১.
নিউইয়র্কে এখন সকাল। আকাশে জ্বল জ্বল করছে একটা রাগী সূর্য। একটু পরেই
সবকিছু উত্তপ্ত করে দেবে তার তেজ। বছরের এইসময়টাতে রৌদ্রের তেজটা একটু
বেশিই থাকে। একটুপর আর ছাদে দাড়িয়ে থাকা সম্ভব হবে না। আস্তে আস্তে
সূর্যটা মাথার উপরে চলে আসছে। আমি কিন্তু সূর্যোদয় দেখতে ছাদে আসিনি। একা
একা সূর্যোদয় দেখে কোন আনন্দ নেই। অন্তু কে ডাকলে অবশ্য উঠত কিন্তু ওকে
ডাকতে যাওয়াটা প্রয়োজন বোধ করিনি।
গতকাল রাত থেকেই আমি ছাদে। ঠিক কখন এসেছি খেয়াল নেই। ঘড়ি দেখতে ভুলে যাওয়াটা আমার বহুদিনের পুরুনো অভ্যেস। এখন বয়স ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে যাচ্ছে এই অভ্যেসের ইতি টানতে পারি নি। আসলে কখনো পরিবর্তনের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করিনি। এখন অন্তুই সব ঠিক করিয়ে দেয়। অন্তুর আগেও কেও একজন ছিল আমাকে সময় মনে করিয়ে দেবার জন্য। হয়ত সে ই আমার এই বদভ্যাসের প্রশ্রয়দাতা। আমার এই বদভ্যাসটাকে চিরস্থায়ী করে সে চলে গেছে। অনেক অনেক দিন আগে। কাল রাতে আমার কিছুতেই ঘুম আসছিল না। শরীরটা ক্লান্ত হলে ঘুম আসবে ভেবে মনের অনিচ্ছা সত্তেও অন্তুর সাথে কামনার লড়াই করলাম। লড়াই শেষ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল অন্তু কিন্তু আমার অশার গুড়ে বলি। নিদ্রাদেবীর অভিশাপ আর তিলমাত্র সহ্য হচ্ছিলনা তাই একটু মুক্ত বাতাসের আশায় ছাদে এসে একটার পর একটা নিকোটিন শলাকার দাহ করতে থাকলাম। এক সময় প্যাকেট শূন্য হয়ে গেল কিন্তু আমার চক্ষুদ্বয় নিদ্রা রসে পূর্ন হল না। অগত্যা জাগরনেই কেটে গেল বিভাবরি। বারেবারে শুধু মনে হচ্ছিল এই দৃশ্যও কি দেখার ছিল!
গতকাল রাত থেকেই আমি ছাদে। ঠিক কখন এসেছি খেয়াল নেই। ঘড়ি দেখতে ভুলে যাওয়াটা আমার বহুদিনের পুরুনো অভ্যেস। এখন বয়স ত্রিশের কোঠা পেরিয়ে যাচ্ছে এই অভ্যেসের ইতি টানতে পারি নি। আসলে কখনো পরিবর্তনের প্রয়োজনিয়তা অনুভব করিনি। এখন অন্তুই সব ঠিক করিয়ে দেয়। অন্তুর আগেও কেও একজন ছিল আমাকে সময় মনে করিয়ে দেবার জন্য। হয়ত সে ই আমার এই বদভ্যাসের প্রশ্রয়দাতা। আমার এই বদভ্যাসটাকে চিরস্থায়ী করে সে চলে গেছে। অনেক অনেক দিন আগে। কাল রাতে আমার কিছুতেই ঘুম আসছিল না। শরীরটা ক্লান্ত হলে ঘুম আসবে ভেবে মনের অনিচ্ছা সত্তেও অন্তুর সাথে কামনার লড়াই করলাম। লড়াই শেষ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল অন্তু কিন্তু আমার অশার গুড়ে বলি। নিদ্রাদেবীর অভিশাপ আর তিলমাত্র সহ্য হচ্ছিলনা তাই একটু মুক্ত বাতাসের আশায় ছাদে এসে একটার পর একটা নিকোটিন শলাকার দাহ করতে থাকলাম। এক সময় প্যাকেট শূন্য হয়ে গেল কিন্তু আমার চক্ষুদ্বয় নিদ্রা রসে পূর্ন হল না। অগত্যা জাগরনেই কেটে গেল বিভাবরি। বারেবারে শুধু মনে হচ্ছিল এই দৃশ্যও কি দেখার ছিল!
