অভিশপ্ত আমি - রূপম শাহ

এক অভিশপ্ত জীবন নিয়ে পথে পথে ঠোকর খেয়ে বেরাচ্ছি গত তিনটা বছর। আমার এক বন্ধু বলেছিল আমি যে জীবনে পা বারিয়েছি সেটা কঠিন একটা পাপের রাস্তা। এখন কিছু না বুঝলেও খুব তাড়াতাড়িই আমি এর ফল পাবো। জানিনা সেদিন আমার ঐ বন্ধুটা আমাকে অভিশাপ করে কথাটা বলেছিল কিনা। আমি নিজেকে সেদিন থেকে বদলে নিতে শুরু করি এরপর নিজেকে চিরদিনের মতো এই পথ থেকে সরিয়ে নেবার ব্রতো করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই। ভালোই চলছিলাম কয়েক বছর।

পড়ালেখা শেষ করে জব নিলাম একটা প্রাইভেট বাংকে। এই জবটাই আমার অতিতে নিয়ে গেল। মনের ঘরের যে যন্ত্রনা শিকল বেঁধে রেখেছিলাম। রবিনকে দেখে সেটা ফটাফট ছিরে গেল। রবিন হালকা পাতলা গড়ন। মধ্যম উচ্চতার শ্যাম বরণ ঘন কোকড়া চুলের প্রেম দেবতা। প্রথম দেখাতেই আমি কামনার আগুনে জ্বলে পুরে ছাই হতে লাগছিলাম। ওর কথার আর হাটার ভঙ্গিটা এতোটাই আকর্ষনীয় ছিল যে কোন সমকামীর পক্ষে সেটা দেখে কামনার আগুনে পুড়ে না উপায় আছে। আমি ওকে খুব সহজেই পেয়েছিলাম কেননা ও ছিল আমার ও জেনারেল ম্যানেজারের সহকারী। আমার প্রতিটা আদেশ ও এতোটা মনযোগ সহকারে করতো যে সেটা শুধু একজন ভালোবাসার মানুষই করে। আমি তার অবুঝ ভালোবাসা না বুঝেই তাকে আমার লালসার শিকার বানিয়ে ফেলি। একদিন রবিনকে একাকি পেয়ে জাপটে ধরি। হয়তো ও আমাকে ভালোবাসতো বলে ও চুপ করে থাকে। আমি ওর নিরবতাকে সম্মতি ভেবে মুহূর্তের মধ্যে আমার কাজ হাসিল করতে লিপ্ত হয়ে যাই।

যখন চরম মুহূর্তে দুজনেই পৌছে গেছি তখনই ধরা পড়ে যাই আমাদের ক্লাকের চোখে। নিজেদের কে সামলানোর আগেই সবার চোখেই পড়ে যাই। মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে যায়। কোথাকার আমি কোথায় চলে যাই সেই সময়টার কথা আর ভাষায় বর্ণনা করতে পারছি না। সেই যে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসলাম এখন আমি কোথায় আছি সেটা বলতেও লজ্জা করে। রবিন কোথায় আছে সে বেঁচে আছে কিনা সেটাও জানা হয়নি। আমি আজ চারটা বছর কারো সাথে কোন যোগাযোগ করিনা। সেই ঘটনার পর থেকে আমি কতবার যে মরতে চেষ্টা করেছি সেটা আমারো হিসাব নেই। যতোবার মরতে গিয়েছি রবিনের নিশ্পাপ মুখ আমাকে মরতে দেয়নি। ওর কাছে ক্ষমা না চেয়ে আমি মরতে পারি না। হয়তো আমার পাপের ফল সে ভোগ করছে।

দুনিয়াতে আমার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। মানুষের পাপের ঘড়া যখন পুর্ণ হয় তখনি এমন ঘটনা ঘটে। আমি পাপ করেছি বলেই আজ আমার এই অবস্থা। দুঃখের বিষয় এটাই যে আমার লালসার শিকার হয়ে একটা নিশ্পাপ মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে গেল। এখন আমি যতোই অনুতপ্ত হইনা কেন যতোই সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাই সেদিনের সেই ঘটনাকে বদলানো সম্ভব নয়। সম্ভব নয় রবিন কে একটা সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার। কেন এই মিথ্যে ভাবনা ভাবছি? কোথায় আছে রবিন? সে কি বেঁচে আছে? বেঁচে থাকলে কি সে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে? আমি কি কোনদিন তার দেখা পাবো?

প্রিয় বন্ধুরা রবিনের পক্ষ হতে তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি জানি রবিন যতোদিন আমাকে ক্ষমা করে না দিবে ততোদিন আমিও স্বাভাবিক হতে পারবো না। যৌনতা মানুষকে মাদকের মতো আক্রান্ত করে কিন্তু আমি সৃষ্টির্কতার কাছে ক্ষমা চেয়েও আবারো সেই পথেই হেটেছি সেই কারনেই হয়তো আমার এতো বড় শাশ্তি পেয়েছি। কিন্তু আমার পাপের ভাগী অন্য কেউ পাবে এটাই আমার বড় শাশ্তি। তোমরা আমাকে দোয়া কর আমি যেন রবিনের কাছে ক্ষমা চেয়ে মরতে পারি। সবাই ভালো থেকো আর একটা অনুরোধ কেউ আমার মতো এমন যৌনতায় পা দিওনা যে অন্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?