মৃত্যুর পরেও স্বপ্ন বাসর - কিশোর মাহমুদ

{এক}
অ-ক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বিদ্যা-ধন। সেই অ-মূল্য সম্পদ, হলুদ হীরার চাইতেও মোহা মূল্যবান জ্ঞানার্জনের জন্য অনেক শ্রম ও সময় বিনিয়োগ করে অারেফিন সৃজান। 'সৃজান মাহমুদ'তার অাসল নাম।
নামটা অাসল হোক বা না হোক, বিদ্যার দৌড় অাছে সৃজানের। নবম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে পদার্পণ করেছে। স্কুলের সব থেকে সেরা ছাত্র হয়ে সর্বোচ্চ ফল নিয়ে বাড়ী ফিরতেই থমকে দাড়াতে হলো
পথিমধ্যে। পথ রোধ করে সামনে দাড়িয়ে অাছে একটি অধ্য-চঁন্দ্র পুষ্প বালক। রুপের অালোক প্রভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে সেই মায়াবী কলেবর থেকে। অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী অবয়বের কোমল দুটি হাতে টেনে ধরছে সৃজানকে। পথের মাঝেই বুকে নিয়ে চুমো খেলো কপালে। বাম হাতের মর্ধ্যমায় কামড়ে দিলো অালতো করে। যেন বহুদিন পরে কপোত- কপোতীর মীলন হচ্ছে।
"অামার অন্তর অাত্না বলছে-অামি সুখবরে মুগ্ধ হবো"
"সুখবর শুনে কি দিবি বল?" সৃজানের মুখে তৃপ্তির হাসি। সেই নির্মল হাসিতে শুভ বুজে গেল অনেক কিছু।
হাস্যোজ্জল মুখে সৃজানকে বলল-
"তোর পরীক্ষার রেজাল্টে যদি অামি মুগ্ধ হই তবে তুই যা চাইবি তা-ই তোকে প্রেজেন্ট করবো"
"সত্যি বলছিসতো? নাকি ঘোল খাওয়াবি"
"হ্যা সত্যি, তিন সত্যি বলছি-স্বাধ্যের সবটুকু চেষ্টা করবো তোর জন্যে"
"তাহলে অাজ রাতটি অামাকে দিবি। অামার বাসায় অামার মতো করে"
"অবশ্যয়। তুই যেভাবে চাইবি সে ভাবেই হবে। বলবি তো-এখনই চলে অাসবো" বলে শুভ তার চিরাচরিত্র অভ্যেস মতো সৃজানের ললাটে চুমো খেলো অাবার। বাম হাতের মধ্যর্মাতে কামড়ে ধরে বলল-
"সু-খবরটা বল"
শুভ সৃজানের বাল্য বন্ধু। যখন শুভর ৫ কি ৬ বছর বয়স তখন থেকে। সে সময় একবার পানিতে পড়ে ডুবে গিয়েছিল শুভ। নিজের জীবন বাজি রেখে তাকে বাচিয়েছিল সৃজান। সেই থেকে তাদের বন্ধুত্বটা এখনো অটুট। 
শুভ লেখা-পড়া ছেরে দিয়েছে দারিদ্রতার কারণে। অভাবের সংসারে সহযুগিতা করতে গিয়ে পড়া শুনা ছাড়তে বাধ্য হয় শুভ। কিন্তু সৃজানের সাথে বন্ধুত্বটি অটুট থাকে সেই বাল্যকাল থেকে।
"কপাল ছাড়া অন্য কোন জায়গা পাসনি চুমো খাওয়ার জন্যে" বলেই শুভর টোল পরা গালে গোট্রা মেরে, লজ্জাবতী লতার মতো মাথা নিচু করে দৌড়ে পালালো সৃজান।
শুভ সৃজানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক নয়নে।
"কি অদ্ভূত বন্ধুরে অামার! অন্যত্রে নাকি চুমো খেতে হবে!!
দাড়া তবে, অাজ রাতেই দেখবো-কোথায় কোথায় চুমো খাওয়া যায়!"
