ওয়েলকাম টু আওয়ার শো অনু আড্ডা। অনু আড্ডাঃ পর্ব-০৯
প্রেজেন্টস রৌদ্দুর সেনগুপ্ত। রৌদ্দুর
এসেছে পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলা থেকে।
শুভ্রঃ রৌদ্দুর তোমাকে আমার আড্ডায় স্বাগতম। তুমি প্রথম
ব্যক্তি যে আমার ফ্রেন্ডলিস্টের বাইরে থেকে অনু আড্ডায় এসেছো এবং বাংলায় লিখে
উত্তর দিয়েছ। এজন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। তোমার বয়স কত? কি করো?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ আমার নাম রৌদ্দুর সেনগুপ্ত, বয়স ১৯,
ছাত্র।
শুভ্রঃ আচ্ছা তুমি তো সমকামী। কতবছর বয়সে তুমি বুঝতে পারলে
তুমি একজন সমকামী ব্যক্তি।
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ আমি প্রথম আমার ইস্কুল জীবনে সমকামিতার
স্বাদ পাইছি।
শুভ্রঃ কিভাবে বুঝতে পারলে?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। আমার
শ্রেণীর এক সহপাঠী প্রায়ই নীল ছবির কিছু চটি বই ইস্কুলে আনত আর আমাকে দেখাত। আমি
অবাক হয়ে দেখতাম। মাঝে মাঝে ও গুলো দেখে আমার শরীরের গোপন অঙ্গ শিহরিত হইত। আমার
সহপাঠী মাঝে মাঝেই আমার গোপন অঙ্গে হাত দিত। আমার ভেতরে এক অদ্ভুত ভাললাগা কাজ
করত। একদিন ইস্কুল ছুটির পর ও আমাকে বলল দোস্ত একটু তিন তলায় চল। আমি বললাম
ইস্কুল তো ছুটি হয়ে গেছে। এখন গিয়ে কি হবে। আর আমাদের ইস্কুল এর তিন তালার দালান
ফাঁকাই থাকত। নতুন ব্লিডিং হচ্ছিল তাই খুব একটা কেউ ওই দিকে যাইত না। যাইহোক ওর
কথা মত আমি গেলাম। হঠাৎ ও আমার পেন্ট এর জিপার খুলে আমার লিঙ্গ চুঁষতে শুরু করল। আমার
শরীরে কেমন হচ্ছিল। একটু পরেই লিঙ্গ’র ভিতর দিয়ে কি একটা বেড়িয়ে আসলো। তারপর ও আমাকে বলল ওর টা মুখে নিতে। আমি ওর টায় হাত
দিলাম। বিশ্বাস করবেন না একটু পড়েই ওর লিঙ্গ আকারে অনেকটাই বৃহৎ হয়ে গেল আমি
অবাক হলাম।ও আমাকে দেওয়াল ধরে দাঁড়াতে বলল।আমি বললাম এইসব হয়না।ও বলল দেখ না কি
করি। ও আমার পশ্চাতে ওর লিঙ্গ ঠেকিয়ে বেগ দিল। আমি ভয়ে সরে আসলাম। সেইদিন আর
কিছুই হইনি। যদিও পরবর্তী কালে একদিন ওর বাসায় বাবা মা ছিলনা আমরা ওইদিন মিলিত
হয়ে ছিলাম।
শুভ্রঃ হা হা হা। এতদিন চটি গল্পে এরকম রগরগে কাহিনী
দেখতাম। তোমার জীবনে সত্যিকারে ঘটেছে! বেশ মজার। স্কুল জীবন থেকে বেশ পাকনা ছিলে
তুমি। খুব ভালো বাংলা লিখছো তুমি। আচ্ছা কখনো প্রেমপত্র টত্র লিখেছো কোন ছেলেকে?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ দেখুন, ক্লাস ফাইব এ
