ভালোবাসার রঙ - হোসেন মাহমুদ

সাল ১৯৮৮, আগস্ট মাসের ৩১ তারিখ রোজ বুধবার। স্থান, নোয়াখালীর সেনবাগ। 
চারিদিকে থম থমে জলাবদ্ধতায় নীরবতার রজনী, আশে পাশে তাকালে মনে হয় সাগরের মাঝে নিজের অবস্থান। রাস্তাঘাট, বাজার, স্কুল, কলেজ কিংবা খেলার মাঠ, সব পানির নীচে। শরীরে জীবন ধরে রাখার আকুল আকুতি গ্রামের সব প্রাণীর। বিদ্যুৎহীন এই অন্ধকার রাতে প্রসব ব্যথায় কাতর এক পোয়াতি মা। ৪৮ ঘণ্টা জীবন মরণের মাঝখানে দাঁড়ীয়ে জন্ম দিলেন ফুট ফুটে এক পুত্র সন্তান। পুত্র সন্তান অবধি ঠিক আছে, কিন্তু ফুট ফুটে কথাটা বেমানান সেই নবজাতকের জন্য। কারণটা নীচে প্রদত্ত, পাশের বাড়ীর ছখিনার মা বুড়ী হাতে হারিকেন নিয়ে পানি ডিঙ্গিয়ে দেখতে এসেছিলেন সদ্য ভূমিষ্ঠকে। হারিকেনের আলোয় এক নজর দেখেই, বুড়ি ভয়ে দুহাত পিছিয়ে গিয়ে বলে,
“ও মকছদের মা অ্যাই ইগা কিয়া দেখলাম, ইগা কি মানুষের ছাও নাকি কালা গাঁইর ছা বুঝইতাম হারিয়েন না”

বুঝতেই পারছেন কতটা বিদঘুটে কালো ছিল ঐ শিশু। জন্মক্ষণেই মুখে করে নিয়ে এলো ভয়াবহ ৮৮ সনের বন্যা, আর তার উপর কালো কুৎসিত গাত্রবর্ণ। সদ্যজাত শিশুকে দেখে বিদ্যাহীন কৃষক পরিবারের সবাই যখন মুখ থুবড়ে পড়ে, তখন তার জন্মদায়ী মা ভীতর ভীতর রাগে পুড়তে থাকে। অন্যর চোখে শিশুটি যতই নিকৃষ্ট হোক, পাতে দেয়ার অযোগ্য হোক, মায়ের কাছে তার নাড়ী ছেড়া ধনের দাম রাজপুত্রের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাই তো দু কলম জানা মা তার কুৎসিত ছেলের জন্য ইংরেজি নাম দেয় প্রিন্স। যদি ও তিনি প্রিন্সের অর্থ জেনে নাম ঠিক করেননি, ইংরেজি নাম মানে বিশাল কিছু ছিল তার কাছে। অর্থ বুঝত যারা, মানে তার স্কুল কলেজের সহপাঠীরা, এই নামের জাত গুষ্টি ভালো ভাবেই উদ্ধার করেছিল। হর হামেশাই তাদের মুখের একটা বাক্যতে বলি হতে হয়েছে প্রিন্সকে।
“পাতিল তলার মত রঙ তার উপরে নাম তার প্রিন্স”

স্কুল, কলেজে সহপাঠীরা কত মেয়ের সাথে লাইন মারত, কিন্তু তার কপালে কোন মেয়ে জুটল না। কোন মেয়ে ভুলে ও তার দিকে চোখ তুলে দ্বিতীয়বার তাকাতো না। অবশ্য তাতে প্রিন্সের কোন মাথা ব্যথা ছিল না। তার মেয়ে প্রীতির চেয়ে ছেলে প্রীতিটাই বেশী ভালো লাগতো। কিন্তু কথা সেই তো একই, এ রকম ছেলের সাথে যেচে এসে কোন মহা পুরুষ বুক মিলাবে? তাই নিজেকে নিজের ভীতরে সীমাবদ্ধ রেখে পার করে দিল কৈশোরের দিন গুলো। 

