ভ্যালেন্টাইনস উইথ জিকু- অনামা

ভ্যালেন্টাইন উইথ জিকু - অনামা
 ১.
সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখলাম। মোবাইল এর স্ক্রিনে বড় করে লেখা দেখলাম-

06 : 17 AM
Sun 14-02-2016

তারিখটার দিকে নজর পরতেই স্মৃতির পাতাগুলো খুব দ্রুত উল্টে যেতে লাগলো। স্মৃতি হাতরে চলে গেলাম এক বছর পূর্বে-

১৪.০২.২০১৫ ইং

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।
পুরোটা কক্ষ জুড়ে দেখলাম আলো-আঁধারির খেলা। এখনো ঠিক মতো ভোরের আলো ফোটেনি।
এতো সকালে কখনই আমার ঘুম ভাঙ্গে না। তবে আজ কেন এতো তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভাঙ্গল তা আমি ঠিকই বুঝতে পারেছি। আমার ভেতর একটা উত্তেজনা কাজ করছে।
জিকু আমার সাথে একেবারে লেপ্টে আছে। যেন আমার সাথে মিশে একাকার হয়ে যেতে চাইছে।
ফেব্রুয়ারি মাস চলছে, তাই শীত এখনো পুরোপুরি বিদায় নেয়নি।
জিকুর শরীরের উষ্ণতা উপভোগ করতে লাগলাম।
আর আমার মনের মাঝে বাজতে থাকল Mary Lambert এর গাওয়া গানটি-

She keeps me warm, she keeps me warm"

বেঘোরে ঘুমোচ্ছে জিকু। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে খুব সুন্দর লাগছে। অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ওর নিষ্পাপ মুখের দিকে। দেখে সাধ মিটছে না। মনে হচ্ছে আজীবন এভাবে দেখলেও মনের স্বাধ মিটবে না। কি শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে আমার প্রাণ পাখিটা। দেখতে দেখতে গতকাল করে রাখা প্লানটা মনে পরল। তাই ওর হাতটা আমার ওপর থেকে খুব সাবধানে নিচে নামিয়ে রাখলাম। তারপর ওর চুলে হালকা হাত বুলিয়ে দিলাম। কপালে একটা চুমো খেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম।
প্রতিদিন জিকুই ব্রেকফাস্ট তৈরি করে কিন্তু আজ আমি ব্রেকফাস্ট তৈরি করবো এবং তা করতে হবে জিকু ঘুম থেকে ওঠার আগেই। চমকে দেব জিকুকে। দেখিয়ে দেবো, আমিও কম কিসে?
তাই আর দেরি না করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
যথাশিঘ্র সম্ভব ফ্রেশ হয়ে কিচেন এ চলে এলাম। ফ্রিজ থেকে দুধ নামিয়ে রাখলাম কফির জন্য। আরও তৈরি করবো পরটা আর হালুয়া।

হালুয়া আর কফিতো তৈরি করতে পারলাম কিন্তু পরটা তৈরি করতে যেয়ে পরটার অবস্থা আর আমার অবস্থার মধ্যে কোন পার্থক্য রইলো না।
বুঝতে পারলাম যে, আমার জান পাখিটা একা একা কত কষ্ট করে প্রতিদিন আমার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে। তাই প্রতিজ্ঞা করলাম, এখন থেকে আমি আমার জান পাখিটাকে ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে সাহায্য করবো।
ডাইনিং টেবিল এ পরটা, হালুয়া আর কফি রেখে জিকুকে ডাকতে বেড রুমে এসে দিখি রুমে কেউ নেই। তাই ওয়াশ রুম, রিডিং রুম, বেলকনি সহ বাড়ির কোন যায়গা খুঁজা বাকি রাখলাম না। কিন্তু কোথাও নেই। ছেলেটা কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো নাকি?
তখন মনে হলো, ওকে একটা কল দিলেইতো পারি।
তাই মোবাইলটা আনতে বেডরুম এ আসলাম। এসেই চোখ গেলো বেডের উপর আমার কোশনের পাশে। যেখনে গত রাতে মোবাইলটা রেখেছিলাম।
দেখলাম মোবাইলটা যেখানে রেখেছিলাম সেখানেই আছে তবে আরও একটি বাড়তি জিনিসও চোখে পরল। যেটা গত রাতে ছিলনা ঐখানে।
একটা কাগজের টুকরা, যাকে আমরা চিরকুট বলি।
মোবাইলটাকে ওয়েট পেপারের মতো ব্যাবহার করা হয়েছে। যাতে চিরকুটটা উড়ে কোথাও চলে না যায়।