পড়ার সময়ই আমার সুন্দর পুরুষ দেখে ভাল লাগত। ইস্কুল এর ইলেভেন ক্লাসে র একটি
ছেলেকে খুব ভাল লাগত। একদিন একটা প্রেমপত্র লিখে ওকে দিয়ে ও দিলাম। কিন্তু পরের
দিন ভয়ে একটা মেয়ের নাম করে মিত্থার আশ্রয় নিয়ে ওকে বললাম চিঠিটা মেয়েটাই ওকে
দিতে বলেছে। সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়ে ছিলাম।
শুভ্রঃ তুমি কেন ছেলেদের প্রতি আকর্ষন বোধ করছো এটা কি
কখনো তোমাকে ভাবাতো?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ
কিন্তু পরে ভাবতাম ছেলে দেখলে আমার মনে এমন কেন হয় মেয়ে কে দেখলে
হয়না।আমি ইস্কুলে অনেকটা ই একা থাকতাম।কাউকে মনের কথা বলতে ও পারতাম না।মাঝে মাঝে
ভাবতাম আমার এমন কেন হয়। কিন্তু সেক্স এর ধারনা সে সময় ছিলনা। আর আমার এই আচরণ কে যে ‘সমকামিতা’ বলে তা জানতাম না।
শুভ্রঃ আচ্ছা! সমকামী জীবনের তোমার চাওয়া পাওয়া কি?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ একজন এমন স্মার্ট টপ পুরুষ কে খুঁজছি যে
শরীর নয় মন থেকে ভালবাসবে আমার পাশে সর্বদা থাকবে। আর সেই আশাতেই ফেসবুক আইডি
খুলেছি। কিন্তু এখনও মনের মতন মনের মানুষ এর সন্ধান পাই নাই। এমন একজন কে চাই যার
হাত ধরে মাথা উঁচু করে বাঁচাতে চাই সমাজ এর বুকে অধীকার চাই সমপ্রেমি হয়ে বাঁচবার।
শুভ্রঃ বন্ধু এটা তোমাকে বুঝতে হবে ফেসবুক কিন্তু ঠিক
ম্যানজাম নয়। এখানে সমকামীদের চেয়ে বিষমকামী লোকের সংখ্যাই বেশী। বাঙালী সমকামীদের
জীবনের সব থেকে বড় বিষাদ হলো, মন না চাইলেও তাকে বিয়ে করতে হয়। বিয়ে নিয়ে তোমার
পরিকল্পণা কি?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ আমি সমকামি। দুই একবার জোর করে মেয়ে
দের সাথে প্রেম করতে চেয়েছি। আমি দেখতে সুন্দর তাই প্রেমিকার অভাব হইনি। কিন্তু
তাতে সমস্যার সমাধান পাইনি। মন থেকে শারীরিক ভাবে একজন পুরুষ শরীরই আমাকে আকৃষ্ট
করে। তাই কোন মেয়ে কে বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করতে আমি পারব না। আর আমি বুঝেছি
আমি সমকামি।
শুভ্রঃ আচ্ছা আমরা হালকা বিষয়ে যাই। কৈশোরে হস্তমৈথুন
করেনি এমন পুরুষ পৃথিবীতে কেউ জন্মেছে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। তুমিও কি করো?
হস্তমৈথুন কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ
হস্ত মৈথুন আমি সপ্তাহে করি তিন চার বার।এটা করবার পর শরীর তৃপ্ত হয়।তবে
কোন কিছুই বেশি ভাল নয়। তাও মাঝে মাঝে থাকতে পারি না।
শুভ্রঃ জৈবিক চাহিদা এবং মনের চাহিদা কোনটাকে তুমি বেশী
প্রাধান্য দাও?