স্থানীয় কলেজ থেকে ভালো মার্ক নিয়ে পাশ করে প্রিন্স। তার ইচ্ছে ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু কৃষক বাবার সাদ থাকলে ও সাধ্য ছিল না। দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়র সহায়তায় এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমাল ঢাকা শহরে। ও আপনাদের একটা কথা তো বলাই হয়নি, মানুষ যত কুৎসিত হোক না কেন বিধাতা তাকে কোন না কোন গুণ দিয়েই পৃথিবীতে পাঠায়। যেমন গল্পের পিন্স তুখোড় মেধাবী আর বোনাস হিসাবে ছিল অস্বাভাবিক সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারী। সেই মেধার জোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চান্স পায় পিন্স। নোয়াখালীর এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় হলে একটা সীট ও পেয়ে যায় খুব দ্রুত।

গোঁড়ামি আর রক্ষণশীল গ্রাম্য মানুষ গুলো থেকে দূরে এসে প্রিন্স হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সে শুনেছে ঢাকা শহরের মানুষ গুলো মটেও ওরকম নয়, তারা অন্যর ব্যাপারে নিজেদের নাক গলায় না। আসলে কি তাই?
দেখতে কালো হলে অবহেলা তার জন্য অনিবার্য। এই থিউরিতে অনেকে বিশ্বাসী, অনেকে হয়তো না। বিধাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত সৌন্দর্য দিয়ে অনেকে এক্সটা এডভান্টেজ পেয়ে আসছে সেই সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে। চাকরীর জন্য ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছেন? ওখানে ও সৌন্দর্য প্রীতি, তাই বলে বলছি না সবাই, তবে অনেক অফিসের বস চায় মেধাবী আর কর্মঠর সাথে চাকুরী প্রার্থী সুন্দর, স্মার্ট, প্রেজেন্টেবল হলে প্লাস পয়েন্ট পাবে। তাহলে যে দেখতে কালো বা অসুন্দর, জন্মানোর সময় কি বিধাতা তাকে একটা মাইনাস পয়েন্ট দিয়ে পাঠিয়েছে?
বিয়ে বাড়ীতে সবাই মিলে মজা করছেন, ভিডিও ধারণকারী ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরা সবসময় সুন্দর নারী কিংবা পুরুষের মুখের উপরে বেশী তাক করতে দেখবেন। সেই সুন্দর ছেলে কিংবা সুন্দরী মেয়েটার পাশে বিয়েতে আরও অনেক কালো ছেলে মেয়ে থাকে, হয়তো দায়ে পড়ে এক দুইবার ক্যামেরা বন্ধী হয়েছে সেই সব ফেইস। তারা যখন দেখেছে পাশের জনকে নিয়ে সবার মাথামাথি করছে, তখন তাদের মনের অবস্থা কি হয় একবার ভেবে দেখুন। আর প্রেম ভালোবাসার কথা তো বাদই দিলাম। যার জন্য প্রিন্স এখন অবধি কোন মনের মানুষ খুঁজে পেল না।

এই সভ্য সমাজের তথাকথিত সৌন্দর্য প্রীতি প্রিন্স খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছে। সে জানে তার এই বিশেষ রঙ নিয়ে কোন প্রেমিক জুটবে না তার কপালে। তাই সে ইউনিভার্সিটির সমকামী বন্ধুদের সাথে কোথাও বেড়াতে গেলে সবার পিছনে বসত। যেমন প্রিন্স কোন পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সাথে। পাশ দিয়ে একটা হ্যান্ড-সাম ছেলে হেঁটে যাচ্ছে, একজন বলল, দেখ দেখ ছেলেটা কি সুন্দর। আরেকজন বলল, ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। অন্যজন তার কথা মাটিতে পড়ার আগে বলে, দূর সে আমার দিকে তাকিয়েছিল। এই নিয়ে তর্ক বেধে যায়। তৃতীয় একজন বলল, ছেলেটা আমাদের দিকে নয় প্রিন্সের দিকে তাকিয়েছিল, শত হোক সে তো রাজপুত্র। তার কথা শুনে সবাই হা হা করে হেঁসে উঠে। পিছনে বসে থাকা প্রিন্স মন খারাপ করে বলে, দেখ আমি জানি সে আমার দিকে তাকায়নি। তোদের মত সুন্দর ছেলে রেখে আমার দিকে তাকানোর প্রশ্নই আসে না। আড্ডা থেকে মন খারাপ করে উঠে যায় প্রিন্স। রাতে ঘুমোতে গিয়ে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে বিধাতার কাছে প্রশ্ন করে, আমার কি দোষ তুমিই তো বানিয়েছ কালো। কেন মানুষের মুখের কটাক্ষের প্রধান হাতিয়ার আমি? প্রিন্স কোন দিন ও তার প্রশ্নের জবাব পায়নি বিধাতার কাছ থেকে। তাই সে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা ছেঁড়ে দিয়ে হল আর ক্লাস নিয়ে দিন কাটাতে থাকে। কিন্তু মানুষ বলে কথা, শরীর না হয় কালো মনটা তো আর কালো নয়, যে অন্ধ মন, প্রেম ভালোবাসার দার দারে না। হুম তার সেই সাদা মন নিয়ে জেনে না জেনে প্রেমে ও পড়েছে অনেকবার। দুটি ঘটনা ছোট করে গল্পে তূলে ধরা যাক।

ঘটনা-১
মোবাইল ফেসবুক ব্যাবহার করে পিন্সের একজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়। তার নাম রতন। ঢাকা কলেজে বোটানি তে থার্ড ইয়ারে পড়ছে। প্রথম দিন থেকেই প্রিন্স তাকে বার বার বলেছে সে দেখতে অনেক কালো। তাই তার কপালে সমপ্রেমের কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এই ছেলে নাছোড় বান্দা সে বলে আমি ফর্সা, তাই আমি পছন্দ করি কালো। তুমি কালো হও আর যাই হও তোমাকে আমার ভালো লেগেছে তাই ভালোবাসি তোমাকে। তার মিষ্ট কথায় পিন্সের চিড়া ভিজে গেল। অবশেষে টি.এস.সি তে দুজনে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলো, দেখা হল। রতন দেখতে সত্যি সুন্দর। প্রিন্স মনে মনে ভাবল, যাক এত দিনে আমার একটা থিতে হল। হাজারো খারাপ মানুষের ভিড়ে এখনো ভালো মানুষের অবস্থান তাহলে আছে। ভালো ভালোই তার থেকে বিদায় নিয়ে হলে ফিরল পিন্স। রাতে রতনকে ফোন দিয়ে বার বার টাই করে, সে ফোন ধরে না। শেষে একটা টেক্সট এলো রতনের কাছ থেকে।
“বলি কালো হবার ও তো একটা জাত আছে নাকি? এত কালো হবে ভাবিনী। আর বাসায় এসে চিন্তা করে দেখলাম তোমার সাথে আমাকে যায় না। তাই বিদায়” 

ঘটনা-২
প্রিন্সের রুমমেট তানভীর, তার বাল্য বন্ধু জহির ইতালিতে থাকত। রুমে থাকা অবস্থায় প্রিন্স দুই বন্ধুর মোবাইল কথোপকথন সবসময় শুনত। এক দিন তানভীর মোবাইল ভুলে বাসায় ফেলে বাহীরে চলে যায়। এ দিকে জহির বার বার কল করে যাচ্ছে। প্রিন্স বাধ্য হয়ে ফোন পিক করে তাকে জানালো, তানভীর বাহীরে। তখন তার সাথে পরিচয় হয় জহিরের। মিনিট দুই কথা চলে তাদের। এরই মাঝে জহিরের প্রিন্সের কণ্ঠ ভীষণ ভালো লেগে যায়। তাই মাঝে মধ্যে তানভীরের সাথে কথা বলার সময় প্রিন্সের সাথে ও কথা হত। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব। জহিরের অনুরোধে প্রিন্স তার মোবাইল নাম্বার দেয় তাকে। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয় তাদের সম্পর্ক। তানভীর হল ছেড়ে তাদের কাঁটাবনের বাসায় উঠে যায়, তারপর ও প্রিন্স আর জহিরের সম্পর্ক আগের মতই থাকে। রতন প্রিন্সের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার পর প্রিন্স প্রতিজ্ঞা করেছিল। আর কারো প্রেমে পড়বে না। প্রেম ভালোবাসা সবার জন্য নয়। সে হল মহুয়া ফুল, যেটা কোন দেবতার পূজায় লাগে না। কিন্তু জহিরের সাথে কথা বলে সে তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেনি। পিন্স আবার প্রেমে পড়ে। নচিকেতার গানটার মত, “একটা হৃদয় একবার নয় বারবার প্রেমে পড়ে”
বছর খানিক পরে জহির দেশে ফীরে আসে। প্রিন্স ইতিমধ্যে অনার্স শেষ করে ফেলে। মাস্টার্স এ ভর্তি হয়ে সে একটা পার্ট টাইম চাকরী করছে মহাখালীর এক কল সেন্টারে। হল ছেঁড়ে সে এখন ফার্মগেটের রাজাবাজারের এক মেসে উঠেছে। জহির ঢাকা পৌঁছে পিন্সের সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠে। প্রিন্স তাকে সেজান পয়েন্টের সামনে আসতে বলে।
প্রিন্স মাহবুব প্লাজা আর সেজান পয়েন্টের মাঝের গলিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে জহিরের জন্য। প্রিন্স জহিরকে আগে দেখেছে তানভীর আর সে যখন দেশে ছিল তখনকার একটা ছবিতে। কিন্তু জহির প্রিন্সকে দেখেনি। তাই প্রিন্সকে জিজ্ঞাস করে নিলো, কি পরে আছো তুমি? প্রিন্স জানালো সে একটা কালো টি-শার্ট আর ব্লু জিন্স পরে আছে। আধা ঘণ্টা দাঁড়ীয়ে থেকে জহিরের মোবাইলে কল দিল প্রিন্স। জহির ফোন ধরে না। প্রিন্স ভাবছে হয়তো সে ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেছে। আরও ঘণ্টা খানিক অপেক্ষা করে আবার কল করল জহিরকে। এইবার তার মোবাইল বন্ধ।

প্রিন্স বুঝতে পারছে সে আবার ও প্রতারিত হয়েছে। তার গায়ের রঙ এ সে বোধহয় ইতস্তত বোধ করে না দেখা করেই ফালিয়ে গেছে। প্রিন্স আবার ভাবতে থাকে কত বোকাই না সে, খুব সহজে মানুষকে বিশ্বাস করে আর ঠকে। অথচ এই জহির তাকে অনেক বার বলছে, বিদেশীদের সাদা চামড়া তার অসহ্য লাগে। তার কালো ভালো লাগে। পিন্স বুঝতে পারে, অনেক সুন্দর মানুষের মন পাতিল-তলার চেয়ে ও কালো। পিন্সের গায়ের রঙ অনেক কালো সে তাকে বার বার বলেছে। তারপর ও সে সম্পর্কে জোড়াল। আর আজ তাকে দেখে ফালিয়ে গেল। প্রিন্স ভাবতে থাকে সম্পর্ক থাকবে না থাকবে সেইটা পরের ব্যাপার, একজন মানুষ এতক্ষণ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য, বিন্দু মাত্র মনুষ্যত্ব যদি তার কাছে থাকত, তাহলে না দেখা করে পালাত না। আসলে তথাকথিত অনেক সুন্দর মানুষেরই ভিতরটা ভীষণ অসুন্দর। কিন্তু আফসোস তাদের সহজে চেনার উপায় মানুষের অজানা।