২
তার সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবি নি কোন দিন। যে মানুষটি আমার কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে চিরতরে নিরুদ্দেশ হবার পথে যাত্রা করেছিল তার সাথে এই ভাবে এখানে
দেখা হওয়ার জন্য আমি কোন কালেই প্রস্তুত ছিলাম না। ভেবেছিলাম যে জিনিস
আমার নয় তার আশায় চোখের জলে বুক ভেজানোর কোন মানেই হয় না। তার চেয়ে
নতুন করে বাচতে শেখাই ভাল। অন্তত আক্ষেপ করার সময় টুকু ভাল কাজে ব্যায়
হবে। তাই অন্তুর হাত ধরে জীবনে এতটা পথ হেটে এসেছি কোন আক্ষেপ ছাড়াই।
জানতাম সে ফিরবে না। কিন্তু আমার ধারনাকে তুলোধুনো করেদিয়ে সে আবার আমার
সামনে এসে দাড়িয়েছে। কিন্তু আজ তাকে দেবার মত কিছুই আর আমার অবশিষ্ট নেই।
যদিও আমার কাছে সে কিছু চাইতে আসনি। সে জানে সময়ের স্রোতে কোন কিছুই আর
কারো জন্য বসে থাকে না। তবুও সে এসেছে। হয়ত আমার কাছে আসে নি। কিন্তু তাকে
আমার কাছেই আসতে হয়েছে। এ যেন বিধাতার নিজের হাতে রচিত কোন দাবার ছকের
নাটকিয় চাল যেখানে অমিমাংশিত ফল জেনেও খেলে যেতে হয়। এভাবেই সময়ের বয়ে
চলায় যাকে অস্পষ্ট করে রেখেছিলাম মনের গহীনে কিন্তু মুছতে পারি নি তার এই
হঠাত আগমন আমাকে মুটেও ব্যাতিবস্ত করে নি। আমি একটি বারের জন্যও
পুর্নমিলনের আনন্দে আনন্দিত হয়নি। আবেগ আপ্লুত হয়ে চোখের জলের নদীও বহাই
নি। শুধু অপলক নয়নে চেয়ে থেকেছি সেই মানুষটির দিকে। সেই চপল চঞ্চল দুরন্ত
মানব মূর্তিটি আমার সামনে নিথর হয়ে পরে ছিল। চোখ দুটো তার জ্বল জ্বল
করছিল যেন কত যুগের তৃষ্ণা তার ঐ চোখের মাঝে। এ দৃশ্য দেখার পর আমার পক্ষে
আর সেখানে থাকা সম্ভব হয় নি। আমর ঘুম ও হারিয়ে গেছে সেই সাথে।
৩
হাসানকে আমি চিনি ক্লাস এইট থেকে। বাবার সরকারী চাকরীর হেতু কোন স্কুলেই
বছর তিনেকের বেশি পড়ার সৌভাগ্য হয় নি আমার। তবে অনেক স্কুলের বারান্দায়
নিজের নিরব পায়ের ছাপ ফেলেছি। স্কুল অনেক হলেও বন্ধু আমার ছিল না। ছিল না
বললে ভুল হবে আমি রাখিনি। স্কুলের সাথে সাথে বন্ধু ও ফেলে এসেছি। হাসান দের
স্কুলটায় ক্লাস এইটে ভর্তি হলাম এবং এখান থেকেই মেট্রিক পাশ
করলাম।স্কুলের প্রথম দিন আমার পাশে যে ছেলেটি বসেছিল তার নাম হাসান। নতুন
কারো সাথে পরিচিত হতে আমার অস্বস্থির শেষ থাকে না। বিশেষ করে ছেলেটার চেহরা
যদি অতিমাত্রায় কুতসিত বা সুন্দর হয় তাহলে মুখ দিয়ে কথাই বেরুয় না।