প্রথম সহবাস আমি বারো বছর বয়সে করেছি।এবং সে কথা আগেই
বলেছি।তাই দ্বিতীয় বার আর বললাম না।সেই বয়সে তেমন কিছু অনুভব করতে পারিনি।কিন্তু
এ টুকু মনে আছে মন্দ লাগেনি। দেখুন
ভাইয়া আমি খুব একটা সেক্স করতে ভালবাসি না।একজন মনের মানুষ চাই।তাই সুযোগ পেলেও
সেক্স এর অফার বেশির ভাগ প্রত্যাখান ই করি। আমি এখনও পর্যন্ত তিন জনের সহিত সেক্স
করছি।
শুভ্রঃ আমি বন্ধুদের মনস্তাত্বিক বুদ্ধির পরিচয় নিতে সবসময়
জিজ্ঞেস করি মা-বাবা জেনে গেলে সেই পরিস্থিতিতে তুমি কি ভূমিকা নেবে। তোমাকেও করছি
প্রশ্নটা।
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ আমার বাবা ২০০০ সনে ইন্তকাল করছেন। মাকে
সেইভাবে জানান হয়নি। কিন্তু জীবনে উপযুক্ত সাথী পেলে নিশ্চয়ই জানাব। জানি মায়ের
মেনে নিতে কষ্ট হবে। কারন একজন সমপ্রেমি না হলে তাদের হৃদয়ে
আবেগ অনুভুতি গুলা কেউই বুঝতে পারে না। হয়তো সঠিক
ভাবে। কিন্তু সত্যি তা তো সত্যই। আর আমি সত্যকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। তাই সময়
আসলে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে একদিন বাসায় জানাব। আশা করি নিজের সন্তানকে মা
বুঝতে পারবেন।
শুভ্রঃ তোমার চিন্তাভাবনা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তোমার মত
যারা সমকামী তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলো।
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ
সমকামী দোস্তদের উদ্দেশ্য বলতে চাই সমাজ এর কাছে মাথা উঁচু করে বাঁচো। ভয়কে জয় করতে শেখো। সমকামিতা কোন অপরাধ নয়, এটি স্বাভাবিক
কামনা। বিজ্ঞান এ কথা
বলে। আর সবাই মিলে এক হয়ে আমরাই পারি সমাজ এর পরিবর্তন করতে। যদি আমরা না এগিয়ে
আসি তো কোনও সমাজ পাল্টাবে না।আশা রাখ আমরা করব জয় নিশ্চয়ই।তবে এ কথা ঠিক
সমকামিতাকে সন্মান করতে হবে। শুধু মাত্র সেক্স নয় সমপ্রেমী হয়ে বাঁচতে শেখো।
শুভ্রঃ চমৎকার কিছু কথা শুনলাম। সমকামীদের জন্য পজেটিভ
চিন্তা ভাবনা করা কিছু লোকের আজ খুব প্রয়োজন। আচ্ছা তোমার স্বপ্নের কোন পুরুষ আছে?
কাকে তোমার খুব ভালো লাগে?
রৌদ্দুর সেনগুপ্তঃ স্বপ্নের পুরুষ তো অনেকেই। কারো চোখ
ভাললাগে কারো মুখ ভাল লাগে কারো আবার শারীরিক গঠন ভাল লাগে। তাই এ ভাবে তো বলা কঠিন।তবে
বাংলা ফ্লিল্ম হিরো দেবকে মন্দ লাগে না।
শুভ্রঃ যদিও দেবের অভিনয় আমার খুব একটা ভালো লাগেনা।
ন্যাকামি বেশী করে। কিন্তু তার ফিগারটা চমৎকার বলা যায়। খুব ম্যানলি না হলেও
আকর্ষনীয়। তার হাবভাবে তাকে আমাদের দলের বলেই মনে হয়। হা হা হা। পছন্দের
ব্যক্তিটিকে নিজের গোত্রের ভাবতে কার না ভালো লাগে। যেহেতু তুমি কোলকাতা থাকো।
দেবের সাথে একদিন তোমার হঠাৎ করে দেখা হয়ে যায় এই আমার শুভ কামনা। ভালো থাকো
রৌদ্দুর সেনগুপ্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন