সম্পর্কের উল্টোপিঠ - একলা পথিক

রৌদ্রজ্জ্বল তপ্ত দুপুর। মানুষের উপর সূর্য্যি মামার যেন বেজায় রাগ তাই তিনি অভিশাপের চিতায় পোড়াচ্ছেন সারা শহরবাসীকে। সাথে বোনাস রাস্তার ভয়ানক ট্র্যাফিকজ্যাম আর গাড়ির হর্নের প্যাঁ-পু শব্দ। অবস্থাটা এমন যেন গাড়িগুলি সব অবরোধে নেমেছে। ঘড়ির কাঁটা ঠিকই সামনে দৌড়ে যায় কিন্তু যানবাহনগুলো সেই রাস্তা কামড়েই পড়ে আছে। এরকম জ্যামে বন্দি উত্তরাগামী একটা বাসের পাশাপাশি সিটে বসে অমি এবং তাসিফ। অমি বেশ উৎকণ্ঠিত।চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। ওকে তিনটার মধ্যেই তাসিফ’কে নিয়ে উত্তরায় জারিফের বাসায় পৌঁছানোর কথা। অথচ সাড়ে তিন’টা বাজতে চললো ওরা
এখনো অর্ধেক রাস্তাও পেরোতে পারেনি। জারিফের ওখানে অমি’র আরো দুই বন্ধু ওদের জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে। আজ ওরা সবাই মিলে জারিফের বাসাতে একটা ‘প্রাইভেট ইন্টিমেট পার্টি’র আয়োজন করেছে। ওরা চার বন্ধু মাসে অন্তত একবার এমন গেট টুগ্যাদার করে। যখন যার বাসা ফাঁকা থাকে সেখানে গিয়ে দিনভর আড্ডা হইহুল্লোড় আর ড্রিংকস করে কাটায়। পাশাপাশি ওদের কারো পূর্বপরিচিত কিংবা একেবারে নতুন কোন সুদর্শন যুবাকে এনে তার সাথে যৌনখেলায় লিপ্ত হয়। এটা ওদের বেশ পুরনো চর্চা। আর প্রতিবারই ওদের চারবন্ধুর মধ্যে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হয় এমন কোন পার্টনার ম্যানেজ করা যে একইসময়ে ওদের চারজনের’ই শয্যাসঙ্গী হতে রাজি। এ পর্বে এই গুরুদায়িত্ব পড়েছে অমি’র উপর। আর তাই অমি তাসিফ’কে নিয়ে জারিফের বাসার উদ্দেশ্যেই রওয়ানা হয়েছে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল কিন্তু পথের দুর্বিষহ জ্যাম সব হিসাবনিকাশ ওলটপালট করে দিয়েছে।
....................................

