বিমূর্ত ভালোবাসা - রুদ্র রাজ

১.
জীবনের ছোট ছোট অনুভুতি, ছোট ছোট স্বপ্ন কে আকড়ে ধরে পথচলা আমার। কখনো ভালোবাসা ছুয়ে দেখা হয়নি। কখনো বলা হয়নি ভালোবাসা কে ভালোবাসি। ভালোবাসার নিবিড়ে নিজেকে জড়িয়ে কখনো অনুভবে খুঁজি নি কোনো একজন কে। খুব সাদাসিদে জীবন ছিল আমার। বিমূর্ত ভালোবাসা কখনো মূর্ত হয়ে আসেনি জীবনে। কিন্তু এই অবচেতন মনে ভালবাসার চেতনা নিয়ে এসেছিল সে। যার প্রতিটি কথায় মিশে ছিল আমার সমস্ত বিশ্বাস। আসলে এটা ছিল কেবলই আমার, শুধুই আমার। আমার কেন বলছি? কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারবেন। সে ছিল আমার বিমূর্ত ভালাবাসার মূর্ত প্রতীক। আমার ছিল কিন্তু আমি তার ছিলাম না। এটা ছিল কিনা তার অভিনয় তা জানি না তবে এতটুকু জানি সে ছিল, আছে এবং থাকবে। আমার সমস্ত বিশ্বাস আর ভালোবাসার মূর্ত ছবিটায় হয়ত সে থাকবে, কিন্তু তার স্পর্শ???
২.
কিছু প্রশ্নের উওর কখনো পাওয়া যায় না। কিছু গোপনীয়তা থাকা ভালো। কেননা এই গোপনীয় কথার কিছু চেহারা থাকে যার সামনে মানুষ কখনো দাড়ায় না। আসলে দাড়ায় না বললে ভুল হবে, দাড়াতে ভয় পায়। নিজের বীভৎস, কুৎসিত চেহারা দেখতে কে ভালোবাসে বলুন?? যাইহোক যার কথা বলছি তার অন্তত একটা নাম তো দেয়া উচিত। হ্যা, নাম তার আপন, আমার দেয়া নাম। আমার জীবনের খাতায় ভালোবাসা দিয়ে যার নামটা লেখা আছে তার নাম ওটা। ভাবছেন আছে শব্দটা কেন?? কারন সে তো আমার অনুভবে জেগে থাকা প্রতিদিনেরর এক নতুন বর্তমান। হয়ত আমি তার কাছে অতীত কিন্তু সে আমার ভাবনার দীর্ঘশ্বাসে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা অথবা রাত। যা কে নিয়ে এত কথা তার পরিচয় টা এখনো বলা হল না। আসলে আপন যার নাম আমার দেয়া সে হল আকাশ। হয়ত আকাশের মনটা তারই ছিল, তাই হয়ত আকাশের বুকে অনেক তারা কে বিশালতার মাঝে দেখা যেত। যাক গে ওসব। আকাশের বুকে নিজেকে চাঁদ বানিয়ে নিজেই জোছনার আলোয় আলোকিত হয়ে সাজতাম রাত্রির মায়ায়।
৩.
পরিচয় টা এখনো দেয়া হল না। মাস্টার্স এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র আকাশ নামের ভদ্র লোকটি। ভদ্রতার সবদিক গুলো খুজে পাওয়া যায় তার মাঝে। যতদুর শুনেছি তার মুখে সে তার চাচার কাছে ছোটবেলা থেকে আছে। মা বাবা দুজনে ছোট বেলায় পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তখন থেকে চাচার কাছে থেকে পড়াশুনা করেন আকাশ নামের ঐ ভদ্র লোকটা। যে কেউ তার মুখের দিকে তাকালে মায়া লাগবেই। সে এমনই এক মায়া যাকে পাশ কাটিয়ে বলা যাবে না এখন যাই। হয়ত সেই মায়ার জালে নিজে আস্টে পিস্টে জড়িয়েছি। তাই হয়ত তার মায়াবী মায়ায় আমার সমস্ত অনুভব তার মায়াজালে আটকা পড়ে আছে। আর সাথে আছে তার জীবনের ইতিহাস। ইতিহাস টা ইতিহাস হয়েই থাক।
৪.
আকাশের সাথে আমার পরিচয় টা একেবারেই ভিন্ন ভাবে। কারোর জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা কা আমার জানা নাই। দিনটি ছিল শনিবার। আমার মাস্টাস্ ভর্তি হওয়ার তারিখ। আকাশ তার বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিল, আজ যদি কাউকে নন্দ বানাতে পারে তাহলে তাকে চাইনিজ খাওয়াবে। আসলে ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয় আর কি? ওর ব্ন্ধুদের মধ্যে শ্যামল নামে একটা বন্ধু আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল ওই যে সুন্দর ছেলেটা আসছে ওকে আজ তোর নদু বানাতে হবে। কি করে করবি সেটা তোর ব্যাপার। আমি আকাশের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আকাশ আমাকে ডাক দিয়ে বলল এই কাগজ টা নাও, যা লেখা আছে সেটা পড়ে উত্তর দিও। আমি অবাক হলাম, আমি তো আপনাকে চিনি না। এটা আমাকেই দিলেন কেন? ভয় নেই তোমার। এতে এমন বাজে কিছু লেখা নেই।
- আচ্ছা চলি।
আমি বেশ অবাক তো হয়েছি কিন্তু মনের ভেতর খচখচ করছে কি লেখা আছে তা পড়ার জন্য। আসলে জীবনে প্রথম পাওয়া চিরকুট তো তাই। চিরকুট টা খুলে লেখাটা পড়ে একেবারে হতভম্ভ হলাম। লেখা ছিল

" আমি তোমাকে ভালোবাসি"।

যদি আমাকে তোমার ভাল লাগে প্লিজ আমার ভালবাসা কে গ্রহন কর।
আমি কি করব, কি করব না তাই ভাবছি। ওদিকে ওর বন্ধুরা দেখছে কি ঘটে? আমি সমস্ত সংশয়, ভয় দুর করে আকাশের কাছে গেলাম, বললাম হয়ত ভালোবাসি নয়তো না। এবার আকাশ নিজেই অবাক হল আমার উত্তর টা শুনে। ঐ দিন কেউ কারোর নাম টা জিজ্ঞেস করি নি। আমাকে নন্দু বানাতে গিয়ে বাজি তে হেরে গেল।
৫.

এক সপ্তাহ পর কলেজ আসলাম। ক্লাস কবে শুরু হবে সেটা জানার জন্য। ঐদিন ও আকাশের সাথে দেখা হল। আকাশ নিজেই আমার নাম, কোথায় থাকি এসব জানতে চাইল। আমি ও আকাশের সব কিছু জানলাম। এভাবে শুরু হল আমার ভালোবাসার গল্পের সূচনা। সেদিন থেকে আকাশের সাথে রোজ কথা হতে লাগল। আকাশের দেয়া সে চিরকুট টা আমার কাছে ছিল। এভাবে আকাশের সাথে আমার প্রতিদিনকার কথায় কথায় কখন যে দুজন দুজনার খুব কাছে এসেছিলাম। আকাশ তার জীবনের সমস্ত দুঃখ আমার সাথে শেয়ার করত। তার জীবনের সমস্ত কথা আমি মনমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি অনুভুতি আমি খুব ফিল করতাম। সে শুধু বলত আমি শুনতাম। জীবনের প্রতিটি কাজের একটা জীবন্ত ডায়েরী ছিলাম আমি। ভাবতেই খুব ভালো লাগত আমার জীবনে এমন কেউ আছে যার সমস্ত কিছুর বিশ্বাসে আমার নাম টা জড়িয়ে আছে। আকাশের সব কথা শুনে আমি জানতে চেয়েছিলামম তার জীবনের লক্ষ্য কি। বলেছিল অনেক বড় হওয়া। জীবনের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য সবকিছু সে করতে পারে। তার লক্ষ্যের এই অটুট বিশ্বাস দেখে আমার ও খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু তখন এতটুকু বুঝিনি তার এই লক্ষ্যের মঞ্জীলে পৌঁছানোর জন্য আমার ভালবাসা হারাতে হবে। মাস্টারস্ পরীক্ষা শেষ হল। আমার পরীক্ষার তারিখ ও খুব কাছাকাছি। পরীক্ষার জন্য আকাশের সাথে দেখা হতনা। কিন্ত ফোনে কথা হত। একদিন আকাশ কে আমি দেখা করার কথা বললাম। আকাশ বলল ঠিক আছে।

-কবে আসব?
- যদি বলি এখন আসতে, তাহলে?
- ঠিক আছে কোথায় আসব বল?
- আচ্ছা তুমি কলেজ ক্যাম্পাস আস।
-আসছি।

আকাশ আসল। আমিও কলেজে এসে আকাশ কে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলাম। অতৃপ্ত হৃদয়ে যেন তৃপ্তি পেলাম। আকাশ ও আমাকে একই ভাবে জড়িয়ে ধরল। এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়। নীরবতা ভেঙে আকাশ বলল এবার তো ছাড়।
- না, আমার ভালোবাসা কে আমি এভাবে ধরে রাখতে চাই সারাজীবন।
- আচ্ছা। দেখ আমার কাছে তোমার ভালবাসার চেয়ে আমার ক্যারিয়ার অনেক বড়। হ্যা তোমাকে আমিও ভালবাসি। তাই বলে তোমার জন্য আমার ক্যারিয়ার আমি নষ্ট করতে পারব না। তুমি তো জানো আমি বড় হতে চাই।
- হ্যা। তাতে সমস্যা কি? আমার জন্য তোমার ক্যারিয়ার এর কোনো ক্ষতি হচ্ছে?
- না, সেটা না। আসলে তুমি সারাজীবনের কথা বললে, তাই বললাম।
- আচ্ছা তোমার কাছে যদি একদিকে আমাকে আর অন্য দিকে তোমার ক্যারিয়ার হয়, তাহলে কি করবে?
-উত্তর টা তুমি জানো। দেখ আমি আমার ক্যারিয়ার টা আগে চাই, সেখানে তোমার ভালোবাসা মুল্যহীন একটা ছেড়া কাগজের মত।
- ওহ!! কিছু বলার শক্তি টাও আমি হারিয়ে ফেললাম। আমার ভালোবাসা ছেড়া কাগজের মত রাস্তার ধুলোয় উড়ে বেড়াবে! যার কাছে ভালবাসা এতটা মুল্যহীন, তাকে ভালোবাসার বাণী শুনিয়ে কি লাভ?

ঐদিন থেকে আকাশের সাথে আমি আর কোনো যোগাযোগ করিনি। আকাশ ও করে নি। হয়ত ওর কাছে ক্যারিয়ারের স্বপ্ন টা আমার স্বপ্নময় ভালোবাসার কাছে বিক্রি করে দিতে চায়নি। তবু যেন আমার ভালোবাসার সমস্ত সুখের সুখময় কাটানো দিন গুলো মূর্ত ভালোবাসায় বিমূর্ত হয়ে বুকের ভেতরে লুকিয়ে আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?