আজও অপেক্ষায় আছি - অজানা সমুদ্র

আমি নীলাভ৷
বর্তমানে পেশায় একজন ডক্টর। তবে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে বলতে আমি অহনার "ছোট বা " অহনা আমার ভাই এর মেয়ে৷ আমার অভিভাবক ৷ আমায় বকা দেয়, সকাল এ ডেকে দেয় ৷ জোর করে খাইয়েও দেয় ৷ ওর কথা বলে শেষ করা যাবে না৷ অথচ সবেমাত্র ক্লাশ ফোর এ পরে অহনা। এত কম বয়সেই এক দারুন মেচ্যুরিটি মেয়েটির মাঝে অবাক করে আমাকে প্রায়শই। ওকে দেখলেই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। মনে হয় আম্মু অহনার বেশে আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওর ছোটো খাটো আবদার, ওর শাসন, ওর ভালোবাসা এসব নিয়েই আমার পৃথিবী ও।
আমার ২৮ বছরের জীবনে ভালোবাসা এসেছিল সেই ১৮ তে।

বলছি আজ থেকে ১০ বছর আগের কথাই। নতুন যৌবন, নতুন আবেগ৷ তাই ভালোবাসা টাও তীব্র ৷ তবে আমাদের কোনো দিনও ঘর বাঁধা হয় নি৷ তখন ইসকুল এর শেষের দিক ৷ দু মাস পর টেস্ট পরীক্ষা, তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনলাইন এ আসি ৷ একদিন হঠাৎ ওর টেক্সট, সেই রাতে ৩ টা অবদি চ্যাট চলে ৷ তারপরদিন আবার ওর নক ৷ কথা হয় ভালো লাগা, মন্দ লাগা এসব নিয়ে ৷ এভাবেই কথা চলতে থাকল ৷ তারপর ফোন নম্বর দেয়া নেয়া ৷ একদিন অনলাইন এ আসি নি৷ পরদিন পরীক্ষা ছিল ৷ তাই, ওকে জানাতেও পারিনি। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে ফোন হাতে নিতেই ওর কল ৷
কি খবর? পুরা হাওয়া হয়ে গেলে ৷ আরে বলো না পরীক্ষা ছিল ৷ তা কেমন হল? আমার খারাপ হয় না তো ৷ এভাবেই কথা হল৷ তারপরে রাত জেগে কত গল্প, আর কত কথা বলেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। আস্তে আস্তে শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। ওকে আমার আইডল ভেবেই স্বপ্ন বুনতে থাকলাম কারন সে একজন ডাক্তার ছিলো আর আমার ভবিষ্যত স্বপ্নও ছিলো একজন ডাক্তার হওয়া।আমার এস. এস. সি. শেষ হবে সামনের বছরে আর তার এম. বি. বি. এস. তারপর ঢাকায় আসব দুজন, এক কামরার ঘর,শুরু হবে তোমার আমার লাল নীল সংসার ৷ হঠাৎ করেই ভালোলাগা ভালোবাসা যেন আমাকে ঘিরে ধরলো ৷ ভালো কিছু দেখলেই মনে হত ইস তুমি যদি থাকতে ৷ সম্পর্কটা সেদিন পূর্ণ হল যেদিন তোমায় দেহে ধারণ করলাম ৷ যৌনতার সুখ ঠিক কতটা, জৈবিক চাহিদা পূর্ণ হবার তৃপ্তি যে কতটা মধুর তা তোমার কাছে বুঝলাম ৷

কেটে গেল ছয় টা মাস ৷ আমাদের ভালোবাসার নৌকা বেশ চলছিল ৷ সবকিছুর যেমন শেষ হয়, এই ভালোবাসারও বোধয় শেষ হওয়া শুরু হল ৷ খেয়াল করলাম তুমি খুব বিজি হয়ে যাচ্ছ৷ আমি মেনে নিলাম, তোমার পেশার কথা ভেবেই ৷ ফোন দিলে বলতে বিজি ২মিনিট পর কল করছি৷ সারারাত কেটে যেত, কল আসতো না ৷ আমি দিলেও ২মিনিট এর বেশি কথা বলতে না ৷ কতো রাত ফোন হাতে জেগেছি তোমার অপেক্ষায়, তা আমিই জানি ৷ টানা তিন মাস ফেসবুক এ টেক্সট করি ৷ নো রিপ্লাই৷

একা একা বাথরুমে কেঁদেছি ৷ কাঁদার শব্দ বিলিন হয়ে গেছে ঝরনার পানির শব্দে ৷ একদিন তোমায় ফোন দিয়ে বলি আজীবন অপেক্ষা করব ৷ তুমি বলেছিল এখন আমার বয়স কম, তাই পুতুপুতু কথা বলাই যায় ৷ আরও বললে কম বয়েসি ছেলের সাথে রিলেশন রাখতে পারবে না৷ আমি কিছু বলিনি ৷ শুধু একটাই কথা মনে গেথে গেল ৷ আমি তো জানতামই না নাহিদ ভালোবাসা কী? ঘর বাঁধা কি? কেন শেখালে আমায়? কেন? আমার নীল পদ্ম যে তোমায় দিয়ে দিয়েছি ৷ এখন আমার পুরোটাই ফাঁকা৷

নাহ ফাঁকা বললে ভুল হবে, আছে তো তোমার স্মৃতি, আর ফুসফুস ভরতি তোমার শরীরের গন্ধ ৷ ভালোবাসা এত অসহায় কেন, বলতে পারো কেউ?? চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমার নিরব কান্না বাইরের প্রকৃতিতে অঝর বর্ষণ ধারায় ঝরতে লাগলো।শুনেছিলাম সত্য ভালোবাসা নাকি কখনও ভেস্তে যায়না। যত চড়াই উৎরাই আসুক না কেন একসময় সফলতার মুখ সে দেখেই। সেই আশাতে বুক বেধে কাটিয়ে দিচ্ছি জীবনের সোনালী দিনগুলো। হয়তো নাহিদ একদিন ফিরে আসবে। আর সেদিন এসে যদি দেখে আমি অন্যের ঘর করছি তা কি আমার ভালোবাসার অপমান হবেনা? তাই তার প্রতীক্ষায় আছি।

হঠাৎ শুনতে পেলাম অহনা ডাকছে, "ছোট বা " কাঁদছো? এই মেয়েটার একটা ক্ষমতা আছে, আমার কান্না পেলেই কোথা থেকে যেন টের পেয়ে যায় ৷ নাহ মা কাঁদি না ৷হুম কাঁদে না।ছেলের কষ্ট মা কি দেখতে পায়? হা হা, বুড়ি একটা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?