আই লাভ ইউ স্যার - ভ্যালেন্টাইন

সবে মাত্র আমার এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হলো, রেজাল্ট এর আগের সময়টাকে কাজে লাগানোর কথা ভেবে আমি আমার বড় বোনের সাথে যুব উন্নয়নের ৩ মাস মেয়াদের প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়ে গেলাম !
ক্লাসে এর প্রথম দিন আজ, প্রতিটা ক্লাসে স্যার এসে উনার নিজের নাম এবং পরিচয় দিচ্ছে আর ক্লাসের সবার নাম ও পরিচয় নিচ্ছে ! পরিচয় পর্ব দিয়েই আজকের দিনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে !

ছোট বেলা থেকেই আমার খুব শখ ছিল যদি কোন টিচাররের সাথে আমার প্রেম ভালোবাসা হতো !
কিন্তু স্কুল বা কলেজের কোন টিচার এর সাথে সেভাবে মিশতে পারিনি ,
আজকে যখন এখানে স্যারদের দেখছি কাউকে তেমন ভালো লাগছে না , কারো প্রতিই আমার মন কোন অনুভুতি পাচ্ছে না !
যাইহোক এভাবেই আজকের দিনটা কেটে গেলো , পরের দিন প্রথম ক্লাসের জন্য আমি ক্লাসে বসে আছি, দরজা দিয়ে একজন লোক ক্লাসের ভেতরে ঢুকলো দেখতে ফর্সা, প্রায় ৫.১০ ইঞ্চি মত লম্বা মাঝারি স্বাস্থ্য পড়নে ডীপ নেভিব্লু একটা প্যান্ট আর চিকন স্ট্রাইপের আকাশী শার্ট চোখে চশমা সব কিছু মিলিয়ে অসাধারন সুন্দর।
একদম সামনের বেঞ্চে বসাতে আমি খুব কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি , কিন্তু আমি ভাবছি এই অসাধারন মন কেড়ে নেওয়ার মত সুন্দর পুরুষটা কে?
অমনি উনি আমাদের সবার উদ্দেশে বলে উঠলেন ,
আপনারা সবাই চুপ করেন,শান্ত হোন , আমি আপনাদের পুষ্টি বিষয়ক ক্লাস নেবো ,গবাদি পশুর পুষ্টি সম্পর্কে আমি আপনাদের শিখাবো।
আমার নাম জাকির হোসেন।গতকালকে আমি ক্লাসে আসতে পারিনি হেড অফিসে ছিলাম তাই, এবার আপনাদের সবার নাম ও পরিচয় এক এক করে বলুন।
তার পর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো "তোমার থেকেই শুরু করি" "এই ক্লাসে তুমিই মনে হয় একমাত্র সবার থেকে ছোট তাই তোমাকে তুমি করে বলছি তোমার নাম কী? "
আমি এতক্ষন অবাক হয়ে জাকির স্যারের কথাগুলো শুনছিলাম আর তৃষ্ণার্ত চোখে উনাকে উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ আমি চমকে উঠে
হুম, জ্বী। মানে আমি
আমার নাম গল্প। বাড়ি নরসিংদী পলাশ। তারপর একে একে সবার পরিচয় পর্ব চললো।
তারপর সারা ক্লাস জুড়ে সারাদিন জুড়ে আমি শুধু জাকির স্যারকে ভাবতে থাকলাম। উনার কথা উনার কন্ঠ আমার মনের ভেতর নাড়া দিয়ে গেলো ! এক মুহূর্তেই আমি স্যার এর প্রেমে পরে গেলাম ! আমি সবসময় স্যার এর কোমড়টা দেখতাম
কিভাবে উনি সার্টটা ইন করে।
পেন্টের বেল্ট টা কোথায় স্থাপন করে ! উনার হাতের লোমগুলো হাতের আঙ্গুল নখগুলো এ সব খুব দেখতাম ।
আমি আমার ভালবাসার তৃষ্ণার্ত চোখে উনার সব খেয়াল করতাম ! আমি স্যার এর প্রতিটা ক্লাসে এক পলকে স্যার এর দিকে তাকিয়ে থাকতাম , স্যারও ব্যাপারটা খেয়াল করতো ! এভাবে ২ মাস চলে গেলো , আমি ওখানকার হোস্টেলেই থাকতাম আর আমার রুমের সামনেই ছিলো স্যারদের অফিস রুম।
এর মধ্যে আমি আমার বাড়িতে এসে দুইদিন ছিলাম, আর তখন আমি স্যারকে নিয়ে একটা কবিতা লিখি আর এই কবিতাটা আমি আমার নিজের হাতে না লিখে আমার এক বান্ধবীকে দিয়ে কাগজে লিখিয়ে আমার সাথে করে হোস্টেলে নিয়ে আসি।