{দুই}
পুরো ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে সৃজান। টেবিলে ফুলের টপ রেখেছে। কাচাঁ ফুলের ফুললেল সৌরভে শৌরভিত হচ্ছে ঘরময়। এতোটা সুন্দর, চমৎকার করে সাজানো ছবির মতো স্বপ্নে বা কল্পনাতেই সম্ভব। অার এই অসম্ভব কে সম্ভব করেছে সৃজান মাহমুদ। মনের মতো করে সাজিয়ে পুষ্পবাসরে রুপ দিয়েছে ঘরটিকে। যেন এক জীবন্ত ফুলের বাসর।
অারো এক বার দেখে নিল ঘরটি। কোথাও অসংলগ্নতা নেই। এখন অপেক্ষার পালা। প্রিয় মানুষটি অাসবে এই বাসরে। যার সাথে ১৪টি হেমন্ত কাটিয়েছে বন্ধু রুপে। তাকে অাজ মনের গভীর থেকে কামনা করছে সৃজান। জানে, এটা সমাজ কখনো মেনে নিবে না।
তাই বলে সে ও অ-সামাজিক নয়। কিন্তু ভালোবাসার কাছে সমাজ তুচ্ছ। তাই সে যে করে হোক, অাজ শুভকে..........।
অপেক্ষার শেষ নেই। মধ্যরাত গড়িয়েছে অনেক অাগে। তবুও প্রিয় মুখটির দর্শন মিলেনি। যার জন্য এত্তোসব অাঞ্জাম তার অধরায় ক্লান্তিতে উচ্ছলল্যতা হারাতে বসেছে সৃজানের। অপেক্ষা মৃত্যুর চেয়েও কষ্টকর মনে হচ্ছে তার কাছে।
চাতকের অাশা নিয়ে বার বার এগিয়ে যায় দরজার কাছে। খুলেও দেখেছে কয়েক বার। কিন্তু যে অাশার কথা সে অার অাসছে না। শুধু শুধু মশাগুলো দখল করছে কাচাঁ ফুলের পাপরিগুলো। বেদনার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে, লাগব না হয়ে।
খুব ক্লান্তিবোধ করছে সে। একা একা অপেক্ষা করে করে হাপিয়ে গেছে সৃজান। ভাবছে, এই শেষ বারের মতো দরজা খুলবে। যদি শুভ অাসে তো ভালো হবে, অার না অাসলে তার জন্য কখনো এই ঘরের দরজা খোলা হবে না। মনের দরজাও বন্ধ হবে চিরতরে। থাকবে না বন্ধুত্বের বন্ধন। অার ভাবতে পারছেনা সৃজান। মাথায় চিন চিন ব্যথা অনূভূত হচ্ছে তার।
ভয় ও সংস্রয় জরিত দ্বিধা নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সৃজান। এই শেষ বারের মতো দরজা খুলবে। পরে অার খুলবে না। কখনো না।
{তিন}
মনে নানান সংঙ্কা, উদ্বিগ্নতা অার অাত্ন অহংবোধে অারষ্ট সে। তাহলে সখা মোর অাসবেই না?
দেয়া কথাটা রাখবে না?
এতোটা সময় ব্যয় করে কষ্ট করলাম কার জন্যে?
বাসরের ফুল বাঁসি হবে বন্ধুর বিহনে?
সে এসে কি দেখবে না মোর ভালোবাসার পুষ্প বাসর? কতটা সুন্দর করে সাজিয়েছি তার সংবর্ধনায়।
প্রাণ খোলা হাসি দিয়ে, বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে, বাম হাতের মর্ধ্যমাতে কামড়ে ধরে বলবে না-
'ওয়াও! কি চমৎকার। যেন মধুজামিনীর ফুল শর্য্যা!'
অামিও তাকে বুকের পাজরে পিষ্ট করে বলবো-
'হ্যা, এটা বাসর ঘর। তোমার অামার মীলন মেলা হবে এখানে। তাইতো এতো ঘটা করে সাজালাম ঘরটিকে'
সে হাসবে অার অামার বাম হাতের মর্ধ্যমায় কামড়ে ধরে বলবে-
'দুর পাগলা ছেলে! ছেলে ছেলে মিলন হয় কি করে! বউ হবে কে অার জামাই বা হবে কে?'
অামি তাকে বুকের নিচে ফেলে বলবো-
'তুই বউ অামি তোর জামাই। নয়তো অামি তোর বউ, তুই অামার জামাই হবি। দেখবো, বাসরের সুখে সুখি হই কি না। তোকে সুখ দিতে পারি কি না'
এমন হাজারো রঙ্গিন ভাবনাসমুহ মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে সৃজানের। শেষবারের মতে দরজা খুললো সে। পিছনের দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘরিটি রাতের শেষ প্রহর জনান দিচ্ছে। বন্ধুর অপেক্ষায় উতলা হয়ে ঘড়িটির দিকে তাকালোনা একবারও। নিঃস্বঙ্গতার বেড়া জালে থেকেও না।
{চার}
খোলা দরজার সামনে শুভকে দেখতে পায় সৃজান। মুখ ভার করে দাড়িয়ে অাছে দরজার সামনে। বরফ গলা শিশিরে ভিজে একাকার হয়ে অাছে শুভর পুরো শরীর। শেষ রাতের ম্রিয়মান চাঁদের অালোতে অসম্পূর্ণ দেখাচ্ছে তাকে। অভিমান ভুলে বুকের সাথে চেপে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরছে সৃজান। শুভ নির্লিপ্ত।
"এই তোর সময় হলো? তোর বিহনে কতটা কষ্ট পাচ্ছিলাম জানিস তুই?"
"অামিওতো তোর জন্য দাড়িয়ে অাছি সন্ধা রাত থেকে, অামিওতো কষ্ট পাচ্ছি অপেক্ষা করে করে"
"বলছিস কি তুই? সন্ধা রাত থেকে দাড়িয়ে অাছি। ডাকবি না অামাকে?"