ঐ দিন থেকে সে রীতিমত কসম কেটে প্রতিজ্ঞা করল, সে জীবনে ও আর কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবে না। আসলে কি তাই? মানুষ কি পারে তার সব প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে। হুমায়ূন স্যার বলেছিলেন, “মানুষ প্রতিজ্ঞা করে প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গার জন্য”
প্রিন্স মাস্টার্স শেষ করে সুন্দর ভয়েসের সুবাদে বাংলালিংক এর কাস্টমার কেয়ারে চাকরী পেয়ে যায়। সে এখন আগের মত সহজে কাউকে বিশ্বাস করা থেকে বিরত। তাই চাকরী আর পরিবারের মধ্যে তার জগতটা সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতা বেশী দিন ধরে রাখতে পারেনি। ২০১১ এর শেষের দিকের কথা।
এক কাস্টমার বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে। ফোনটা পিক করে পিন্সের সহকর্মী ইভা। ভদ্রলোক ফোন ধরেই ইভাকে অভদ্র ভাষায় যা ইচ্ছে তাই বলল। ইভা কিছুতেই তাকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। তার নাকি মোবাইল ব্যালেন্স বেশী কাটা হয়। এর আগে ও অনেক বার কমপ্লিন করেছে। কিন্তু তার সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি। তাই আজকে সে অতিরিক্ত গরম। যদি তার হাতে একটা এটম বোম থাকত তাহলে সেইটা কোন হিরোশিমায় না মেরে বাংলালিংক এর ভবনে মারত। ইভা আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে কলটা প্রিন্সের কাছে টান্সফার করে। কারণ সবাই জানে প্রিন্সের সুমিষ্ট কণ্ঠের যাদু দিয়ে যে কোন মানুষকে বশে আনতে মিনিট খানিক লাগে। প্রিন্স কল ধরে বলল,
-বাংলালিংক কাস্টমার কেয়ার থেকে প্রিন্স বলছি, আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?
কাস্টমার এইবার তার মুখে একটা গালি ঠিক করে সবে মুখ খুলবে, হঠাৎ করে তার রাগের জ্বলত শিখা নিবে গেল। ৫ মিনিটের মধ্যে প্রিন্স কাস্টমার কে বুঝিয়ে কলা দেখিয়ে লাইন কেটে দেয়। কিন্তু ঐ দিন লাইন কাটলে ও সেই কাস্টমার তার পিছু ছাড়েনি। সময় অসময় কাস্টমার কেয়ারে কল করে প্রিন্সের সাথে খোস গল্প করতে চায়। প্রিন্স প্রথম থেকেই তাকে অবহেলা করে আসছে। কিন্তু প্রতিদিন ফোন করে তার কাজের ১২টা বাজাচ্ছে দেখে একদিন নিজের মোবাইল থেকে তাকে কল করে বলল,
-ঐ মিয়া আপনার সমস্যা কি?
-আমার কোন সমস্যা নাই।
-তাহলে সময় অসময় অকাজে ফোন করেন কেন?
-আপনার কণ্ঠ আমার ভীষণ ভালো লাগে।
-তো আমি কি করতে পারি আপনার জন্য?
-কিছু না, এই যে এখন যেমন কথা বলছেন, এই ভাবে রোজ কথা বললেই চলবে? 
-মাথা খারাপ নাকি?
-হুম ঠকই ধরেছেন, অনেকটাই সে রকম।
প্রথম দিন প্রিন্স তাকে যতটা খ্যাত মনে করেছে সে ততটা খ্যাত নয়। ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে কথা বলে, সাথে কবি সাহিত্যর ছোঁয়া ও আছে।
প্রিন্সের মোবাইল নাম্বার পেয়ে লোকটা আকাশের চাঁদ হাতে পেল। রাত নেই, দিন নেই প্রিন্সের মুণ্ডু ভেঙ্গে একাকার। কথায় কথায় জানতে পারল তার নাম ফারহান। দুবছর যাবত ব্যবসা করছে ঢাকাতে। পিন্স পাগল সামলানোর জন্য তাকে বন্ধুত্বের অপার দেয়। সে অকপটে তা কবুল করে নেয়। ঐ বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে রাতে একবার কলে কথা বলতে হয় প্রিন্সকে। ছয়মাস দুজন দুজনকে ফোন জানে। কিন্তু দেখা করার চিন্তা ও করেনি প্রিন্স। এক পর্যায়ে পিন্স বুঝতে পারে ফারহান তার মাঝে জায়গা করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। তার আগের দুটো অভিজ্ঞতার কথা মনে করে সে ফারহান কে বুঝিয়ে বলল, তার সাথে কথা বন্ধ করতে। কিন্তু ফারহান নাছোড় বান্দা, কথা না বলে থাকতে পারে না। অবশ্য প্রিন্সের ও একই দশা। প্রিন্স বুঝতে পারে ফারহান তার কাছে কি চায়, কিংবা তাদের সম্পর্কটা কোন দিকে মোড় নিতে পারে। তাই একদিন প্রিন্স ফারহানকে যেচে এসে তার অতীতের কষ্টের কথামালা শোনায়, ফারহান গম্ভীর হয়ে তাকে জানায়, দুনিয়ার সব মানুষ সমান নয়। তবে হ্যাঁ সে নিজে ও দেখতে ফর্সা, মাঝারী ধরনের ২৮ বছরের যুবক। তবে তার মাঝে বর্ণ নিয়ে কোন চুলকানি নেই। তার কাছে মানুষ শুধু মানুষ। তার কথা শুনে প্রিন্স নিজেকে আরও সতর্ক করে দেয়, আগের মত আবার ভুল করতে যাচ্ছে সে। তাই ফারহানকে অনেক কটু কথা বলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে পিন্স। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না। ফারহান আগের মতই তার সাথে কথা বলে যায়। একদিন প্রিন্স খুব শান্ত ভাবেই তার সাথে আলোচনা করে বুঝাতে চেষ্টা করল, 
-দেখ ফারহান, ইচ্ছে করলেই আমরা যা চাই তা করতে পারি না। 
-মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছুই করতে পারে?
-আমি তোমার সাথে তর্ক করতে চাই না। আমি শুধু তোমাকে বুঝাতে চাই, তুমি আমাকে বিরক্ত না করে তোমার মত কাউকে খুঁজে নাও। আমি কোন দিন ও তোমার সাথে দেখা করব না। সাদা চামড়ার প্রতি আমার অনেক রাগ বুঝলে, কারণ সাদা চামড়ার মানুষ রূপী কিছু পশুকে চিনতাম, তারা আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছে, রঙ সুন্দর হলেই মন সুন্দর হয় না।
-প্রিন্স আমি তোমার কথা অস্বীকার করছি না, সব সাদা চামড়ার মানুষ কিন্তু খারাপ নয়। শুধু সেই ভালো মানুষ গুলোকে খুঁজে নিতে হয়।
-দুঃখিত মশাই। আমার কোন সখ নাই কাউকে খোঁজার।
-প্রিন্স তোমাকে কিছু কথা বলি রাগ করবে না, ছেলে বেলা থেকে তোমার গায়ের রঙ নিয়ে তুমি অসন্তুষ্ট ছিলে। তাই ফর্সা মানুষদের তুমি অযাচিত ভাবেই ঘৃণা করতে। আর তোমার সেই ঘৃণাকে তেলে বেগুন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল, রতন আর জহির। প্রিন্স তুমি উচ্চশিক্ষিত একটা ছেলে বাস্তব সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা কর, তোমার জীবনে একটা দিন ও কি ছিল, যে দিন তুমি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলে? একদিনের জন্য ও কি নিজের কালো রঙ মেনে নিয়ে নিজেকে ভালবেসেছিলে? একটা দিনের জন্যও কি নিজেকে সম্মানের আসনে বসিয়েছিলে? যে নিজেকে ভালোবাসে না, যে নিজেকে সম্মান করতে জানে না, সে কি ভাবে অন্যর ভালোবাসা প্রত্যাশা করে?