~ কিরে অমি...তুই কতদূর...?
_ আর বলিস না রে দোস্ত...এক ঘণ্টার উপর হইলো গাড়ি ধানমণ্ডি ৩২নম্বরের সিগন্যালে স্থির দাড়াইয়া আছে। হালার…কোন বিদেশী মন্ত্রী নাকি এহান দিয়া যাইবো তার লাইগা সব রাস্তা ব্লকড কইরা রাখছে পুলিশে...।
~ ধুররর...তোরে দিয়ে কিচ্ছু হবে না...তোর বেলাতেই যতসব গণ্ডগোল বাঁধে...মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো...!
_ ঐ হালা...আমি কি আগে থেইকা জানতাম যে এমন হবে...জানলে তো ভিন্ন রাস্তা দিয়াই যাইতাম...!
~ তুই চুপ কর...অন্যকেউ আনলে ঠিকই মজা মাইরা খাইতে পারো...আর নিজের বেলায় হাজারো অজুহাত...তোরে আমি হাড়েহাড়ে চিনি...!
_ হাহাহা...রাগ করিস না দোস্ত...এইতো জ্যাম ছাড়লো বলে...ছাড়লেই গাড়ি টান দিবে...আর একটু সবুর কর...সবুরে মেওয়া ফলে জানিস না...হাহাহা...।
~ এহহ...তুমি যে কি মেওয়া আনবা তা আমার ঢের বোঝা হয়ে গেছে...ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম...হুহ
_ এইভাবে বলিস না...যেইটারে সঙ্গে আনতেছি দেখলে এক্কেরে মাথা নষ্ট হইয়া যাইবো...মালটা সেইরকম অস্থির...মাইরি...!
~ সইত্য কইতাছোস তো দোস্ত...? মালটা দেখতে কেমন? এইজ কেমন? ফিগার কেমন? স্লিম নাকি হেভি? একটু ডিটেইলস বলনা প্লিজ...!
_ হুমমম...জব্বর একখান মাল...আমি সিউর এতোদিনে এটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বেষ্ট শিকার।
~ বলিস কি? তাই নাকি? প্লিজ দোস্ত...পোলাটার ডিটেইলস বর্ণনা কর...আমার তো আর তর সইছে না...কখন যে ঐটারে পাবো...কখন যে লাগাবো...।
_ ওই বদমাশ!তুই এতো অস্থির হইছোস ক্যান...লাগানোর জন্য? অস্থির হবো তো আমরা...আমাদের তো আর তোর মত পার্মানেন্ট বয়ফ্রেন্ড নাই...যে চাইলেই ঘরের বিয়া করা বৌয়ের মত লাগাইতে পারি...তুই তো মন চাইলেই বয়ফ্রেন্ডের উপরে ঝাঁপায়ে পড়তে পারোস...ক্ষুধা মিটাইতে পারোস...আমাদের কি আর সেই কপাল আছে রে...এই মাসে একদুইবার যা একটুআধটু করি...তাও আবার সেইখানে তুইও ভাগ বসাইতে আসোস...তোরে এতো করে বলি যে এগুলো ঠিক না...ছেলেটার সাথে এভাবে প্রেমপ্রেম খেলিস না...তাতো আর তুই শুনবি না...আচ্ছা শুনেছি তোর বয়ফ্রেন্ডও নাকি দেখতে হেব্বি সুদর্শন...তাইলে তোর আর ঐ বয়ফ্রেন্ড পালার মানে কি হইলো? কি দরকার এসব তথাকথিত রিলেশনশিপ করার?
~ আরে রাখ তোর আজাইরা হাইপোথেটিক্যাল কথাবার্তা...ঐসব বালের বয়ফ্রেন্ড তো...জাস্ট ফর শো... আমার এইসব ভাল্লাগে না...ঐ একটা রাখার দরকার তাই রাখি...বলতে পারিস সাইড ব্যাগের মতন... একটা সাপোর্টিং সেক্স পার্টনার ছাড়া আর কিছুই না...যখন কোন উপায়ন্তর না পাই তখন তার কোলে গিয়ে মাথা রাখি...রোমান্স করি...মজা লুটি...এই তো...।
_ হাহাহা...হালায় তুই আর মানুষ হইলি না...!
~ দোস্ত তুই’ই বল...এক জিনিস আর কদ্দিন ভাল্লাগে? ডেইলি ডেইলি ঐ একই ন্যাকামি...রিলেশনের প্যানপ্যানানি অসহ্য লাগে...সম্পর্ক নামক একটা উদ্ভট যন্ত্রের মধ্যে নিজেকে হাজত বন্দী কয়েদী মনে হয়...বলতে পারিস বয়ফ্রেন্ডকে দিয়া এখন জাস্ট ঠেকের কাম চালাই...প্রয়োজনের চাহিদা উশুল করি... তাছাড়া যে হারে নতুন নতুন কচি রসালো পোলাপান এই লাইনে আসতেছে ওদেরকে নিয়া যদি একটু নড়াচড়া না করি...একটু আদর মোহাব্বত না করি...একটু দিক্ষা না দেই...তাইলে কি হয়...হাহাহা...।
_ হালায় তার মানে তুই...গাছের’টাও খাবি তলার’টাও কুঁড়াবি...কি ফালতু মেনট্যালিটি রে বাবা...!
~ হুম...খাবো...তো কি হইছে? শোন তোরে ক্লিয়ার করে বলি...আমি হইলাম কম্পাস আর আমার বয়ফ্রেন্ড হইলো বিন্দু...আমি বিন্দুটাকে কেন্দ্র বানিয়ে পরিধি হয়ে বৃত্তাকারে ঘুরবো...বুঝলি?...তাছাড়া আমার বিএফ তো আর আমার গোপন অভিসারের বিষয়ে একদমই আঁচ করতে পারেনা...তাকে কখনো বুঝতেও দেই না...আমি তো তার কাছে ঠিকই ভীষণ লয়্যাল একজন বয়ফ্রেন্ড...অনেক কেয়ারিং...বেশ রোম্যান্টিক...যদিও সবকিছুই আমার অভিনয়...শুধু সম্পর্কটাকে প্রয়োজনের খাতিরে লেজেগোবরে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে।
_ ও আচ্ছা আচ্ছা...তুই তো দেখি একবারে সাড়ে হারামজাদা...পাকনামি ভালোই শিখছোস তাইলে...দুই নৌকায় পা দিয়ে চলিস...অথচ ভীষণ সাবধানী...বেশবেশ...।
~ হাহাহা...আবার জিগায়...
_ তুই না বলিস তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি তোর জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে...তোকে সে তার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে...হ্যানত্যান কচুঘেঁচু...এসব কি সত্য?
~ আলবৎ সত্য...সে আমার প্রতি যথেষ্ট উদার...অনেক বেশি ভালোবাসে আমাকে...তার সবকিছুতেই সে আমাকে প্রাইওরিটি দেয়...আমার চাহিদা কখনোই অপূর্ণ রাখেনা। এমন বয়ফ্রেন্ড পাওয়া আসলেই সৌভাগ্যের।
_ আজিব! তাইলে এমন আহামরি একজন বয়ফ্রেন্ড থাকতেও তুই অন্য জায়গায় মুখ দিয়ে বেড়াস ক্যান? লজ্জা করেনা...?
~ আরে বোকা বুঝোস না ক্যান...ওর এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসাটাই তো হইলো আমার প্রতি ওর দুর্বলতা...আর আমি শুধু ওর এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করি...ঠিক যেন সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে...ক্লিয়ার।
_ তার মানে...প্রতারণা? আরে প্রতারণা তো কতভাবেই করা যায়...শুধুশুধু ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে ক্যান? সুন্দর পোলাদের কি আকাল পড়ছে রে...যে হুদাই ঐ বেচারারে ঠকাচ্ছিস?
~ ওই তুই এইসব অহেতুক বাকয়াজ বন্ধ করবি?...মাই লাইফ মাই রুলস...হইছে?
_ হুম...আমিই ভালো আছি...দিন আনি দিন খাই...কাউকে নিয়ে মিথ্যা সম্পর্কের জাল বুনি না।
~ হ...বুঝলাম তুই হইলি গিয়ে...স্বামী অমিকানন্দ...খুশি এইবার?
_ হাহাহা...ভালোই বলেছিস...বুঝলাম...গাধা হইলেও তোর মাথায় কিঞ্চিৎ ঘিলু আছে...!
~ ধুরর...তুই খালি আজাইরা বকবক করতেছোস...তোরে সেই কখন জিগাইলাম মালটার ডিটেইলস বর্ণনা কর...পোলাটার চেহারা কেমন? ফিগার কেমন? চেস্ট কেমন?...আমার কিন্তু একদম ফ্ল্যাট চেস্ট ভাল্লাগে না...একটু তুলতুলে নরম হলে জমবে বেশ...প্লিজ দোস্ত ভালো কইরা দেইখা দেইখা আগাগোড়া সম্পর্কে একটা সামারি বল...আমি বইসা বইসা আমার জিনিসটায় একটু ধার দেই...হাহাহা...!
_ হেহেহে...শালার হারামি কোথাকার...আগে না বললাম...এক্কেরে খাসা মাল...পুরাই ইয়াম্মি ইয়াম্মি।
~ ওই হালায়...তুই এতো আস্তে কইরা চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলছিস ক্যান...কিছুই তো বোঝা যায় না... মোবাইল’টা মুখের কাছে নিয়ে কথা বলতে পারিস না...?
_ আরে গর্ধব...পাঁশে ওই ছেলেটা বইসা আছে না!...ওর সামনে এইগুলা জোরেজোরে বলা যায় নাকি!
~ তাইলে আস্তে আস্তেই একটু বল...শুনে মনটা অন্তত জুড়াক...পরে না হয় দেহ জুড়ানো যাবে...।
_ চুপ কর...এখন কিছুই বলা সম্ভব না...একটু পরে একবারেই দেখিস...।

.................................

অমি ওর বন্ধুর সাথে মোবাইলে একনাগাড়ে কথা বলেই চলেছে।এদিকে তাসিফের মনের আকাশ জুড়ে একরাশ বিষণ্ণতা এসে ভর করেছে। বাসভর্তি লোক,ভ্যাঁপসা গরম,হইচই কোনকিছুর প্রতিই তার ভ্রূক্ষেপ নেই। চোখদুটো কাঁচের জানালা ভেদ করে দূরের সুউচ্চ অট্টালিকার চূড়া খুঁজতে ব্যস্ত। তীব্র অপরাধবোধে মনটা চরম বিষিয়ে আছে। মনেমনে শুধুই প্রীতমের কথা ভাবছে। আর কত ঠকাবে ছেলেটাকে। আর কত প্রতারণা করবে প্রীতমের সাথে। মনের খাতায় এই সহজ অংকটা কোনভাবেই মেলাতে পারছে না সে। শুধুই ভাবছে,যে কাজটা করতে চলেছে সেটা...কি ঠিক...না...বেঠিক।
দুই বছর হল প্রীতমের সাথে তাসিফের সম্পর্ক চলছে। সম্পর্ক চলাকালীন এই সময়ে তাসিফ প্রীতমের অগোচরে বহুজনের সাথে শরীরে শরীর মিলিয়েছে। অথচ প্রীতম তাসিফকে কতোটাই না ভালোবাসে। প্রীতমের লাইফে তাসিফের গুরুত্ব কতটা সেটা তাসিফের চেয়ে ভালো আর কেউ জানেনা। টাইম মেইনটেইন করে প্রায়ই একেঅপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, লং ড্রাইভ,রাতভর রিক্সায় করে শহুরে রাস্তায় ছুটোছুটি,একান্তে সময় কাটানো,শারীরিক সংসর্গ সবকিছুই হয় ওদের মাঝে। ভালোবাসার কোন কমতি নেই।

ওরা একে অন্যের সাথে শারীরিক মেলামেশাও যথেষ্ট উপভোগ করে কিন্তু তারপরেও তাসিফ প্রতিনিয়ত গোপনে অন্যদের সাথে দেহ লেনাদেনা করে। প্রীতমকে কব্জাবন্দি করে বিভিন্ন জনের কাছে নিজেকে সঁপে। সম্পর্কের শুরুতে দুজনেই একসাথে দুজনের ফেসবুকের ফেইক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাকটিভেট করলেও তাসিফ গোপনে আরেকটা আইডি চালু করে সেটা দিয়ে বিভিন্ন পার্টনারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। অফিসিয়াল কিংবা জরুরী কোন কাজে প্রীতম দূরে কোঁথাও গেলে তাসিফ ঐসব পার্টনারদের সাথে দেখা করে। তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে। কিন্তু প্রীতমকে কখনোই বুঝতে দেয় না যে সে তার সাথে নিত্যদিন দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করে চলেছে। অবশ্য প্রীতমের সঙ্গ বা উপস্থিতিতে তাসিফ ওর সাথে অতি ভালোবাসা সুলভ এমন আচরণ করে তাতে করে প্রীতমের মনে ওকে নিয়ে আর সন্দেহ’ই জাগেনা।
প্রীতমকে মিথ্যা প্রেমের জালে পেঁচিয়ে দিনের পর দিন তাসিফ জনেজনে দেহ বিলায়। নিত্যনতুন পুরুষদের সঙ্গ পেতে ওর ভালো লাগে। অপরিচিত পুরুষদের শরীরের গন্ধ ওকে মাতাল করে তোলে। নিজের ভেতোরে সুদর্শন সুঠাম পুরুষের গোপন অঙ্গ ধারণ করতে স্বর্গসুখ অনুভব করে সে।একই অঙ্গ নিয়ে রোজরোজ শরীরী খেলায় মাততে মোটেও আকর্ষণবোধ করেনা। ইদানীং প্রীতমের গায়ের গন্ধ বড্ড একঘেয়ে লাগে ওর। ওকে শুধু ক্রেডিটকার্ড ভাবতেই ভালো লাগে তাসিফের। আর তাই দুই দিনের অফিসিয়াল ট্যুরে প্রীতমের বাইরে যাবার সুবাদে তাসিফ ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত অমি’র সাথে জারিফের বাসায় যাচ্ছে একটা গ্রুপ সেক্স পার্টিতে অংশ নিতে।
আজকাল অবশ্য তাসিফের ভেতোরে বিষয়টা নিয়ে কিছুটা অপরাধবোধ কাজ করে। কারো সাথে ফিজিক্যালি মিট করতে যাবার আগে প্রীতমের কথা খুব মনে পড়ে ওর। এক মনে ভাবে,এভাবে প্রীতমের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে ওকে ঠকিয়ে কি লাভ? আবার পরক্ষনেই হয়তো ভাববে ধুর...অতশত চিন্তা করার কি দরকার প্রীতম তো আর তাকে নিয়ে অসুখী না কিংবা ওর এই ছলনাও সে আদৌ ধরতে পারবে না...এরকম হাজারটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলনা তাসিফের মাথায় দুলতে দুলতে ওকে খানিকটা বিচলিত করে ফেলে। যদিও তাসিফ বেশ ভালো করেই জানে ওর এমন বিচলতা নেয়াহেত সাময়িক সময়ের জন্য। তবুও আজ কেন জানি একটু বেশিই উদ্বিগ্ন লাগছে ওর। এর আগে সে বহুজনের সাথে মিলিত হয়েছে বটে কিন্তু এই প্রথমবারের মত তাসিফ কোন গ্রুপ পার্টিতে যাচ্ছে তাও আবার একদম অচেনা অজানা একদল ছেলেদের সাথে।

তাসিফের অনেক পুরনো শখ একইসময়ে একইসাথে কতগুলো পুরুষের উদাম শরীর স্বচক্ষে দেখার। কামনার ভেলায় নিজেকে ভাসিয়ে দেবার। তাই ফেসবুকে অমি’র এরকম লোভনীয় প্রস্তাবে কোনপ্রকার সাতপাঁচ না ভেবেই সে হ্যাঁ বলে দেয়। কথামত অমিও ওকে নিতে চলে আসে ওর কলাবাগানের বাসায়। সেখান থেকেই ওরা এখন উত্তরায় অমির বন্ধু জারিফের বাসার দিকে যাচ্ছে যেখানে অমির আরো দুইজন বন্ধু রয়েছে। এভাবে এতগুলো অপরিচিত মুখের সাথে প্রথম সাক্ষাতেই সরাসরি বেডরুমে যাবে ভেবেই তাসিফের ভেতোরে কিছুটা উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আনমনে একধ্যানে বাইরে তাকিয়ে কীসব যেন ভাবছে।
.................................

অমি’র তুড়ির আওয়াজে সম্বিৎ ফিরে পেলো তাসিফ। পাঁশ ফিরে তাকাতেই দেখলো অমি হাসিমুখে ওর দিকে চেয়ে আছে। এতক্ষণ ও এতোটাই বিষণ্ণতায় নিমগ্ন ছিল যে ভালো করে খেয়াল করেই দেখেনি অমি দেখতে কতটা সুন্দর। রাজ্যের পৌরুষ যেন অমির উপরে ভর করেছে। তাসিফ মনেমনে জপতে লাগলো এরকম শৌর্যশালী একটা পুরুষের নিচে নিজেকে পিষ্ট করার মুহূর্ত যেন হাতের নাগালে। ভীষণ প্রফুল্লতায় ওর মন আবিষ্ট হলো। অনায়াসেই ওর সমস্ত উদ্বিগ্নতা হাওয়ায় মিলালো যখন অমি ওকে মিষ্টি সম্ভাষণে জানালো ওরা ওদের গন্তব্যে চলে এসেছে । বাস থেকে নেমে একটা রিক্সায় চেপে ওরা জারিফের বাসার পথ ধরলো।

_ আচ্ছা তুমি কি কোন কারণে অস্বস্তিবোধ করছো? আমাকে খুলে বলতে পারো সমস্যা নেই? (তাসিফের উদ্দেশ্যে অমি বললো)
# নাহ তো...কেন বল তো?
_ তোমার চোখমুখে অংকিত সংশয়ের রেখা তো সেটাই বলে...আচ্ছা শোন,তুমি যদি আনইজি ফিল করো তাহলে চাইলে নাও যেতে পারো...মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার দরকার নেই...।
# না না...ঐরকম কিছু না...আসলে প্রথমবারের মত এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো তো তাই একটু কেমন যেন লাগছে এই আর কি...!
_ ও আচ্ছা তুমি আগে কখনো গ্রুপে মিট করোনি,তাই না?
# হুম করিনি...সত্যি বলতে কি সবাই একদম অপরিচিত তো তাই একটু ভয়ভয় লাগছে...।
_ লাগাটাই স্বাভাবিক। বাঁট ইউ ক্যান ট্রাষ্ট অন মি...আশা করি তোমার ভালো লাগবে...আর আমার ফ্রেন্ডগুলাও যথেষ্ট ভালো...সেইফ...ফ্রেন্ডলি...এজুকেটেড...তোমাকে তো আগেই বলেছি ওদের কথা...আমার মনে হয় তুমি খুব সহজেই ওদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে...।
# হ্যাঁ...সেতো অবশ্যই...পারবো...দেখা যাক...।
_ হুম সেটাই...আচ্ছা আগে চলো...সবার সাথে পরিচিত হও...কথা বলো...তোমার যদি পরিবেশ আর সবাইকে ভালো লাগে তাহলেই কিছু হবে নইলে না...এটা নিয়ে এতো টেনশন নেবার কিছু নাই...বি ইজি...প্লিয
# ওকে ডিয়ার...থ্যাংক ইউ...।

..............................
জারিফের বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অমি এবং তাসিফ। অমি বাইরে থেকে কলিংবেল বারকয়েক সজোরে চাপতেই ভেতোর থেকে দরজা খুলে দিলো প্রীতম। তাসিফ আর প্রীতমের একে অপরের দিকে চোখ পড়তেই দুজনে সমস্বরে চিৎকার করে বলে উঠলো...‘আরে তুমি এইখানে...’...ওরা স্ট্যাচু’র মত দাঁড়িয়ে দুজন দুজনার দিকে...হা...করে তাকিয়ে আছে...মুখ দিয়ে আর কোন কথাই বেরুচ্ছে না...এরকম একটা পরিবেশে এভাবে ওদের দেখা হতে পারে সেটা হয়তো ওরা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি...।
তাসিফ এবং প্রীতমের নির্বাক মূর্তি দেখে অমি পাঁশ থেকে বলে উঠলো...“কি রে তোরা কি আগে থেকেই একে অপরকে চিনিস জানিস নাকি? যাক তাইলে তো ভালোই হলো...তোদের আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নাই...”
অমির কথায় ওরা কোন উত্তর দিলো না...দুজনেই তখনো একে অপরের দিকে বড়বড় চোখ করে অপলক তাকিয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে...বুক ফেটে যাচ্ছে কিন্তু ঠোঁট দিয়ে টু-শব্দটি পর্যন্ত বের হচ্ছে না।
দরজার বাইরে থেকে প্রীতমকে পাঁশ কাঁটিয়ে রুমের ভেতোরে প্রবেশ করার মুহূর্তে অমি প্রীতমের কানের কাছে ঠোঁটদুটি ঘেঁষে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো...“কি হইলো দোস্ত? মালটা দেইখা এক্কেরে হ্যাং হইয়া গেলি যে...মুখ দিয়া কোন কথাই বেরোচ্ছে না দেখছি...বোবা হইয়া গেলি নাকি...জিনিসটা খুব পছন্দ হইছে তাই না? তখন তো মোবাইল কইরা খুব পার্ট নিছিলা...আমারে দিয়া নাকি কিচ্ছু হয়না...আমি খালি তোমাগো জিনিস খাই...এইবার দেখছো আমার পছন্দ কেমন...আইজ দেখুম কত খাইতে পারো...”

অমি’র কথাগুলো প্রীতমের কানে বিষের বাঁশির মত আওয়াজ তুলতে লাগলো...তখনো ওরা নিথর দাঁড়িয়ে...চোখেচোখে একধ্যানে তাকিয়ে...হয়তো মনেমনে ভাবছে দুজনের অভিনীত বাহ্যিক সম্পর্কের অন্তরালের গল্পটা কতটা ভয়ানক।

*সমাপ্ত*

[বিঃদ্রঃ এটা একটি কাল্পনিক গল্প। গল্পের প্রয়োজনে অশালীন কিছু শব্দ ব্যবহার করার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।]

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?