তার পরের দিন খুব সকালে আমি ঐ কবিতাটি স্যাএএর অফিস রুমের দরজার নিচ দিয়ে স্যার এর টেবিলের পাশে ধাক্কা দিয়ে রেখে দিই।
একটু পরেই স্যার তার অফিসে আসলো ওনার টেবিলের যা কাজ ছিল তা শেষ করে ক্লাস রুমে আমাদের ক্লাস নিতে চলে আসলো।
অন্য দিনের মত স্বাভাবিক ভাবেই ক্লাস নিলো, স্যার এর মাঝে কোন অস্বাভাবিকতা দেখিনি।
আমি খুব অবাক হলাম এমন একটা প্রেমের কবিতা দেখেও স্যার কাউকেই খুঁজলোনা, কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করলো না ? উনিতো দেখে যে অন্য সবার থেকে আমি খুব আলাদা ভাবে প্রতিটা ক্লাসে উনার দিকে কিভাবে তাকিয়ে থাকি আর উনার অফিস রুমের সামনের রুমেই আমি থাকি , অন্তত আমাকে ত উনি একবারো জিজ্ঞেস করতে পারতো !
যাহোক এভাবে চলে গেলো আরো ২০ দিন এর মধ্যে আমাদের পরীক্ষা হয়ে গেলো , যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষনের ৩ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষন শেষ হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি আছে।
এখন আমাদের মৌখিক পরীক্ষা হবে তারপর বিদায় অনুষ্ঠান তার পর সার্টিফিকেট দিয়ে প্রশিক্ষন শেষ।
আমার মৌখিক পরিক্ষার ডাক আসলো আমি স্যারের রুমে গেলাম , স্যার আমাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেশ করলো,
প্রশ্ন শেষ হওয়ার পর আমি স্যারকে বললাম স্যার আপনাকে আমি কিছু বলতে চাই, স্যার বললো ওকে বল।

আমি তখন খুব সাহসি হয়ে গেলাম আর ভাবলাম যাকে ভালবাসি তার জন্য এটুকু রিস্ক আমি নিতেই পারি, যা হবার হবে। এতো ভয় পেলে হবে না, আমার যা বলার আমি বলে দিবো, পরে যা হবার হোক, আমি ভয় পাই না আর আমি
সৃষ্টিগত ভাবেই একটু বেশি সাহসি আর বেপরোয়া।
আমি স্যার কে বললাম , স্যার আপনি কি আপনার টেবিলের নিচে কোন কাগজ পেয়েছিলেন ?
স্যার একটু শীতল চখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো , এটা কে দিয়েছে তুমি জান ? তুমি দেখেছ?
আমি বললাম এটা আমি আপনাকে দিয়েছি আপনাকে নিয়ে আমি ঐ কবিতাটা লিখেছিলাম স্যার ,
স্যার বললো , তুমি এখন যাও , তারপর কে আছেন আসেন।
স্যার আমার পরের জনের মৌখিক পরীক্ষা নিতে লাগলো ,
আমি খুব মন খারাপ করে চলে এলাম, আমার খুব কান্না পাচ্ছিল।
আমি মনের দুঃখে সারা দিন রুমে শুয়ে রইলাম।