মোবাইলটা চিরকুটের ওপর থেকে সরিয়ে চিরকুটটা হাতে নিলাম। তাতে লেখাঃ

" আমি একটা জরুরী কাজে বাহিরে যাচ্ছি। ফিরতে একটু দেরি হবে। আজ একটু কষ্ট করে বাহিরে ব্রেকফাস্ট করে নিও। আবার ব্রেকফাস্ট না করে কিন্তু অফিসে চলে যেও না।
ইতি,
_ তোমার জিকু "

লেখাগুলো পড়লাম। হারিয়ে গেলাম ভাবনার জগৎ এ। কাগজটা এখনো আমার হাতে। স্মৃতি হাতরে বর্তমান সময়ের সাথে নিকটবর্তী অতিতের একটা সময়ের সাথে মিল খুঁজে পেলাম। মিলটা হলো- এখন যেমন আমার হাতে একটা কাগজ আছে, তখনো আমার হাতে একটা কাগজ ছিলো।
ডুবে গেলাম গভীর ভাবনায়।

২.

১৩.০২.২০১৫ ইং

কাগজটা হাতে নিয়ে মি. রায়হানের রুমে প্রবেশ করলাম।

মি. রায়হান, আমার বস। খুব ভালো মানুষ। অফিসের কোন কর্মীর সাথে তিনি কোন প্রকার দুরাচার করেছেন এমন কথা কেও বলতে পারবে না। বরং তিনি কর্মীদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করেন এ কথা সকলেই অকপটে স্বীকার করবে। অফিসের সকল কর্মী-ই তার ব্যবহারে সন্তুষ্ট। বিশেষ করে আমি তার উপর একটু বেশী-ই সন্তুষ্ট। কারণ, আমাকে তিনি খুব স্নেহ করেন।
আমাকে দেখে মি. রায়হান মুখে একটা মৃদু হাসি টেনে এনে বললেনঃ

- তারপর, কি খবর মি. নিলয় খন্দকার? দাঁড়িয়ে কেন? সিট ডাউন প্লিজ।
আমি বসলাম না। মুখে একটা বেচারা টাইপের ভাব এনে বসের দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইলাম।

আমি জানি যে এই অভিনয়টা আমি খুব ভালো ভাবে করতে পারি। আমার এই অভিনয় দেখলে পাথরও গলে যায়। এখন বস গলবেন কিনা এটাই দেখার বিষয়। তবে জিকু যখন বেশি রাগ করে তখন ওর রাগ ভাঙাতে এই অভিনয়টা খুব কাজে দেয়।

মি. রায়হান কাগজটা হাতে নিয়ে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। তার মুখে এখন আর সেই হাসির রেখাটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বুঝলাম, অবস্থা বেশি সুবিধা না। মি. রায়হান গলাটা একটু খাদে নামিয়ে ভারিক্কি স্বরে বললেনঃ

_ দেখুন মি. নিলয়, এই সময় যদি আপনার মত একজন দায়িত্ববান, বিচক্ষণ কর্মী ছুটির জন্য এপ্লাই করেন তাহলে অন্যান্য কর্মীরা কি করবে? বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে আপনার মায়ের পাশে থাকা দরকার কিন্তু অফিসে যে কাজ, সেগুলো আমাদের আগামী ২০ তারিখের মধ্যে শেষ করে হেড অফিসে জমা দিতে হবে।
কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,

হুম্মম, একদিনের জন্য যখন ছুটিটা চাচ্ছেন তো দেওয়া যেতেই পারে তবে আগামী ২ মাসে আর কোন ছুটি পাবেন না। রাজি থাকলে বলুন।
আমি তো মনে মনে মহা খুশি। আগামী ২ মাস কেন? যদি বলত আগামী ৪ মাস কোন ছুটি মিলবে না তবুও আমি রাজি হয়ে যেতাম।

কেননা, আগামী কাল ১৪ ই ফেব্রুয়ারি। এমন দিনটা শুধু ভালোবাসার মানুষের জন্যই বরাদ্দকৃত। কোন অফিসের কাজের জন্য নয়। কেন যে বাংলাদেশ সরকার এই দিনটিকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেনা!
সরকার যদি আমাদের উপর এতটুকু সদয় হতো তাহলে কাগজ ভরে এতোগুলো ডাহামিথ্যে রচনা করতে হতো না।
কালকের দিনটা জিকুর সাথে কাটাবো এই কথা কি এপ্লিকেশন এ লিখা যায়? আর লিখলেই কি ছুটি মঞ্জুর করবে?
তাই বাধ্য হয়ে লিখতে হলো-

মা ভিষন আসুস্থ, হসপিটালে ভর্তি আছেন। আমাকে মায়ের সেবা করতে যেতে হবে।
" মাফ করো মা। তোমার ছেলে আজ তোমায় হসপিটালে ভর্তি করে ছাড়ল। "
কথগুলো মনে মনে ভাবছিলাম, এমন সময় বসের কন্ঠের আওয়াজে বাস্তবে ফিরে এলাম।

_ কি হলো মি. নিলয়? আপনি রাজি?
আমি এমন একটা ভাব করলাম যে, আমি আমার মায়ের সেবা করার জন্য সব কিছু করতে রাজি। গলার স্বর যথা সম্ভব নরম করে উদাস কন্ঠে বললামঃ
_ ঠিক আছে, স্যার।
মনের খুশিতে নাচতে নাচতে বসের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
ডেস্কে অনেক ফাইল জমা হয়ে আছে। চেয়ারটা টেনে বসে পরলাম। একটা ফাইল নিয়ে হিসাব করতে শুরু করলাম। কিন্তু কাজ হচ্ছে না কিছুই। বার বার হিসেবে গড়মিল হয়ে যাচ্ছে। আসলে সত্যি কথা বলতে কি, আমার এখন কাজে মন নেই। বার বার শুধু আগামী কালের প্লানগুলো মাথায় ঘুর ঘুর করছিল।
জিকুকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবো? ওকে কিভাবে সারপ্রাইজ দেয়া যায়? কি প্রাইজ পেলে ও খুশি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

৩.

ভাবনার জগৎ থেকে যখন বাস্তবে ফিরে এলাম তখন নিজের অজান্তেই দু-চোখের কোন থেকে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরল।
আমি নিজেই অবাক হলাম। আমি কাঁদছি কেন? আজকের দিনে ও যদি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারে তাহলে আমি কেন ওকে ছেড়ে থাকতে পারবো না?
আবার ভাবলাম, ওকে তো আমি আমার প্লান সম্পর্কে কিছু বলিনি। আমি যে আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি তাহলে ওকে জানাইনি। তাহলে ওর তো কোন দোষ নেই। নিশ্চয় ওর কোন জরুরী কাজ আছে তাই চলেগেছে।
তাই বলে আমার সাথে সময় কাটানোর থেকেও জরুরী কাজ! কী এমন মহৎ কাজ সেটা?
এভাবেই নিজের সাথে নিজের অন্তঃকলহ চলছিল।
তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম অফিসে চলে যাবো। কাজের মধ্যে থাকলে ভালো লাগবে। তাই রেডি হয়ে অফিসে চলে এলাম।
চেয়ারে বসে আছি। কিছুই ভালো লাগছে না। এমন সময় পিয়ন ছেলেটা এটেন্ডেন্স বুক নিয়ে আসল। সাইন করে একটা ফাইল নিলাম। কাজ করছি এমন সময় পিয়ন ছেলেটা আবার আসলো। বললো-

_ স্যার, আপনাকে বড় স্যার ডেকেছেন।
_ ঠিক আছে, যাও। আমি আসছি।
উঠে বসের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। দরজার সামনে দাড়িয়ে বললাম -
_ স্যার আসবো?
বস আমাকে দেখে মৃদু একটা হাসি দিয়ে বলল-
_ হ্যা, আসুন। আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
আমি কক্ষে প্রবেশ করে একটা চেয়ারে বসলাম। বস বলতে শুরু করল-
_ এটেন্ডেন্স বুকে আপনার সাইন দেখে অবাক হলাম। গতকাল ছুটি নিলেন আপনার মায়ের অসুস্থতার জন্য। আবার অফিসেও আসলেন। আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
আগেই বুঝেছিলাম, কি জন্যে ডেকেছে?
তাই জবাব রেডি করেই এসেছি। বলতে শুরু করলাম-

_ মা হস্পিটালে ভর্তি আছে। সেখনে নার্স রয়েছে। মায়ের সেবা-যত্ন তারাই করছে। রাতে গিয়েছিলাম হস্পিটালে। মা এখন একটু সুস্থ আছেন। আর এদিকে অফিসে কত কাজ। আগামী ২০ তারিখের মধ্যে শেষ করে জমা দিতে না পারলে আপনাকে আবার ঝাড়ি শুনতে হবে। সেটা আমার ভালো লাগবে না। তাই অফিসে চলে এলাম।

বসের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আমার ভাষণে মহা খুশি। বস আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল-

_ মি. নিলয়, আপনার মতো বিচক্ষণ কর্মী যতদিন আমাদের অফিসে আছে ততো দিন আমাদের কোম্পানির সুনাম বাড়তেই থাকবে। আমি আপনার উপর খুবি সন্তুষ্ট হয়েছি।
সারা দিন অনেক কাজ করলাম। এখন আর জিকুর ওপর আমার কোন রাগ বা অভিমান কিছুই নেই। তাই অফিস ছুটির পরেই চলে গেলাম বসুন্ধরায়।

৪.

সন্ধ্যা ৭ টা বাজে।
আমার ঘর সাজানো শেষ। তাই বসে বসে " North Sea Texas " মুভিটা দেখতেছি। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। আমি জানি যে, এটা জিকু ছাড়া আর কেউ না। তাই একটা গোলাপ ফুল পেন্টের পেছনের পকেটে গুজে নিয়ে দরজার দিকে ছুটলাম। দরজা খুলতেই দেখলাম আমার ভালবাসার মানুষটিকে। একেবারে ক্লান্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। এক হাতে লাল গোলাপের একটা বিশাল তোড়া আর অন্য হাতে রাপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স। আমার দিকে তাকাতেই আমি ওকে চোখ টিপে দিয়ে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিলাম। ও হেসে ফুলের তোড়াটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। আমি হাত বাড়িয়ে ওর তোড়াটা না ধরে ওর হাত ধরে দিলাম এক ঝটকা টান। তাল সামলাতে না পেরে এসে পরল আমার ওপর। আমিও জরিয়ে ধরলাম ওকে। কিন্তু পতন ঠেকাতে পারলাম না। দুজন-ই পরে গেলাম। জিকুর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা তো আগেই ছুটে গিয়েছিল এবার বক্সটাও ছুটে গেল। আমাদের মতই আছড়ে পরল ফ্লোরে।
জিকু আমার ওপর থেকে উঠতে উঠতে রাগত স্বরে বললঃ

_ এটা কি করলে? তুমি ছবি তুলতে ভালবাসো তাই তোমার জন্য একটা DSLR এনেছিলাম আর সেটা মনে হয় গেল ভেঙ্গে।
আমি গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বললামঃ
_ এদিকে আমার কোমর ভেঙ্গে গেল সেই দিকে তোমার খেয়াল নেই। তুমি আছো তোমার DSLR নিয়ে!

জিকু আরো ক্ষেপে বললঃ
_ তোমার কোমর ভেঙ্গেছে বেশ হয়েছে। DSLR তো আর তোমার ভাগ্যে নেই, এটাই তোমার ভ্যালেন্টাইন এর উপহার।
জিকুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, রাগে চেহারা লাল হয়ে গেছে। তাই বললামঃ

_ আমার সবচেয়ে দামি উপহার তো তুমি। তুমি এসে গেছ এখন আমার আর কিছু চাইনা।
দেখলাম জিকু কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
তখন কলিং বেলের শব্দ শুনে বুঝেছিলাম যে জিকুই এসেছে। তাই পেন্টের পেছনের পকেটে একটা গোলাপ রেখেছিলাম। যাতে দরজার সামনেই ওকে ভ্যালেন্টাইন এর শুভেচ্ছা জানাতে পারি। এখন ফুলটার কথা মনে হতেই ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলাম। চোখ বন্ধ করে পেন্টের পেছনের পকেট থেকে গোলাপ ফুলটা বের করে জিকুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললামঃ

_ Happy valentine's day my dear Ziku.

জিকুর হাসির শব্দ শুনে চোখ খুললাম। ফুলের দিকে চোখ পরতেই চোখ আমার চরগ গাছে পরিণত হলো। ফুলে মাত্র দুইটা পাপড়ি অবশিষ্ট আছে। তাও আবার দুমড়ে-মুচড়ে আছে।
জিকু হাসতে হাসতে আমার হাত থেকে ফুলটা নিলো। হাসলে ওকে খুব সুন্দর লাগে।
ফুলটা হাতে নিয়ে জিকু বললঃ

_ ফুলের এই অবশিষ্ট দুইটা পাপড়ির একটা তুমি আর আরেকটা আমি। কিন্তু কোন পাপড়িটা তুমি আর কোন পাপড়িটা আমি বলতে পারবে? আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলতে লাগল, যে পাপড়িটা বেশি দুমড়ে-মুচড়ে আছে সেটা হলে তুমি। কারন, পরে গিয়ে তুমিই বেশি ব্যথা পেয়েছ। আর যেটা কম দুমড়ে - মুচড়ে আছে সেটা আমি। হা হা হা
আমি জিকুর চোখে চোখ রেখে বললামঃ

- জিকু, আমি তোমাকে বুঝাতে পারব না যে তুমি আমার কি? তুমি আমার কতটা জুরে আছ? তুমি আমার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে দিয়েছ। আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছ আমার জীবন। তুমি আমার জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না সব কিছুতে মিশে আছো। আমি অপূর্ণ ছিলাম, তুমি এসে আমাকে পূর্ণতা দিয়েছ। আমার প্রতিটা কাজে তুমি আমাকে সাহস যুগিয়েছ, আমার পাশে থেকেছ। আমি চাই সারাটা জীবন তুমি এভাবেই আমার পাশে থাকো। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি জিকু। আমি সারা জীবন তোমাকে ভালবাসতে চাই। এক সময় হয়তো আমার ধন-দৌলত ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু আমার মনে তোমার জন্য যে ভালবাসা রয়েছে তা কখনো ফুরাবে না।

কথা দাও আমায় ছেড়ে কখনো চলে যাবে না।
আমার কথা শুনে জিকু কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বললঃ
_ ছেড়ে যাব বলে তোমার হাত ধরি নি। যদি কখনো তোমার ধন-দৌলত ফুরিয়ে যায়। তোমার পাশে কাওকে না পাও। আমাকে তুমি অবশ্যই পাবে। আমি তোমার ধন-দৌলত দেখে তোমাকে ভালবাসি নি।
আমি ওর চোখের জল মুছে দিয়ে বললামঃ

_ I wanna marry you.
Will you marry me?
_ Of course I will.
I can't live without you.

আমি পকেট থেকে বক্সটা বের করে তা থেকে ডায়মন্ড রিংটা নিয়ে ওর বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিলাম। তারপর ওর হাতটা ছেড়ে ওর নাকটা টিপে দিলাম। ওর ঠোটে আলতো একটা কিস করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বেডরুম এর দিকে পা বাড়ালাম।

৫.