প্রিন্স কথা গুলো ভাবতে লাগল, আসলে ও তাই। সে কোন দিন ও নিজেকে নিয়ে সুখী ছিল না। তাই বোধহয় সুখ নামের পাখীটা তার জীবনে ধরা দেয়নি। নিজেকে অন্যর কাছে ছোট করা থেকে উদ্ধার করতে মাথার মধ্যে কিছু যুক্তি ঠিক করে আবার উত্তর দিল ফারহান কে? 
-ফারহান, আমি ও তোমার কথা অস্বীকার করছি না। হ্যাঁ হয়তো তুমি রাইট, আচ্ছা তুমি কি আমাকে একজন স্মার্ট, হ্যান্ড-সাম মানুষ দেখাতে পারবে, যে নিজেকে নিয়ে বিন্দু মাত্র অহংকার মনে পুষে রাখে না? যে কোন দিন একটি বারের জন্য ও ভাবেনি, সে আট দশ জন থেকে উন্নত প্রজাতির কেউ একজন। হয়তো হাতে গোনা দু একজন ভিন্ন হতে পারে, তারা হয়তো মানুষের ঊর্ধ্বে। তা না হলে পৃথিবীর সব মানুষই কম বেশী সুন্দরের পূজারী।
-প্রিন্স, তোমার কথা পুরোপুরি মিথ্যে নয় হয়তো, কিন্তু তাই বলে সবাইকে একই ছাঁচে ফেলে নিজস্ব রঙে রাঙানো কি ঠিক? আগে তুমি নিজেকে শূদ্রাও পরে অন্যকে জাজমেন্ট কর। তুমি আগে নিজেকে মেনে নাও তুমি যা তাতেই হ্যাপি। দেখবে তুমি আবার মানুষকে বিশ্বাস করতে পারবে। দেখবে তোমার জীবনে একজন আসবে যে তোমার ভিতরের সব কষ্ট নিজের করে তোমাকে হাল্কা করে দিবে। কালো যদি না থাকত তাহলে মানুষ সুন্দরের মর্ম বুঝত না। কালো মটেও কুৎসিত নয়, দেখ কবি কি বলেছেন, 
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দাতের কালি দিয়েই কেতাব কোরাণ লেখি| 
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;
চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়|

প্রিন্স কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবতে থাকে ফারহানের কথা গুলো, তারপর বলে, 
-হয়েছে হয়েছে, মৃত জসীমউদ্দিন সাহেব কে নকশী কাঁথার মাঠ থেকে এই ঢাকা শহরে টেনে না আনলে ও চলবে। আর সত্যি কথা বলতে কি, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও সভ্য আধুনিক মানুষগুলো কম বেশী বর্ণবাদে বিশ্বাসী, যদি সবাই নেলসন ম্যান্ডেলার বর্ণবাদে বিপক্ষের কথা গুলো বুঝতে পারত, তাহলে কালো সাদার জন্য বিশ্বের কিছু মানুষ এখনো প্রাণ হারাত না। 
ঐ দিনের পর থেকে প্রিন্স অনেকখানি বদলে যেতে লাগল, সে নিজেকে একসেপ্ট করতে শিখল, সে কালো, সে যা আছে তাই ভালো। সে সমকামী সেটাও ও মেনে নিলো। এখন আর আগের মত তার মন খারাপ হয় না। এ দিকে ফারহানের সাথে সম্পর্কটা ও জমে গেল। কিন্তু দেখা করাতে প্রিন্সের যত আপত্তি। ফারহান হাজার বার বলেছে দেখা করার জন্য, কিন্তু প্রিন্স ঐ একই কবিতা পড়ে দিয়েছে। দেখা সে করবে না। 

দুই বছর হয়ে গেল তাদের বন্ধুত্ব হোক আর ভালোবাসা হোক এখনো টিকে আছে। এক রাতে মোবাইলে কথা বলছে ফারহান। প্রিন্স তার বাসায় শুয়ে আর ফারহান তাদের ডুপ্লেক্স বাড়ীর দোতলার সিঁড়িতে হাঁটতে হাঁটতে। হঠাৎ করে পা মোচড় খেয়ে পিছলে পড়ে যায় ফারহান। এ দিকে প্রিন্স হ্যালো হ্যালো করছে, কোন কথা নাই। প্রিন্স বুঝতে পারে ফারহানের কোন প্রবলেম হয়েছে, কিন্তু সেইটা কি বুঝতে পারছে না। বার বার কল কেটে, কল করছে। কেউ ধরছে না। সে কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না। ফারহানের সাথে দেখা করার ইচ্ছে ছিল না বিধায় তার বাসার ঠিকানাটা কোন দিন ও জানতে চায়নি প্রিন্স। বারান্দায় আর ঘরে পায়চারি করতে লাগল, রাত সাড়ে চারটার দিকে প্রিন্সের মোবাইলে কল দিতেই কে যেন মোবাইল ধরল,
-হ্যালো ফারহান। 
-ফারহান ভাইজান তো হাসপাতালে।
-কি হয়েছে তার, আপনি কে?
-আমি হেগো বাড়িত কাম করি।
-ফারহানের কি হয়েছে সে কোন হসপিটালে আছে? 
-ভাইজান রাইতের বেলা কার লগে কতা কইতে গিয়ে ঠেং পিছলাইয়া পইরা গেছে। হেয় অখন সেন্ট্রাল হসপিটালে আছে।
প্রিন্স বুঝতে পারছে না কি করবে? এই ভোর রাতে হসপিটালে যাবে নাকি সকাল বেলায়?
মনের সাথে যুদ্ধ করে সে সিদ্ধান্ত নিলো এখন নয় রাতে হয়তো তার পরিবারের সবাই আছে ওখানে এ অবস্থায় গেলে তার জন্য অস্বস্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সকাল ১০টা নাগাদ হাতে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে সেন্ট্রাল হসপিটালে আসে প্রিন্স।

