একা একাই ঘুরে বেড়ায় সমুদ্রের বালুকাবেলায়। আসিফ বুঝতে পারে এভাবে রুদ্রকে বিরক্ত করাটা তার ঠিক হচ্ছে না। তাই এক সময় আস্তে আস্তে দূরে সরে আসে। রুদ্রকে তার নিজের মত করে থাকতে দেয়।

কাল আসিফ ঢাকা ফিরে যাবে। প্রথমে চট্টগ্রাম, অফিসে রিপোর্ট সাবমিট করে রাতের ট্রেনে ঢাকা। সন্ধ্যায় লাবণী পয়েন্টে বালির উপরে বসে একমনে সমুদ্রের গর্জন শুনছিল রুদ্র । শেষবার রুদ্রকে দেখার জন্য, একটু কথা বলার জন্য, ভদ্রতার অযুহাত দেখিয়ে বিদায় নিতে এগিয়ে যায় আসিফ।

-      ভালো আছেন?
-      , আসিফ সাহেব? এইতো। কেমন আছেন?
-      কাল রাতের ট্রেনে ঢাকা চলে যাচ্ছি। তাই আপনার থেকে বিদায় নিতে এলাম। অনেক বিরক্ত করেছি আপনাকে। সম্ভব হলে মাফ করে দেবেন।
-      আরে নাহ্‌, কিসের বিরক্ত? কাল তো আমিও যাচ্ছি। রাতের ট্রেনেই। দেখেন, কী অদ্ভুত মিল! একই বাসে আসলাম, আবার একই ট্রেনে যাচ্ছি। হা হা হা
-      আসলেই তো! আপনার হাসিটা খুব সুন্দর। সবসময় হাসতে পারেন না? এত মন খারাপ করে থাকেন কেন সব সময়?
-      (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আচ্ছা, উঠি। ভালো থাকবেন।
রুদ্র উঠে চলে যায়। আসিফ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর চলার পথে, যতক্ষণ না তার অবয়বটা ঝাপসা হয়ে আসে। কিন্তু লক্ষ্য করে না রুদ্র যেখানে বসে ছিল সেখানে বালির উপর অনেকগুলো Z আঁকা, আঙ্গুল দিয়ে।

 ৪.

বার্থে ঢুকতেই আসিফের চোখা ছানাবড়া হয়ে যায়। একি! রুদ্র? তার বার্থেই? পুরো এক মিনিট দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকে সে।

-      হা হা হা (রুদ্রর প্রাণবন্ত হাসি ট্রেনের আওয়াজ ছাপিয়ে আসিফের কানে রিনরিন করে বাজতে থাকে।) আরে মুখটা তো বন্ধ করেন, মাছি ঢুকে গেল তো। হা হা হা! দেখলেন! আবার দেখা হয়ে গেল।
-      তাই তো! আপনি জানতেন যে আমি এই বার্থে উঠছি?
-      আরে নাহ্‌। জানলে কী আর আপনাকে আরো সুযোগ দেই আমাকে বিরক্ত করার!
-      (লজ্জা পেয়ে যায় আসিফ) আসলেই তো।
-      আসেন, আসেন। ভিতরে আসেন। বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি?
-      ও হ্যাঁ। (ভিতরে ঢুকে বার্থের দরজা লাগিয়ে দেয় আসিফ)

ব্যাগ গুছিয়ে রেখে আসিফ জিজ্ঞেস করলো,
-      আপনি কোন বেডটা নিবেন? উপরেরটা, নাকি নিচেরটা?
-      আমার টিকেটে যেহেতু উপরেরটার কথা লেখা আছে, সেহেতু আমি উপরেই থাকবো।
-      না না। উপরে ঝাঁকুনিতে আপনার যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়?
-      আমার ঘুম নিয়ে আপনার তো দেখি ব্যাপক টেনশন! (মুচকি হেসে) ব্যাপার না। আপনি নিচে শোন, আমি উপরেই শুচ্ছি।
-      আচ্ছা, আপনার যেমন ইচ্ছে। আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসছি।

এই বলে আসিফ বেরিয়ে যায় বার্থ থেকে। রুদ্রর খুব ঘুম পেয়েছে। সে উপরে উঠতে যাবে, এমন সময় দেখে ফোন বেজে উঠল নিচের বেডে। ফোনটা ভুলে বেডের উপরেই রেখে গেছে আসিফ। কয়েকবার বাজলো। আওয়াজটা এত কর্কশ, যে কানে লাগে। রুদ্র সাইলেন্ট করে রাখতে ফোনটা হাতে নিতেই কলটা কেটে গেল। আর মোবাইলের স্ক্রীনে ভেসে উঠলো রুদ্রর ছবি। অনেক আগে তোলা। কিন্তু এই ছবি আসিফ সাহেবের মোবাইলের স্ক্রীনে কেন? এটা তো সোহান তুলেছিল তার মোবাইল দিয়ে, সেই এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে। রুদ্রর জন্মদিনে। কল্পনায় ভেসে উঠলো জারিফের সেই মেসেজটা।

তাহলে? তাহলে আসিফ সাহেবই জারিফ? খুশিতে মোবাইলটা বুকে জড়িয়ে ধরল রুদ্র। তার চোখে পানি। রোদ আর বৃষ্টি একসাথে হলে নাকি শিয়াল মামার বিয়ে হয়। কিন্তু হাসি আর কান্না একসাথে হলে? রুদ্রর জানা নেই।

এমন সময় বার্থের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আসিফ। রীতিমত অপ্রস্তুত। তার  মোবাইলটা রুদ্রর হাতে, রুদ্রর চোখে পানি। তাহলে কী রুদ্র সব জেনে গেল? চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল সে। ঠিক সেই সময় রুদ্র ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো আসিফের বুকে। কাঁদতে কাঁদতে ভিজিয়ে দিলো আসিফের শার্টের বুকের দিকটা।



-      এই কয়টা মাস কিভাবে কেটেছে আমার জানো? কতভাবেই না তোমাকে খুঁজেছি। কেন এই শাস্তি দিলে, বল? কেন সামনে আসোনি? কেন দেখা করলে না সেদিন? তোমার সাথে যোগাযোগের কোন সুযোগই রাখলে না। কেন? বল? কেন?  (রুদ্র আর কথা বলতে পারে না। ফোঁপাতে থাকে।)
-      ভয়ে, যদি তুমি আমার ভালবাসা গ্রহণ না করতে? (আসিফ আলতো করে জড়িয়ে ধরলো তার বহুল আরাধ্য ভালোবাসার মানুষটিকে )
-      তোমার মাথা! কেন গ্রহণ করতাম না? তোমার এত গভীর ভালোবাসা অবজ্ঞা করার শক্তি কী আমার আছে? তুমি সামনে এসে একবার মুখ ফুটে বলে তো দেখতে!
-      হয়েছে, আর কোন কথা নয়। চুপ, একদম চুপ।

এই বলে রুদ্রর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল আসিফ। ট্রেন যদিও চলছিল ঢাকার পথে, আসিফ আর রুদ্র চলতে শুরু করলো এক নতুন পথের সূচনায়। 

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?