"জাগিয়ে তোলার নাম কামনা অার জেগে উঠার নাম ভালোবাসা। অামিতো তোকে ভালোবাসি সৃজান। তাই তোর জেগে উঠার অপেক্ষায় অাছি"
"কি বলেরে অামার পাগল প্রেমিক!" বলে কাদোঁ কাদোঁ বদনে শুভকে ঘরে নিয়ে যায় সৃজান। শুভর ভিজা কাপড়গুলো খুলে নিজের একটি সাদা ড্রেস পড়িয়ে দেয় তাকে। ড্রেসটা সৃজানের মামা দিয়েছিল। তার ঈদের উপহার। এইতো গেলো ঈদে দিয়েছিল।
অনেক সুন্দর লাগছে শুভকে। প্রষ্ফুটিতো সাদা গোলাপের মতো ফুটে উঠেছে শুভর মুখায়ব। অাগে থেকেই সে চঁন্দ্রাজ্জোল। এখন ভিজা শরীরে পাকা অাপেলের মতো মনে হচ্ছে। লোভ সামলানো কঠিন হচ্ছে সৃজানের। অাবেগে উদ্বেলিত হয়ে খাটের উপরে অাছরে পরলো শুভকে নিয়েই। বাঘ যেভাবে হরিন চিরে খায় সেভাবে অাস্বাধন করে ধীরে ধীরে ভালোবাসার শেষ বিন্ধু অবদি চুষে খেতে মন চাইছে সৃজান মাহমুদের। অাজ শুভর নিস্তার নেই তবে।
"কি রে! এভাবে তাকিয়ে অাছিস কেন? মনে হচ্ছে- সাজনা তলায় শুভ দৃষ্টি দিচ্ছিস। অামি কি তোর বউ নাকি রে?"
"হ্যা শুভ, অাজই ভালোবাসার লেনা-দেনার অাদান-প্রদান করতে চাই। চৌদ্দ বছরের জমানো অাবেগ। অার কতত অপেক্ষা করতে চাস্?"
সৃজানের কথা শুনে শুভ কাঁদছে। খুব কাঁদছে। চোখের কোণে নোনা জলের ফোয়ারা বয়ে চলছে। নিস্পাপ অস্তিত্বের পুরোটাতে জুরে অাছে সৃজান। সৃজানের ভালোবাসার অন্তরীক্ষে অাবগাহিত ছিল শুভর পবিত্র বন্ধু-বন্ধন।
এক সময় হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো শুভ।
"এতো ভালোবাসা দিসনা অামায়। অামি সইতে পারবো না, মরে যাবো"
শুভর কান্নার মাত্রা বেড়ে গেছে-
"তোর প্রেমের কাছে হেড়ে গেলাম। অামাকে ক্ষমা করে দিস"
"এই কি বলছিস শুভ!" সৃজান খুব অাশ্চর্য হলো। শুভর শার্টের কলার টেনে ধরল- "কি হইছে তোর! অাবোল তাবোল বকছিস কেন?"
"না মানে-অামার খুব ঘুম পাচ্ছে। অামাকে একটু ঘুমাতে যেতে দে বন্ধু" বলে শুভ সৃজানকে বুকের উপরে টেনে নিয়ে ঘুমের অতলে তলিয়ে গেল।
সৃজান শুভ কে ডাক দিল। শুভ সারা দিলো না। সৃজান অাবার ডাকলো-
"এই মধুময় রাতটি তুই ঘুমে কাটিয়ে দিবি তা হতে দিবো না"
বলে সৃজান শুভর অধরোষ্টে কামড়ে ধরে তার পৌরষ হাতরে দিল। সেখানে হাতের চাপ বারালো শুভকে চেৎন করার মানষে। জোর অারো বাড়াচ্ছে। নিজের উত্তেজনাও হাওয়াই বেগে বেড়ে উঠছে। শিখার ফুলকি ধুলকিতে।
ঠিক সেই সময় সৃজানের বাবা এসে সৃজানকে ডেকে বল-
"উঠ ঘুম থেকে। তোমর বন্ধুর জানাজা হবে অার তুই ঘুমাচ্ছিস অায়েশ করে"
সৃজান হাক ধগ্ করে ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে লাগলো। "কি হয়েছে অাব্বু?" সৃজানের বাবা বলল-
"কেমন বন্ধু তুই, রাত অাট্রার সময় বন্ধু মারা গেছে অার তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস। শুভর জানাজতে যাবো চল"
সৃজানের স্বপ্নের কথা মনে হলো। সেও অনেক জোরে হাউ মাউ করে কেদেঁ উঠলো।
{বিঃদ্রঃ এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘঠনা। ২০১২ তে বটতলি বাজারে ঘঠেছিল। মটর বাইক এক্সিডেন্টে মারা গেছিল সে। সে বাবার একমাত্র ছেলে। তার দুটি বোন অাছে। তার বাড়ি ইকড়গাড়াতে। তার জন্য দোয়া চাইছি}

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?