বিকেল তখন ৪ টা , আমার এক রুমমেট এসে আমাকে বললো। গল্প,!
তুমাকে জাকির স্যার ডাকছে উনার অফিস রুমে যেতে বলেছে ,
আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠলো , আমি স্যার এর রুমে গেলাম,
স্যার তার চেয়ার এ বসে আছে , আমাকে দেখে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বললো ,
বসো আর এবার বলো আমাকে নিয়ে এমন কবিতা তুমি কেন লিখেছিলে ?
আর ঐ কবিতাটা দেখেই আমার মন বলছিলো এটা তুমি করতে পারো ,
তাই আমি তোমার পরীক্ষার খাতার হাতের লিখার সাথে এই কবিতার লিখাটা মিলিয়ে দেখেছিলাম,
কিন্তু কোন মিল পাইনি তাই পরে ভেবেছিলাম হয়তু তুমি লিখোনি !
এতখনে আমি সস্তি পেলাম আর একটু হেসে বললাম আমি যানতাম আপনি এমনটা করতে পারেন তাইতো আমি এই কবিতাটা আমার এক বান্ধুবির হাতে লিখিয়ে নিয়ে এসেছিলাম আমার বাড়ি থেকে ,
স্যার আমার সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবে এই কবিতা লিখা আর স্যার এর প্রতি আমার এত্ত ভাললাগা ভালোবাসা এসব নিয়ে কথা বললো ,
এভাবে স্যার এর সাথে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো ,
স্যার আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে একটু দূরে একটা ফ্ল্যাটে থাকতো !
স্যার বাসায় চলে গেলো আর আমি আমার রুমে !
পরদিন সকালে জাকির স্যার এর ক্লাসে আমি আগের মতই স্যার এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি , স্যার মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকায় আবার চট করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় !

সেদিন থেকে বাকি দিনগুলো আমার খুব আনন্দে কাটলো !
প্রশিক্ষনের বাকি ১০ টা দিন জাকির স্যার এর সাথে আমার বেশ ভালো ভাবে কেটেগেলো !
আর জাকির স্যার এর একটু বেশি আন্তরিকতা পূর্ণ সম্পর্কের উছিলায় ধীরে ধীরে অন্য স্যার দের সাথেও আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো !
প্রশিক্ষণ এর শেষের দিন আমি আমার বাড়ি থেকে সব স্যার মেডামদের জন্য নরসিংদীর ঐতিহ্য বাহি ফুল পিঠা নিয়ে আসি, সবাই খুব মজা করে খেল আর আমি সব স্যার মেডামদের খুব আদরের একজন হয়ে গেলাম !
আমাদের বিদায় এর দিন জাকির স্যার বললো
-গল্প তুমাকে খুব মিছ করবো, তুমি কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের এখানে বেরাতে আসবা !
-জ্বী স্যার আমি তো অবশ্যই আসবো আর সাথে আপনাকে নিয়ে লিখা নতুন কবিতাও নিয়ে আসবো
- এভাবে আমাকে নিয়ে কবিতা লিখলেতো আমি তোমার প্রেমে পরে যাবো
আমি একটু লজ্জা পেয়ে । স্যার কে বললাম
- তাহলে আর কবিতা লিখবো না
- না না আমি তা বলিনি, তুমি লিখবা ! আর আমার ভালই লাগে তোমার লিখা কবিতা

( 2 )

আমি প্রশিক্ষণ শেষ করে আমার বাড়ি চলে আসি
তার পর মাঝে মাঝে আমি স্যার দের কাছে যাই,
আমাকে সব স্যার রা মেডাম রা খুব আদর করতো
একমাস পরেই খবর শুনলাম জাকির স্যার আর ফিরুজ স্যার এখান থেকে বদলী হয়ে চলে গেছে ! জাকির স্যার বদলী হয়েছে কমিল্লা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আর ফিরুজ স্যার ঢাকা হেড অফিছে !
আমি ফিরুজ স্যার কে নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ দেখালাম না !

সেটা ২০০১ সাল তাই তখন জাকির স্যার এর বা আমার কারোরই মোবাইল ফোন ছিল না
আমি আমিরুল স্যার এর কাছ থেকে জাকির স্যার এর অফিছের ঠিকানা নিলাম
সাথে আমিরুল স্যার কে বললাম স্যার আপনার বাড়ির পার্মানেন্ট ঠিকানাটাও আমাকে দিন
কারন এতে করে আপনারা যেখানেই হারিয়ে যাননা কেন আমি আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আপনাদের কে খুজে বেরকরতে পারবো ।
আমিরুল স্যার তার বাড়ির ঠিকানা আমাকে লিখে দিলো
কৃষিবিদ আমিরুল ইসলাম
সিনিয়র ইনসট্রাক্টর ( পশুপালন )
বাসা নং ৪৪৩
রোড নং ৪
দরজী পাড়া
হারগাছ পৌরসভা
রংপুর
তারপর আমি একে একে সালাউদ্দিন স্যার রহিমা মেডাম আমিরা আপা সবার ঠিকানা নিলাম !

কিন্তু আমিরুল স্যার জাকির স্যার এর শুধু অফিসের ঠিকানা টা দিতে পারলো ।
আমি বাড়িতে এসে জাকির স্যার কে ঐ ঠিকানায় একটা চিঠি লিখি ।

১৫ দিন চলে গেলো , ১ মাস হয়ে গেলো কিন্তু কোন উত্তর এলো না !
আমি খুব হতাস হলাম !
আমি আরো একটা চিঠি লিখি স্যার কে !
আবার স্যার এর চিঠির অপেক্ষা ! কিন্তু না এবারো প্রায় ২ সপ্তাহ চলে গেলো কোন উত্তর আসলো না ! আমি স্যার এর সাথে আর যোগাযোগ করব না ভেবে নিলাম !
ঠিক সেদিন ই আমার চাচাতো ভাই আমাকে ডেকে বললো , গল্প তোর নামে একটা চিঠি এসেছে পিওন আমার কাছে দিয়ে গেছে !
আমি তখনই ভাবলাম এটা নিশ্চয় জাকির স্যার এর চিঠি
স্যার খুব ছোটো করে একটা চিঠি লিখেছে আমাকে

কেমন আছো ? আমি ভেবেছিলাম তুমি ছেলে মানুষ বয়স কম তাই হয়তো আবেগের বসে পাগলামো করছ !
তোমার চিঠির উত্তর দেবো না ভেবেছিলাম, আর এভাবেই হয়তো একসময় তোমার আবেগ কেটে যাবে ! কিন্তু তোমার ২য় চিঠি টা আমার মনকে নারা দিলো ! তোমাকে আর না লিখে থাকতে পারলাম না ! একজন পুরুষ পুরুষকে এভাবে এতো ভালবাসতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি !
তোমার ভালোবাসা আমাকে তোমার চিঠির উত্তর লিখতে বাধ্য করেছে !
তুমি আমাকে চিঠি লিখো কিন্তু আমি হয়তু তোমার ২ টা চিঠি মিলিয়ে ১ টা উত্তর দিবো !
বুঝোই তো চাকরি করি তাই খুব ব্যস্ত থাকি !
আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে !
ইতি
তোমার জাকির স্যার

এটা ছিলো আমার জীবনে পাওয়া প্রথম চিঠি , এর আগে কখনো আমার নামে আমাকে কেউ চিঠি লিখেনি !
এই চিঠিটা আমি প্রায় প্রতি দিন একবার করে পড়তাম !
এভাবে ১ বছরের উপরে আমি আর স্যার চিঠি দেয়া নেয়া করি, কিন্তু আমি কখনো স্যার কে আমার মনের সেই আসল কথা টা বলতে পারি নি যে , I Love You Sir

কিছু দিন ধরে আর স্যার এর চিঠি পাচ্ছি না
এভাবে ১ মাস ২ মাস করে ৫ মাস চলে গেলো , আর স্যার এর কোন খবর পাই না
আমি আবার গেলাম আমিরুল স্যার এর কাছে কিন্তু ওখানে আর আমার পরিচিত কোন স্যার নেই !
আমি আর জাকির স্যার এর কোন খব্র পেলাম না !

এখন ২০১২ সাল প্রায় ১০ বছর হয়ে গেলো !
আমি ফারমাসি তে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে একমি কম্পানিতে জব করছি !
" একমি " কম্পানির ফ্যাক্টরি টা সাভারে !
আর ওখানেই আমার কাজ !
এই ১০ বছরে একবারের জন্যও আমি জাকির স্যার কে ভুলিনি !
প্রতিদিন তার কথা তার কন্ঠ আমার স্মৃতিতে বাজতো !
আমি একদিন অফিস থেকে আমার বাসাতে আসার সময় বাস এর মধ্যে হঠাৎ ফিরুজ স্যার কে পেয়ে যাই !
আমি স্যার কে দেখে চিনে ফেলি কিন্তু স্যার আমাকে চিনতে পারলো না !
আমি আমার পরিচয় দেয়ার পর স্যার আমাকে চিনতে পারল আর মহা খুশি!
২/১ টা কথা বিনিময়ের পর আমি জাকির স্যার এর কথা জিজ্ঞেস করলাম
ফিরুজ স্যার বলল ওনার কোন খবরতো যানি না ,
আমি বললাম স্যার আমি যানতাম জাকির স্যার এর বাড়ি ঢাকা তে , কিন্তু কোথায় সেটা নিশ্চিত যানা হয়নি
আপনি কি যানেন জাকির স্যার এর বাড়ি কোথায় ?
ফিরুজ স্যার বলল , হে জাকির স্যার এর বাড়ির মোটামোটি একটা ঠিকানা আমি যানি
সাভার ডেইরি ফার্ম এর পাশে , গেরুয়া মসজিদ এর পাশেই ওনাদের বাড়ি !
ওনার বাবার নাম মুজাফফর হোসেন !
ওনার বাবা সাভার ডেইরি ফার্ম এ ই চাকরি করতেন ।
আমি যেন হাতে আকাশ নাগাল পেলাম !

( ৩ )

সেদিন রাতে আর আমার ঘুম হল না , সারা রাত এপাশ ওপাশ করে কাটালাম !
পরদিন অফিছে গিয়ে ই ছুটি নিলাম !
আমি চলে গেলাম জাকির স্যার এর বাড়ির খুজে !
খুব সহজেই বাড়িটা পেয়ে গেলাম !
বাড়িতে গিয়ে দেখলাম , একটা ৫ বছরের ছেলে বাড়ির ঊঠানে কান্না করছে !
আমি মনে মনে ভাবলাম এটা হয়তো স্যার এর ছেলে !কিন্তু ছেলে টা খুব নোংরা !
ভাবলাম স্যার এর ছেলে এমন হতে পারে না, মনে হয় অন্য কারো !
একটা মহিলা আসলো
-কি কারে চান ?
-জ্বি এটা কি জাকির স্যার এর বাড়ি ?
-হ এটা জাকির ভাই এর বাড়ি
- অহ তো বাসায় কেউ আছে ?
- না বাসায় আর কেউ নাই ভাইয়ে অফিছে গেছে, আইতে আইতে হাইঞ্জা ( সন্ধ্যা ) হইবো !
- উনার বউ বা অন্য কেউ নাই বাসায় ?
- তাইনের বউ থাকবো কইত্থেইক্কা ! তাইনের পইলা বউ তো মইরা গেছে এই পোলা হউনের ১ বছর পরেই !
আবার ২য় বিয়া করছিলো ঐ বেটি খালি জাকির ভাই এর পোলারে অযত্ন অবহেলা করে
কয়েকবারত মাইরা লাওউনের চেষ্টা অ করছিলো !
হেইল্লাইগা ঐ বউ রে তালাক দিয়া দিছে !
এহন তাইনে এল্লা ঐ থাহে , আর দিনের বেলা তাইনের পোলারে রাহনের লাইগা আমারে রাখছে !
- তো স্যার এর বাবা মা বা কোন ভাই বোন কেউ নাই ?
- তাইনের বাবা মা তো মইরা গেছে অনেক আগে ঐ , আর একটা বইন আছিল হেয় ত বিয়ার পরে জামাই লইয়া লন্ডন থাহে !
- আচ্ছা , আপনার কাছে স্যার এর মোবাইল নাম্বার আছে ? আমাকে দিতে পারবেন ?
-হ আমার মোবাইলে তাইনের নাম্বার আছে , দেহেন জাকির ভাই নাম লেহা !
আমি স্যার এর নাম্বার টা নিয়ে আমার মোবাইলে ছেভ করি !
স্যার এর ছেলে টাকে দেখে আমার চখে পানি চলে এলো !
এতো ভালো মানুষের ছেলে এভাবে কাজের বুয়ার কাছে অবহেলায় পরে আছে ?
আল্লাহ একি জীবন তুমি দিলে আমার ভালবাসার মানুষ টাকে ! এত কস্ট এতো সমস্যা তার জীবনেই কেন ?
আমি স্যার এর ছেলে টা কে আদর করে কোলে তুলে নিলাম ,
ছেলে টা কি নিষ্পাপ , নির্মল মায়া ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
যেন তার নিরবতা আমাকে বলছে , আমাকে ছেরে যেও না, আমাকে আদর করার কেউ নেই , আমি খুব অবহেলিত !
আমি ছেলে টাকে আমার বুকের মাঝে জরিয়ে ধরি , অনেক গুলো চুমু খাই ,
তার প্রতি আমার মায়ায় ভালবাসায় আমার মন চাইছিল তাকে আমার বুকের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলি !
আমি জিজ্ঞেস করলাম , বাবা কিছু খাবে ? চল তোমাকে কিছু কিনে দেই, যাবে আমার সাথে ?
ছেলেটা হ্যাঁ বোধক মাথা নারালো ! সে আমার সাথে যাবে কিছু খাবে ,
কিন্তু বুয়া মহিলাটা আমাকে বাধা দিলো
_ না না আপনেরে আমি চিনি না আপনার কোন খাওন অরে আমি খাইতে দিতে পারি না ,
অরে লইয়া বায়রে যাইতে অ দিমু না !
আমি বললাম , এখন সময় বেলা ১২ টা , ওকে কি খাইয়েছেন ?
- কয়েকবার চেরেস্টা করছিলাম , এই পোলায় খায়না , সারা দিন খালি খেলা খেলা নিয়া পইরা থাহে, আর খালি কান্দে পেনা পেনি করে, বড় বজ্জাত পোলা আমি কি করুম !
_ কি বলেন বেলা এখন ১২ টা বাযে এখন খাবার খাওন নাই ?
- অর বাবায় অরে সহালে দুধ খাওয়াইয়া গেছে তো ,
-স্যার এর অফিছ কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত ?
- সহাল ৮ টা থেইক্কা বিহাল ৪ টা পর্যন্তক
আমি বুঝে ফেললাম , এই মহিলার সাথে কথা বলে লাভ নাই, আর এই মহিলা ছেলেটার সঠিক যত্ন ও করে না !
আমি সাথে সাথে স্যার কে ফোন করলাম !
-হ্যালো , স্যার !
-হ্যালো জ্বি , কে বলছেন ?
- স্যার আমি গল্প
- গল্প ? কোন গল্প ? কে আপনি ? আমি ঠিক চিনতে পারছি না !
- স্যার আমি গল্প যে আপনাকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলো , সেই যুবউন্নয়ন এর প্রশিক্ষণ এ !
নরসিংদী , আজিজ বোর্ডিং , মনে পরেছে ?
- অহ মাই গড ! তুমি ? তুমি সেই গল্প ? আমি স্বপ্ন দেখছিনা তো ?
তুমি আমার নাম্বার পেলে কিকরে
- স্যার ! আমি এখন আপনার বাসায় দাঁড়ানো , যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনি এখন ই বাসায় চলে আসুন ,
- ওকে ওকে , অবশ্যই ! তুমি থাকো আমি এখন ই আসছি !
বুয়া মহিলা টা তারা তারি , স্যার এর ছেলে টাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে বাথরুমের দিকে রউনা দিলো !
আমি বললাম, একদম ওকে ধরবেন না, স্যার এসে দেখুক আপনি তাকে সারা দিন কিভাবে রাখেন কি করেন !
মহিলা আমার কোন কথা মানলো না , সে স্যার এর ছেলে কে নিয়ে গোসল করিয়ে খাবার খাওয়াতে লাগলো !
এরি মধ্যে স্যার চলে এলো
আমি স্যার কে দেখে অবাক চখে তাকিয়ে রইলাম
এই আমার সেই ভালবাসার মানুষটা ? কেমন বদলে গেছে, চখের নিচে কিছুটা ফুলে গেছে, হালকা একটু ভুরিও হয়ে গেছে , মাথার চুল ও কিছুটা কমে গেছে , কিন্তু মুখের হাসিটা আগের মতই মিষ্টি আর
উজ্জ্বল অমলিন !
আগের থেকে একটু মোটা হয়েগেছে
আর গায়ের রং টা আগের মতই ফর্সা আর উজ্জ্বল চকচকে আছে !
সবকিছু মিলিয়ে আমার আগের সেই হেন্ডসাম স্যার টা যেন আগের মতই হেন্ডসাম আসছে শুধু যা একটু বয়স বেরেছে !
এখন স্যার এর বয়স ৪৫ বছরের মত হবে হয়তো !

আনন্দে নাকি কস্টে আমি যানি না , স্যার কে দেখে আমার কান্না চলে এলো ,
আমি স্যার কে জড়িয়ে ধরলাম , এই প্রথম আমি স্যার এর শরীরের এত কাছে গেলাম !
স্যার ও আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো ,
স্যার বলল , গল্প তুমার সেই আবেগ ছেলে মানুষী এখনো আগের মতই আছে দেখছি!
- স্যার এসব আমার আবেগ আর ছেলে মানুষী না,
- তাহলে ?
- এসব আমার কি সেটা যদি বুঝতেন তাহলে ........... !
- তাহলে কি ?
- কিছু না !
- কিছুনা ? আচ্ছা বাদ দাও , এখন চল ভিতরে চল ভিতরে বসে কথা বলি !
আমি আর স্যার ভেতরে গেলাম, আমি বুয়ার কাছ থেকে স্যার এর ছেলে টাকে আমার কোলে নিলাম,
স্যার বলল , বুয়া ওকে নিয়ে একটু বাইরে যাও, আমরা কথা বলব খাবো ,
আমি বললাম না স্যার সে আমার কুলেই থাকবে, আচ্ছা আমাদের এই মিষ্টি বাবুটার নাম কি রেখেছেন ?
স্যার হেসে ফেললো ! কি নির্মল হাসি আমার প্রিয় মানুষটার মুখে !
হাসতে হাসতে বলল , " মহিয়ান "
নামটা শুনে আমি ফ্রিজড হয়ে গেলাম, স্তম্ভিত হয়ে বললাম " কি ?
স্যার বলল কেন তুমি রাগ করেছ নাকি ?
তোমার পারমিশন ছাড়া তোমার নাম রেখেছি বলে ?
আমার কাগজে পত্রে অফিছিয়াল নাম হল" মোহাম্মদ মহিয়ান "
আমি কি বলবো কি করব কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না
আমার মনে হচ্ছে আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো !
স্যার আপনি আমার নামে ওর নাম রাখলেন কেন ?
তোমাকে আমার খুব ভালোলাগতো আর আমি একটা ব্যাপার নিশ্চিত ছিলাম !
যে এই পৃথিবীতে আমার মা বাবার পর তুমি হলে সেই ৩য় মানুষ যে আমাকে ভালোবাসে !
আমি তোমাকে ঠিক মত ই বুঝতাম কিন্তু আমাদের মধ্যে ছাত্র আর শিক্ষকের সম্পর্ক
তাই সামাজিকতার কারনে সম্মানের কারনে , তোমাকে কিছুই বুঝতে দেয় নি !
এর মধ্যে আমাদের কথা শুনতে শুনতে আমার ছোটো মহিয়ান ঘুমিয়ে পড়লো !
ওকে শুইয়ে দিয়ে আমি স্যার কে
বললাম , আপনার প্রথম বউ মারা গেলো কিভাবে ?
স্যার বলল, মহিয়ান , জন্মের বছর খানেক পর আমার বউ জেধ ধরে আমার বুড়া বাবার সাথে সে আর থাকবে না, এসব নিয়ে ঝগড়া করে মহিয়ান কে আমাদের বাসায় রেখে
বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছিলো !
তখন ঢাকাতে হরতাল চলছিল আর গারিতে আগুন লেগে সে মারা যায় !
তার পর ২য় বিয়ে করার পর
সেই মেয়েও চাইতো আমি মহিয়ান কে বুয়া দিয়ে রাখাই , সে মহিয়ান এর দায়িত্ব নিতে চায়না !
মহিয়ান এর অসুখ হলে সে ওষুধ না খাইয়ে ই বলতো
খাইয়েছে
এভাবে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম
আমার ২য় বউ মহিয়ান এর জন্য বিপদজনক
তাই তার সাথে ডিভোর্স নিয়ে নেই আর সিদ্ধান্ত নিলাম
আমার ছেলের জন্য আমি আর বিয়ে করব না !
একা ই কাটিয়ে দিবো জীবনটা !
-আচ্ছা তো , আপনি আমাকে চিঠির উত্তর দেওয়া বন্ধ করেছিলেন কেন ?
- আমি কুমিল্লা থেকে চাকরি ছেরে সাভার ডেইরী ফার্ম এ চাকরি নেই তাই ওখান থেকে চলে আসি আর তোমার ঠিকানাও আমার মোখস্ত ছিল না , তাই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছিলো আমাদের !
তুমি বিয়ে করেছো ?
- এই না বললেন আপনি আমাকে বুঝতেন তাহলে আবার এই প্রশ্ন করলেন কেন ?
- বুঝতাম কিন্তু তারপরেও অনেকেই তো বিয়ে করে !
- আচ্ছা আমরা এমন লোকচুরি করে কথা না বলে খোলা খুলি কথা বলতে পারি না ?
একটু লাজুক হাসি দিয়ে স্যার বলল , হ্যাঁ বলতে পারি, তুমিও তো এখনো সেই কথা টা আমাকে বলোনি ,
তোমরা এযুগের ছেলে আমরা বুড়ো হয়ে গেছি তাই সাহসটা তোমার ই আগে দেখানো উচিত !
- ঠিক আছে সাহস টা যদি আমি দেখাই তাহলে আজকে থেকে সব আমার সিদ্ধান্তে চলবে রাজি আছেন ?
-জ্বি জনাব ছাত্র মশাই আমি রাজী !
আমি বললাম , ১, আমি এখন থেকে এই বাসায় ই থাকবো ,
২। মহিয়ান কে এখন থেকে আমি দেখাশোনা করব আর আমি আমার গ্রাম থেকে একজন বুয়া আনবো, এই বুয়া মহিয়ানকে না খাইয়ে রাখে, নোংরা ভাবে রাখে, তাই মহিয়ান এর সব দায়িত্ব আমার
স্যার বলল , কিন্তু তোমার অফিছ ?
- সেটা আমি আমার এলাকার বুয়া আর আপনি তিনজন মিলে সব সামলে নিবো !
আমার সিফটিং ডিউটি তাই আমি এখন থেকে সবসময় দুপুর ২ টা থেকে রাত ১০ টা এই শিডিউল এর ডিউটি বেছে নিবো সবসময়ের জন্য আর আপনার ডিউটি সকাল আটটা থেকে বিকেল ৪ টা তাই আমি দুপুর ২ টায় অফিছে যাওয়ার পর শুধু ২ ঘণ্টা মানে ৪ টা পর্যন্ত মহিয়ান বুয়ার কাছে থাকবে !
তাছারা আমার কম্পানি সপ্তাহে ২ দিন সাপ্তাহিক বন্ধ দেয় আর আপনার তো সরকারি চাকরি তাই আপনারও সপ্তাহে ২ দিন বন্ধ তাই সপ্তাহের ২ দিন আমরা খুব আনন্দে কাটাবো !
স্যার বলল সব ই তো মানলাম কিন্তু এসবের আগে তো তোমাকে সাহস করে সেই অধিকারের কথা টা বলতে হবে ,
আমি বললাম কি সেই কথা টা ?
স্যার বলল সেটা তুমিই খুব ভালো করে যানো !
তুমি এখনো আমাকে কি সেই পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কথা টা বলনি !
আমরা কথা বলতে বলতে দুপুর ২ টা বেজে গেলো, বুয়া ও চলে গেছে তার বাড়িতে,
ছোট মহিয়ান ঘুমাচ্ছে ! আমি আর স্যার ২ জন খাটের উপরে বসে কথা বলছিলাম, আমিও বরাবরই একটু বেপরোয়া আর সাহসী তাই আমি স্যার এর খুব কাছে একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম
" I Love You Sir "
স্যার আমার দিকে খুব আবেগ আর কামুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আমার ঠুটে চুমু খেলো
আমার মনে হচ্ছিল আসলেই এই পৃথিবীতেই তো স্বর্গ আছে আমি আমার স্বর্গ পেয়ে গেছি !
আমাকে জড়িয়ে ধরে স্যার শোয়ে পড়লো !
আমি বলে উঠলাম এই ,এই আমাদের ছেলে জেগে গেলো !
স্যার পাশে ফিরে দেখলো ছোট মহিয়ান শান্তিতে ঘুমাচ্ছে , স্যার বলে উঠলো তবে রে দুষ্ট ..... ... উম.... হম..... ।। —

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?

আমাদেরও কিছু গল্প আছে। শোনার মত মানসিকতা কি আছে তোমার?