রাজপুত্র - রাকিব হাসান

ক্যালেন্ডারে লাল কালিতে দাগানো তারিখটা চলে আসলো দেখতে দেখতে। আজ তোমার বিয়ে… গত কয়েক রাতে ভালো ঘুম হয়নি। তাই কাল রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়েছিলাম। ওষুধটা ভালোই ছিলো, খাওয়ার সাথে সাথেই চোখ ভারি হয়ে আসলো, একটু ও সময় লাগেনি। ঘুম ভাঙলো দুপুরের একটু আগে। রাতে ফোনটা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলাম, ফোন হাতে নিয়ে দেখি তোমার অনেকগুলো মিসড কল, বেশ কয়েকটা মেসেজ… এতো ধৈর্য্য নিয়ে আমাকে ফোনে খুঁজেছো তুমি ?? মনে পরে যাচ্ছে আমাদের প্রেমের প্রথম দিককার দিন গুলোর কথা… 


অনেকক্ষন ধরে দাত ব্রাশ করে, গোসল করতে ঢুকলাম। ওষুধটার কি হ্যাং ওভার ইফেক্ট আছে?? দাঁড়ায় থাকতে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন ?? শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় থাকতে পারলাম না। বাথরুমের মেঝেতে বসে ভিজতে থাকলাম ঝির ঝিরে পানির ধারায় … আমার এখানেই ঘুমাতে ইচ্ছা করছে। ভিজতে ভিজতে একসময় শীত লাগতে শুরু করলো। উঠে দাঁড়ায় পানিটা বন্ধ করে, তোয়ালে জড়ায় বের হলাম… এ কি ?? তুমি আমার আলমারি ঘাটা ঘাটি করছো কেন ?? কি খুঁজছো ?? তোমার শেরওয়ানীর ডিজাইনের সাথে ম্যাচ করে একসাথে আমার জন্য যেটা বানাতে অর্ডার দিয়েছিলে সেটা ?? ওটা তুমি এখানে পাবে না … আমি পরদিন যেয়ে আমারটার অর্ডার ক্যান্সেল করে এসেছি, তোমার অবশ্য সেটা জানার কথা ও না। আমি একাই তো তোমার শেরওয়ানী ডেলিভারী নিতে গিয়েছিলাম … 

আহ … এতো রাগ দেখাচ্ছো কেন ?? আজকের দিনেও তুমি রাগ করবে? আজ না তোমার বিয়ে ?? সামান্য একটা অর্ডার ক্যান্সেল করার জন্য এতো রাগ করতে হয়? আমার কি আর পোষাক নাই? নাকি ওই শেরওয়ানী ছাড়া তোমার পাশে দাঁড়ানো যাবে না?? ওটা ছাড়া তোমার জাক-জমক পোষাকের পাশে আমাকে ফ্যাকাশে লাগবে? লাগুক না … অসুবিধা কি? আজ তো আমার ফ্যাকাশে হবার ই দিন … 

আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের এতোবার করে যেতে বলার কোন দরকার নাই। তারা এমনিতেই যাবে। তোমার হবু বউকে নিয়ে আমার আম্মা উচ্ছাস প্রকাশ করেছে, বলেছে তুমি সব দিক থেকে তোমার যোগ্য মেয়ে কেই পাচ্ছো জীবনে। তোমার হবু বউ আমার বোনের ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র। আমার বোন তোমার বরযাত্রী না, কনেপক্ষের হয়ে বিয়েতে থাকবে … 

রাস্তায় এতো জ্যাম কেন?? দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে … পার্লারে যে কতক্ষন লাগাবে। তারপর তোমাকে বাসায় ফিরতে হবে। আবার বরযাত্রী নিয়ে যেতে হবে। ছেলেদের কে পার্লারে সাজানোর এই চল টা আমার পছন্দ না। মেকাপ নিয়ে রাজপুত্র সাজতে হয়?? মনের প্রাসাদে রাজপুত্র হতে মেকাপ লাগে না … 
পার্লারের ঠান্ডা হাওয়ায় আবার ঘুম চলে আসলো, তুমি সাজো, আমি এই ফাকে একটু ঘুমায় নেই। কেমন ?? 

ওহ হো … ঘুমাতেও দেবে না? কেনো ?? আমাকে তুমি এতো বিরক্ত করো কেন ?? পার্লাসের স্টাফরাই তো তোমাকে পোষাক পরাতে পারে। আমাকে কেনো লাগে?? 

নিজ হাতে তোমাকে পোষাক পড়ায় দিলাম, হয়তো শেষ বারের মতো … আর কোনদিন এই সুযোগ হবে না হয়তো… তোমার প্রশস্ত বুক ঢেকে গেলো শেরওয়ানীর নিচে। একটা একটা করে বোতাম লাগালাম, আর মনে হলো, এই বুকে মাথা রাখার দরজা একটা একটা করে বন্ধ হয়ে গেলো। 

তোমার জন্য সাজানো গাড়িতে কেন আমাকে বারবার বসতে বলছো ?? রাতে যখন বউ নিয়ে ফিরবে তখনো কি আমাকে বসতে হবে এই গাড়িতে? রিয়ার ভিউ মিররের ফ্রেমে কি তোমাদের দুজনের যুগলবন্দি ছবি দেখতে হবে?? 
অন্য গাড়িতে উঠবো বলে কেটে পড়লাম। 

একে একে সবকটা গাড়ি চলে গেলো। আমি হাটতে হাটতে ফিরলাম আমার বাসায়। আব্বা আম্মা তোমার বিবাহ আসরে যাওয়ার জন্যই বের হচ্ছিলো। আমাকে ফিরতে দেখে জিঞ্জাসা করলো - '' তুই যাবি না?? '' 

- নাহ আম্মা … আমার ছুটি শেষ। চাকরি আছে না?? আটটায় আমার বাস। সকালে অফিস করতে হবে … আপনারা যান। আমার ব্যাগ গুছানো বাকি …

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?