অবশ্য হাসান দুটোর কোনটাই নয়। তবুও তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার কথা বলতে
কষ্ট হচ্ছিল। তবুও আমরা বন্ধু হলাম। দিন কাটতে লাগল। নতুন জায়গা নতুন
স্কুল আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে থাকলাম। বন্ধুর সংখ্যাও বাড়তে থাকল। তবে
হাসান ছিল বিশেষ কেও। আসলে ওর মাঝে যে কি ছিল তা তখন বুঝতাম না। আজ বুঝি।
ওর মাঝে ছিল উচ্ছাস। যে উচ্ছাসের প্রেমেই হয়ত আমার সলিল সমাধী হয়েছিল
কৈশরের প্রথম প্রহরে। একটা বছর দেখতে দেখতে কেটে গেল। আমার মনের লুকিয়ে
রাখা ভালবাসা প্রতি মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়ে হাসান কে জানান দিতে চাইত।
কিন্তু বন্ধুত্বের রঙিন ঘুড়ি ভোকট্টা হবার ভয়ে সেই ইচ্ছা টাকে দমিয়ে
রাখতে হত। কিন্তু বাগানের ফুলের গন্ধ যেমন ঢেকে রাখা যায় না তেমনি আমার
ভালবাসাও বারে বারে ধরা পরতে গিয়েও যেন বেচে যেত। আমার সবচেয়ে কষ্ট হত
যখন হাসান মেয়েদের পেছন ঘুরঘুর করত। সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার ও যখন
টাংকি মারার উদ্দেশ্যে বের হত তখন আমাকে সাথে নিয়ে বের হত। ও জানত আমার
প্রেমিকা নেই। কোন বিশেষ পছন্দের মেয়েও নেই। শুধু জানত না এই আমি তাকে
ভালবাসি। এইটুকু বুঝত অন্য বন্ধুদের চেয়ে তার সাথে আমার ঘনিষ্টতা বেশি। আর
আমি সবসময় ওকে অন্যেদের চেয়ে দূরেই রাখতে চাই। হাসান ভালবাসত জেবা নামের
একটা মেয়েকে। মেয়েটা আহামরি সুন্দরী ছিল কি না জানি না। কারন মেয়েদের
সৌন্দর্যের বিচার করার শক্তি আমার পুরুষপ্রেমী মনের ছিল না। হাসান জেবার
জন্য পাগল থাকলেও জেবার তাতে কোন ভ্রক্ষেছ ছিল না। তাই হাসানের জীবনেও
প্রেম আসে নি। এটা আমার জন্য আশির্বাদ বা অভিশাপ কি ছিল তা আজো বুঝি নি।
৪
মেট্রিক পরীক্ষার আগেই বাবার বদলি হয়ে গেল। পরীক্ষার কারনে আমাকে থেকে
যেতে হল। এই সময়টা আমি ছিলাম হাসান দের বাড়িতে। আমাদের বিছানাও ছিল
একটাই। আমার রাতের ঘুম হারাম হত ওর জেবার জন্য আক্ষেপ দেখে। মাঝে মাঝে কষ্ট
হত। যাকে ভালবাসি সে অন্যকাওকে ভালবাসে। রাগ ও হত। ও এমন একজনকে ভালবাসে
যে কিনা তাকে ভালবাসে না! আমার মাঝে কি এমন অভাব ছিল যে আমায় ভালবাসা যায়
না! ওর প্যান প্যানানিতে একদিন বলেই বসলাম, তুই জেবার মাঝে কি এমন
পেয়েছিস যা আমার মাঝে নেই? আমার কথায় হাসতে হাসতে খুন হওয়ার অবস্থা ওর।
বলল
-তুই একটা ছেলে আর জেবা একটা মেয়ে। এইটুকুই পার্থক্য।
-কেন ছেলেদের কি ভালবাসা যায় না? শরীরটাই কি সব?