ক্লান্ত হয়ে আমি এখন জিকুর ওপরে শুয়ে আছি। এইতো কিছুক্ষণ পূর্বে আমাদের ওপর বয়ে গেল বিশাল এক ঝড়। ঝড়ের উন্মত্ততায় কখনো জিকু আমাকে খামছে ধরেছে আবার কখনোবা আমি ওকে খামছে ধরেছি। এক রত্তি কাপড় ছিলনা কারো গায়ে। যেন এক অপার্থিব সুখে ভাসছিলাম দুজন।
জিকুর পরিচিত কন্ঠে ভাবনায় ছেদ পরল। জিকু বললঃ

_ ফ্রেস হবো চলো।
আমি কোন প্রকর বাক্য ব্যয় না করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলাম। শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে বসলাম দুজন। ভিজিয়ে নিলাম দুজনের ক্লান্ত দেহ। সাবন নিয়ে জিকুর সারা গায়ে মেখে দিলাম আমি। ও মেখে দিল আমার গায়ে।
গোসল শেষ করে রাতের পোশাক পরে নিলাম। তারপর জিকুকে ডিনারের আমন্ত্রণ করলাম। ও হেসে বললঃ

_ তা রান্না কি তুমি করেছ নাকি রেস্টুরেন্ট থেকে আনিয়েছ?
আমি একটু অভিমানের সুরে বললামঃ
_ কেন, আমি বুঝি রান্না করতে পারি না? আজ আমি তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছিলাম। তুমি তো তা দেখতেও পেলেনা, খাবে তো দূরে থাক। সবকিছু ডাইনিং এ সাজিয়ে তোমাকে ডাকতে এসে দেখি তুমি নেই। একটা চিরকুট রেখেই চলে গেছ। আজ সারাদিন তোমার সাথে কাটাবো ভেবে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলাম। তোমাকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবো তাও প্ল্যান করেছিলাম। আর তুমি কি করলে?

আমার কথা শুনে ও লজ্জিত হয়ে বললঃ

_ সরি নিলয়। আসলে সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে রাজিবের কল পেয়ে। ওর বোন হস্পিটালে তখন। আমাকে কল করে বলল অনেক রক্ত লাগবে। রক্ত না পেলে ওর বোনকে বাঁচানো যাবেনা। ও আমাকে যত দ্রুত সম্ভব হস্পিটালে পৌঁছাতে বলল।
দেখলাম তুমি বিছানায় নেই। রান্নাঘর ছাড়া বাকি সব যায়গায় খুঁজলাম। কিন্তু পেলাম না। তুমি যে রান্নাঘর এ যাবে এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। কোথাও তোমাকে না পেয়ে বেডরুম এ চলে এলাম। ভাবলাম তোমাকে কল দেই। কল দিয়ে দেখি মোবাইল বিছানায় রেখে গেছো। এতো সকালে আর কোথায় যেতে পারো তুমি ভাবতে লাগলাম কিন্তু কোন কিছুই মাথায় আসলো না। তাই বাধ্য হয়ে চিরকুট লিখে রেখে গেলাম।
রক্ত না পেলে সুমনের বোন আর বেবিটাকে সত্যিই বাঁচানো যেতো না। আমার রক্ত ওর বোনের রক্তের সাথে ম্যাচ করে। তাই ২ ব্যাগ রক্ত দিয়েছি আমি। একটা মেল বেবি হয়েছে। বেবেটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
তুমি যদি দেখতে...
জিকুকে থামিয়ে দিয়ে ওর হাতে হাত রেখে বললামঃ

_ আচ্ছা জিকু, আমরা কি এই রকম একটা বেবির মালিক হতে পারি না?
_ পারবো না কেন? অবশ্যই পারি।
জিকু কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুখে একটু কাঠিন্য ভাব এনে আবার বলতে শুরু করলঃ
_ আজ তোমাকে কতগুলো কল করেছি দেখেছ?
_ হুম, ১১০ টা।
_ তাহলে রিসিভ করলে না কেন?
_ আসলে আমি মোবাইলটা বাড়িতে ফেলে রেখে গিয়েছিলাম। এসে দেখলাম তুমি কল করেছিলে। কল ব্যাক করে দেখলাম তোমার মোবাইল সুইচড অফ।
_ ওহ, আমার মোবাইল তো এখনও সুইচড অফ। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
মোবাইল বের করে সুইচড অন করতে করতে বলল, আমাদের ভার্সিটির পক্ষ থেকে একটা কনসার্ট অর্গানাইজ করা হয়েছিল। সেখানে গান গাইতে হয়েছে। তখন মোবাইল সুইচড অফ করেছিলাম। কনসার্ট এ যত টাকা আয় হবে তা দিয়ে গরিব মানুষের মাঝে শীতের পোশাক বিলিয়ে দেয়া হবে। কনসার্ট এর জন্যইতো আসতে এতো লেট হলো।
_ ওহ শীট! তুমি আজ কত্তো ভালো ভালো কাজ করেছ। আর আমি কিনা তোমার ওপর রাগ করে বসেছিলাম? আজ তোমাকে নিয়ে আমার গর্ব হচ্ছে। আজ তুমি অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছ।
জিকু ওর পেট এ দুই হাত দিয়ে বললঃ
_ আমার প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে, চলো।

৫.

জিকু বসে আছে চেয়ারে। খাবার সাজানো রয়েছে। জিকু প্লেট নিলো আর আমি লাইটটা অফ করে দিলাম। জিকু চেঁচিয়ে বললঃ

_ আরে কি করছ নিলয়? লাইট অফ করলে কেন? অন্ধকারে ডিনার করবো নাকি?
আমি খুব শান্ত কন্ঠে বললামঃ
_ একটা কাজ বাকী আছে ডিয়ার।
তারপর মোমদানিতে রাখা মোমগুলো জ্বালাতে শুরু করলাম।
জিকু দেখে বললঃ
_ ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করবে?
আমি মাথা ঝেকে বললাম, হুম।
গল্প করতে করতে ডিনার শেষে করলাম। তারপর বেলকনিতে রাখা চেয়ারে গিয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়ার পর জিকুকে বললামঃ
_ তুমি একটু বসো। আমি আসছি।
এক দৌড়ে আলমারি খুলে গিটারটা নিয়ে এলাম।
ও দেখে বললঃ
_ Wow! Such a nice guitar.
_তোমার জন্য।
_ Thanks নিলয়।
_ It's okay. একটা গান গাইবে?
জিকু গিটারটা নিয়ে গাইতে শুরু করলোঃ

What would I do without your smart mouth?
Drawing me in, and kicking me out
You've got my head spinning, no kidding, I can't pin you down.
What's going on in that beautiful mind
I'm on your magical mystery ride
And I'm so dizzy, don't know what hit me, but I'll be alright.
My head's under water
But I'm breathing fine
You're crazy and I'm out of my mind
Cause all me
Loves all of you
Love your curves and all your edges
All your perfect imperfections
Give your all to me
I'll give my all to you........

৬.

১৫. ০২. ২০১৫ ইং

অফিসে বসের সামনের চেয়ারে বসে আছি। বস বলতে শুরু করলেনঃ

_ মি. নিলয় খন্দকার, আপনাকে আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছি।
আপনি আমাদের কোম্পানির একজন কর্মঠ কর্মী। আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপনার ওপর খুব-ই সন্তুষ্ট। বিশেষ করে গতকাল আপনি আমাদের কোম্পানির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা অনেকেই পারেনা। আপনি আমাদের জন্য অনেক করেছেন। তাই আমরাও আপনার জন্য কিছু করতে চাই।
একথা বলে আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল,
আপনার প্রমশন লেটার।
আমি বসের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বসকে ধন্যবাদ দিলাম। খুব আনন্দ লাগছিল কিন্তু তার সামনে প্রকাশ করলাম না। এমন একটা ভাব করলাম যেন এটা আমার প্রাপ্য, এতে খুশি হওয়ার কি আছে?
কাজে মন দিতে পারছি না। বার বার শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরছে, কখন বাড়ী যাবো আর কখন জিকুকে এই খুশির খবরটা দেবো। খবরটা শুনে নিশ্চয় ও খুব খুশি হবে।
খুশির খবর শুনাতে হলে তো মিষ্টি মুখ করাতে হয়। আর মিষ্টান্নর মধ্যে ওর পছন্দের খাবার হলো রসমালাই।
অফিস শেষে রসমালাই নিয়ে বাড়ীতে উপস্থিত হলাম। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে জিকু দরজা খুলে দিলো। জিকু একটা শর্টস পরে আছে। খালি গায়ে ওকে খারাপ লাগছে না। রসমালাই দেখে জিকু খুশি হয়ে জানতে চাইলোঃ

_ রসমালাই এনেছ, তাহলেতো নিশ্চয় কোন খুশির খবর আছে।
_ খুশির খবরটা জানতে চাও?
_ চাইবো না কেন?
_ জানতে চাইলে যে ঘুষ দিতে হবে।
_ তুমি আবার ঘুষ নেয়া শুরু করলে কবে থেকে?
_ এত কিছু জানিনা, ঘুষ দিলে খুশির খবরটা বলবো আর না দিলে বলবো না।
_ ওকে, কত চাও বলো।
_ ৫০০
_ তোমার ডিমান্ড এতো কম! আমি হলে ১০ হাজার টাকা চাইতাম।
_ সরি মিস্টার, আমি আপনার নিকট টাকা চাইনি।
_ তাহলে কি?
_ কিস চেয়েছি। মাত্র ৫০০ টা।
_ পারবো না।
_ তাহলে থাক, খুশির খবর তোমার শুনতে হবে না।
_ ওকে, আমি রাজি। তোমাকে ৫০০ কিস-ই দেবো তবে এত্তোগুলা কিস একসাথে দিতে পারবো না। কিস্তিতে দেবো। প্রতিদিন সকালে ৫ টা করে।
_ তাহলে যে সুদ দিতে হবে।
_ কত পারসেন্ট?
_ ৪০%
_ না, ২০% পাবে।
_ ২০% এ হবেনা। যাও কমিয়ে দিলাম
৩০%।
_ ২৫% চলবে?
_ না, ২০%।
_ ওকে ডান।
_ না, না, না। তুমি চিটিং করছো।
_ আমি কখন চিটিং করলাম? তুমি নিজেই তো ২০% বললে।
_ তুমিওতো ২৫% বললে।
_ আচ্ছা যাও ২৫%। এবার খবরটা বলো।
_ আগে হা করো।
জিকু হা করলো। আমি বাটিটা খুলে ওকে রসমালাই খাইয়ে দিলাম। তারপর বললারঃ
_ আমার প্রোমোশন হয়েছে।

ও খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরলো। কিন্তু আমার হাতে থাকা রসমালাইর বাটি যেন একটু বেশি-ই খুশি হলো। রসমালাইর রসে মাখ-মাখি হয়ে গেল ওর শরীর।
জিকু কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি আন্দাজ করার চেষ্টা করছি ও এখন কি করতে পারে? কিন্তু কিছুই এলোনা মাথায়।
এবার জিকু নিজের শরীর থেকে রসমালাই এর রস নিয়ে আমার মুখে মেখে দিলো। আমি ভাবতেই পারিনি জিকু এই কাজটা করবে।
মেঝের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম, রসমালাই এর বাটিটা পরে আছে। তাতে এখনো অনেক খানি রসমালাই রয়েছে। আমি বাটিটা তুলে তা থেকে রসমালাই নিয়ে জিকুর মুখে-ঠোটে মাখতে লাগলাম। ও বাধা দিলো না। চোখ বন্ধ করে রইলো। আমি ওর ঠোটে ঠোট রাখলাম।
এমন সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেলাম। আর শুনতে পেলামঃ

_এই নিলয়, আর কত ঘুমাবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?