ফারহান চোখ বন্ধ করে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। তার মা তার পাশেই বসে আছে। উনার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে উনি অনেক কেঁদেছেন। প্রিন্স ফারহানকে যত টা সুন্দর মনে করেছিল ফারহান তার থেকে কয়েক গুন বেশী সুন্দর। মনে হচ্ছে সাদা বিছানায় ফর্সা এক দেবদূত শুয়ে আছে। প্রিন্স কেবিনের এক কোনে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়ীয়ে আছে। ফারহানের মা তাকে আস্তে করে ডেকে তুলল,
-ফারহান তোর সাথে এক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছেন।
ফারহান চোখ খুলে প্রিন্সের দিকে তাকায়। প্রিন্স কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে যায়, আবেগে সে বাকযুদ্ধ হয়ে যায়। ফারহান মুখে এক চিলতে হাঁসি এনে চোখের ইশারায় তাকে বসতে বলে। আর সে যে প্রিন্স, এক নিমিষে ফারহান বুঝতে পারল। প্রিন্স ভাবছে, এই দেবদূতের সাথে সে সম্পূর্ণ রূপে বেমানান। আর তাকে দেখে আগের দুজনের মত ফারহান ও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিবে। তাতে প্রিন্সের কিচ্ছু যায় আসে না। সে এখন নিজেকে ভালোবাসে, সে জানে মানুষের সৌন্দর্য গায়ের রঙে নয়, তার ব্যক্তিত্বে আর মনুষ্যত্বে। ফারহান মাকে বলে,
-মা উনার সাথে আমার প্রাইভেট কিছু কথা আছে। যদি কিছু মনে না কর তুমি কি কিছুক্ষণের জন্য বাহীরে যাবে?
ফারহানের মা কিছু মনে না করে বলে,
-শিউর, তোরা কথা বল আমি বাহীরে থেকে হেঁটে আসি।
ফারহানের মা কেবিন থেকে বের হওয়ার আগে প্রিন্সকে বলে,
-একি বাবা তুমি দাঁড়ীয়ে কেন? চেয়ারটা টেনে বস।
ফারহানের মা চলে যাওয়ার পর, দুজনের কোন কথা নেই। শুধু প্রিন্স সাথে করে আনা ফুল গুলো ফারহানের দিকে বাড়ীয়ে দিল, বিনিময়ে ফারহান তাকে থ্যাংকস বলে।
ফারহান প্রথম নীরবতা ভেঙ্গে মুখ খুলে,
-কেমন ছিলে?
-জানি না।
-কেন জানো না?
-কি জন্য যে জানি না তাও ও জানি না।
-প্রিন্স তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এখন নিজেকে ভালবাসতে শিখেছ। তোমার মাঝে একটা আত্মবিশ্বাসের আবাস দেখতে পাচ্ছি। আমি কি রাইট? 
-জানোই যখন, তখন জিজ্ঞাস করছ কেন?
-তোমাকে ইজি করতে। কারণ আমাকে দেখে তুমি একটা শঙ্কায় আছো, আমি তোমাকে একসেপ্ট করি কি না করি। এম অ্যাই রাইট?
-জানোই যখন তখন প্রশ্ন করে বিব্রত করছ কেন?
-ইচ্ছে করে। গত দুইবছর সময় লেগেছে তোমাকে দেখতে। প্রিন্স তুমি কি জানো তুমি দেখতে সত্যি অনেক সুন্দর।
প্রিন্সের চোখে কোণে পানি জমে গেল ফারহানের কথা শুনে। তার জীবনে এই প্রথম কেউ তাকে সুন্দর বলেছে সেইটা কটাক্ষ করে নয়। প্রিন্স বলে,
-আর কিছু?
-হুম আরও অনেক কিছু, ওত দূরে কেন? কাছে এসে বস।
প্রিন্স দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে ফারহানের কাছ ঘেঁষে বসে। ফারহান তার একটা হাত দিয়ে প্রিন্সের একটা হাত বুকে চেপে ধরে বলে,
-প্রিন্স তোমাকে দেখার পর ও আমি তোমাকে ঠিক আগের মতই ভালোবাসি। তোমার রঙ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আমি তোমাকে ভালবেসেছি না দেখেই। আর তোমাকে তোমার জন্যই ভালবাসতে চাই। তুমি যা আছ, তার জন্যই ভালবাসতে চাই। একদিনের জন্য নয়, যুগ যুগ ধরে ভালোবেসে ও আমি ক্লান্ত হব না প্রিন্স। অ্যাই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইয়উ।

ফারহানের কথা শুনে আবেগে প্রিন্স নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। ঝাঁপিয়ে পড়ে ফারহানের বুকের উপরে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁপে উঠে পিন্সের বুক। কাল সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ফারহান বাম হাতে প্রচণ্ড ব্যথা পায়। হাতটা চাদরে ডাকা, তাই প্রিন্স দেখতে পায়নি। প্রিন্স জড়িয়ে ধরাতে ফারহান ব্যথা পাচ্ছে তারপরে ঐ ব্যথা নিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে প্রিন্সকে। কারণ ফারহান আগেই বলেছে তার সমস্ত ব্যথা সে নিজের করে নিবে।

অবশেষে প্রিন্স খুঁজে পেল তার সত্যিকারের ভালোবাসার রঙ। ফারহান তার সারা জীবন রাঙিয়ে রাখবে তাকে রঙধনুর সাতরঙে। সত্যিকার প্রেমিক কখনো রঙ নিয়ে ভালোবাসার বাণিজ্য করে না। ভালোবাসা তো স্রেফ ভালোবাসাই হয়, ওতে কালো আর সাদার তফাৎ খুঁজতে যাওয়া কোন সত্যিকার প্রেমিকের কর্ম নয়।

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?