ও কিছুক্ষন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি কেন জানি হঠাত করেই বেশামাল
হয়ে গেলাম। ওর ঠুটে ডুবিয়ে দিলাম আমার ঠোট। ও বাঁধা দিতে চেয়েও যেন
বাঁধা দিতে পারল না। মেতে উঠলাম আদিমতায়। ঘর্মাক্ত দেহের শরীর শরীর খেলায়
কলঙ্কিত হল হাসানের বিছানা। পরদিন এ ব্যাপারে ও আমায় কিছু বলে নি। যেন
কিছুই হয় নি। আমার সাথে তার একটু ও দুরত্ব তৈরি হয় নি। পরীক্ষা চলে আসল।
পড়াশোনা আর পরীক্ষার মাঝে কেটে গেল অনেকটা সময়। পরীক্ষা শেষে আমি
তল্পিতল্পা গুছিয়ে নিলাম। ভেবেছিলাম হয়ত ওর ভালবাসা আমার দিকে মোড়
নিয়েছে। এর মূল কারনটা ছিল ও জেবার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলত না। আর জেবার
সাথে লাইন মারতেও যেত না। কিন্তু আমার এই ভাবনার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন করে দিয়ে
আমার বিদায়ের বেলায় অশ্রমালিকা উপহার দিল হাসান। আমাকে বিদায় দেবার
সময় জেবা এল। হাসান আমায় গাড়িতে উঠাবার সময় শুধু বলল "জেবার সাথে আমার
প্রেমটা হয়ে গেছে। তুই একটা গে কিন্তু আমি তোর মত গে না।পারলে অন্য কোথাও
মরদ জুটিয়ে নিস। আমার সামনে পারত পক্ষে আর আসিস না। ছেলে ছেলে সেক্স হলেও
ভালবাসা হয় না।যদি তোর ভালবাসা সত্যি হয়ে থাকে তবে আমাদের দেখা হবে। কোন
একদিন। কথা দিলাম।"
৫
হঠাত করে অন্তু পেছন থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরল। ওর
ছোয়ায় বাস্তবে ফিরে এলাম। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে
চোখের কোনায় জল এসে গেছে বুঝুতেই পারি নি। আমার
চোখের জল অন্তুর কাছে লুকাতে পারলাম না।
-তুমি কাদছ? কি হয়েছে?
-না কিছু না। সূর্যের আলো এসে পড়েছে তো তাই একটু জল
বেরিয়েছে।
-তুমি জানো মিথ্যা বলার সময় তোমার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে
যায়?
-হুম জানি। ঘরে চল। ভাল লাগছে না।
-আচ্ছা চল।
অন্তু ছেলেটা আমাকে কত বুঝে। আসলে ভালবাসাটা এমনই। মুখফুটে বলতে হয় না
চোখের ভাষায় বুঝে নিতে পারে সব। চলার পথে ওর হাত ধরে ভুল করি নি। সেদিন
বাড়ি ফেরার সময় অনেক কেদেছিলাম। অনেক মিস করতাম হাসান কে। মেট্রিকের
রেজাল্ট দিল। ভাল রেজাল্ট করলাম। শুনেছিলাম ওর রেজাল্ট ও খারাপ হয় নি।
জেবার ও না। তারপর আর কোন যোগাযোগ করিনি। ঠিক আগের মত স্কুলের সাথে বন্ধু
ভালবাসা ফেলে চলে এলাম। মনের গভীরে হাসান কে পুশে রাখলাম। পুশে রাখলাম আমার
সমপ্রেম। ইন্টার পাশ করলাম। তারপর ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেলাম। পড়াশেষে
উচ্চশিক্ষার জন্য চলেএলাম নিউইয়র্কে। এখানেই পেলাম অন্তুকে। ধীরে ধীরে ওর
সাথে জড়িয়ে পড়তে থাকলাম। অনেকটা কাছে চলে এলো ও। আমিও বাঁধা দিলাম না।
কি দরকার পুরুনো কে আকড়ে ধরে থাকার? নতুন সকাল হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আমি ও
তাই নতুন ভোরের প্রত্যাশায় অন্তুর হাত ধরলাম। খুব বেশি ভুল করি নি। তাই
হয়ত আজ জীবনের স্মৃতি চারনে চোখের জল নিকোটিনের ধোয়ার মত হাওয়ায়
মিলিয়ে যাওয়ার মতই শুকিয়ে গেছে।
৬
খাবার টেবিলে বসে খাবারের সাথে মনো সংযোগ করতে পারছিলাম না। অন্তু সব
খেয়াল করছে। ও জানে আমি এখন কিছু বলার মত অবস্থায় নেই। তাই হয়ত কোন
প্রশ্ন করছে না। কোনক্রমে খাদ্য গলধকরন করে গায়ে সাদা এপ্রনটা জড়িয়ে চলে
গেলাম হাসপাতালে। হ্যাঁ হাসান সেখানেই আছে। আমার কাছেই ওকে রেফার করা
হয়েছে। কিন্তু অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। আমার সাধ্যের বাইরে চলে গেছে সব।
হাসানের বেডের পাশে বসলাম। ওর চোখদুটো বন্ধ। নিঃস্বাসের গতি কমে আসছে। এই
মুহুর্তে ওর পাশে দাড়িয়ে শান্তনা দেয়ার ভাষা বা ওকে এই অবস্থা থেকে
ফিরিয়ে আনার উপায় কোনটিই আমার জানা নেই। ওকে এই অবস্থায় আর দেখতে
পারছিলাম না তাই উঠে চলে আসছিলাম। হঠাত কেও আমার হাত ধরল। ভেতরটা কেঁপে
উঠল। ঘাড় ঘুড়ালাম। হাসান একটা কাগজ হাতে আমার হাতটা ধরে আছে। কাগজটা
খুললাম। একটা চিঠি।
শুভ্র,
তুই যেমন ভাবিস নি আমাদের দেখা হবে আমিও ভাবিনি। কিন্তু বিধির বিধান। আজ
তুই যাকে দেখছিস সে এক শুন্য রিক্ত ব্যার্থ মানুষ। যে মরিচিকার পেছনে
ছুটেছিলাম তা আমার জীবনে কাটা ছাড়া আর কিছুই দেয় নি। আমি ভুল ভেবেছিলাম।
জেবা আমাকে কখনই ভালবাসে নি। যতদিন ওর প্রয়োজন ছিল শুধুই আমাকে ব্যাবহার
করেছে। আমিও ওর খেলার পুতুল হয়ে নেচেছি। যখন ও আমায় ছেড়ে চলে গেল তখন
তোর কথাই বেশি মনে পড়েছে। তখন বুঝেছি আসলে আমার মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে
রয়েছিস তুই। কিন্তু ততদিনে তোর সাথে যোগাযোগের কোন পথই ছিল না। জেবার শোকে
ধরলাম নেশা। আর উপহার পেলাম ক্যান্সার। ধুকে ধুকে এগিয়ে চললাম মৃত্যুর
দিকে। একটা কষ্ট ছিল তোর সাথে দেখা করতে পারিনি। বিধাতা সেই ব্যাবস্থাও করে
দিলেন। বাবা শেষ চেষ্টা করতে বিদেশ পাঠাতে চাইলেন। ওরা রেফার করল ডাক্তার
শুভ্র, নিউইয়র্ক। বুকটা একটু কেপে উঠেছিল। তাই অনিশ্চয়তা সত্তেও চিঠিটা
লিখে নিলাম। যদি পরে না লিখতে পারি। হয়ত এই আমাকে দেখে তোর কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু তোর ভালবাসা যে সত্যি ছিল। কথা ছিল দেখা হবে। দেখা হল। ভাল থাকিস।
পারলে ক্ষমা করেদিস।
- হাসান
চিঠি পড়ে ওর হাত ধরলাম। খুব ঠান্ডা আর নিথর কোন পাথরে যেন ধরলাম। স্পন্দন
হীন দেহের বন্ধ হওয়া চোখ থেকে শুধু একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেখলাম৷৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন